বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস কে সুর চৌধুরী জানিয়েছেন, সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজারের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে সময়সীমা কতোদিন বাড়ানে হবেÑ পুঁজিবাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহি পরিচালক এস কে সুর চৌধুরী জানান।
তিনি বলেন, ‘আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট এর ঋণ সমন্বয়ের সময়সীমা রয়েছে। তবে বাজারের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক অবস্থা বুঝে এ সময়সীমা বৃদ্ধি করবে।’
বৃহস্পতিবার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সমন্বয় কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এস কে সুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চায় পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক আইনে বেশকিছু সংশোধনী এনেছে। ইতিমধ্যে আইনের সংশোধনীগুলো অর্থমন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে।
তিনি জানান, এর আগে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬ এর ২ ধারা বিষয়ে জনমত যাচাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। এ আইনে বলা হয়েছিল ব্যাংকের মোট দায়ের ১০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে। তবে সংশোধনীতে ব্যাংকের মূলধনের উপর ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে এসকে সুর বলেন, ‘এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হবে কি-না তা আমাদের বিষয় না। এবং বাস্তবায়ন হলেও তা কার্যকর করতে কতদিন সময় লাগবে তা আমাদের জানা নেই।’
অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে এস কে সুর চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর নেওয়া একক গ্রাহক সীমার (সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট) অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয়ের সময়সীমা আরও বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকি হ্রাসের প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে গুরুত্ব দিতে হয়।
ফলে অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয়ের বিষয়টি একেবারে বাতিল করে দেয়ার সুযোগ নেই। তবে সমন্বয়ের ফলে শেয়ারবাজারে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে বিষয়ে বাংলাদেশ সতর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, ২৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকর সাবসিডিয়ারি কোম্পানি শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় জড়িত। এর অনেকগুলোই ব্যাংকের কাছ থেকে নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে। এর আগে অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয়ের জন্য গত জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সময়সীমা আরও বাড়ানো হবে।
সময়সীমা বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রসঙ্গে এস কে সুর চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের মাধ্যমে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া আছে। ওই সময়সীমা শেষ হতে এখনও অনেক বাকি। ফলে এখনই নতুন করে সময় বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে পুঁজিবাজারের স্বার্থে সময় বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। যথাসময়ে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহি পরিচালক বলেন, আইন সংশোধনের জন্য সবেমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তাবটি ওয়েবসাইটে দিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬(২) ধারা সংশোধন করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দায়ের (আমানতের) ১০ শতাংশের পরিবর্তে মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে বলে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এটি করা হয়েছে। তবে বিষয়টি বর্তমানে একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের পর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় সংসদে এটি উত্থাপন করা হবে। শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো পাস হবে কিনাÑ এটাও নিশ্চিত নয়। সব প্রক্রিয়া শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে কমপক্ষে দু’ বছর লেগে যেতে পারে। এর ফলে এখনই পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়ছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে না।
যে কোনো পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান।