শেয়ারবাজার :::: দেশের পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জিত মুনাফা পুনরায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাধ্য করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)।
এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কৃষি খাত, মেয়াদি শিল্প, চলতি মূলধন ঋণসহ শিল্প খাতের সব ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ১৩ শতাংশ নির্ধারণের দাবি করেছে।
গতকাল রোববার ‘ব্যাংকের সুদ, তারল্য-সংকট এবং পুঁজিবাজার পরিস্থিতি’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে এসব দাবি জানান হয়।
রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত সম্মেলনে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইর সভাপতি এ কে আজাদ। এ সময় এফবিসিসিআইর প্রথম সহসভাপতি মো. জসিমউদ্দিন, সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, পরিচালক গোলাম মোস্তফা তালুকদার, শামসুল হক, নজিবুর রহমান, ওয়ায়দুর রহমান, আবুল আলম চৌধুরী, মো. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ কে আজাদ অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য-সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাংকের সুদ বাড়ছে, যা বাণিজ্য ও বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ব্যাংকের তারল্য-সংকট কাটাতে নগদ জমার হার (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার হার (এসএলআর) আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করেন তিনি।
এ কে আজাদ বলেন, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১০ সালে পুঁজিবাজার থেকে আনুমানিক আট হাজার কোটি মুনাফা অর্জন করে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার নিচেই রয়েছে। কিন্তু তারা তারল্য সংকটের কারণে বাজারে বিনিয়োগ করতে পারছে না।
শেয়ারের দাম অনেক কমে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জিত মুনাফা পুঁজিবাজারে পুনরায় দ্রুত বিনিয়োগ করার তাগিদ দেন এ কে আজাদ। এ জন্য সিআরআর ও এসএলআর কমিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেন তিনি।
এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে যখন শেয়ারের চাহিদা বেড়েছিল, তখন শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে সূচক অনেক বেড়ে যায় এবং বেশির ভাগ শেয়ারই অতিমূল্যায়িত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
একে আজাদ আরও বলেন, গত বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সীমার মধ্যে বিনিয়োগ করার জন্য সতর্ক করে। কিন্তু সূচক যখন সাড়ে ছয় হাজার পয়েন্ট ছিল, তখন সতর্ক করা হলে বাজার এতটা অতিমূল্যায়িত হতো না। কিন্তু ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোকে শেয়ার বিক্রিতে বাধ্য করায় ব্যাংকগুলো প্রচুর লাভ করলেও পুঁজিবাজারে ধস নামে। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এফবিসিসিআইর সভাপতি পুঁজিবাজারের ভিত শক্তিশালী করতে সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনার তাগিদ দেন।
সুদের বিষয়ে এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, চলতি বছরের ৯ মার্চ ব্যাংক-ঋণের ওপর আরোপিত ১৩ শতাংশ সর্বোচ্চ সুদের হারের সীমা প্রত্যাহার করায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। একদিকে সুদের হার বেড়েছে, অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ধরনা দিয়েও ঋণ পাচ্ছেন না। কাজেই সুদের হার সহনীয় করতে হবে।
একই সঙ্গে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারকে একক মুদ্রা হিসেবে বিবেচনা না করে মুদ্রার বিনিময় হার বহুমুখীকরণ করার সুপারিশ করেন এ কে আজাদ। এতে অন্যান্য মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানো হলে ডলারের দাম বাড়বে না এবং সংকটও তৈরি হবে না।