কেউ যদি কবিতা লিখতে ব্যর্থ হয়, তবে তার খেসারত তাকে দিতে হয় সারা জীবন খ্যাতিহীনভাবে বেঁচে থেকে। কেউ ব্যবসায় ব্যর্থ হলে তার খেসারত দিতে হয় দেউলিয়া বা কপর্দকশূন্য হয়ে। কিন্তু কেউ যদি গাড়ি চালাতে গিয়ে মুহূর্তের ভুলে সামান্য এদিক-ওদিক করে ফেলে, তবে তার ক্ষতিপূরণ হয় খুবই নির্মম, হয় অন্য কারও জীবন পিষে মেরে, নয়তো নিজের জীবন ধ্বংস করে। এই চালক যদি বাসের বা ট্রাকের হয়, তবে কেবল নিজের নয়, এক মুহূর্তে সে বহু মানুষের রক্তাক্ত মৃত্যু ঘটিয়ে বসতে পারে, যা প্রায় প্রতিদিন আমাদের দেশে হচ্ছে।
এ জন্য কে কবি বা নৃত্যশিল্পী হবে বা হবে ব্যবসায়ী, আইনজীবী, শ্রমিক বা নির্বাহী, তাদের চেয়ে একটা রাষ্ট্রকে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকতে হয় চালকদের নিয়ে, বিশেষ করে ট্রাক আর বাসের চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে। আগের পেশাগুলোর তুলনায় একজন চালক নিতান্তই সামান্য মানুষ, কিন্তু দুর্ঘটনাজনিত অসংখ্য মৃত্যু, দুর্ভাগ্য আর চোখের পানি এড়াতে একটা রাষ্ট্রকে এটা অনন্যোপায় হয়েই ভাবতে হবে।
এ জন্য উন্নত দেশগুলো কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে থাকে খুবই হুঁশিয়ার। লাইসেন্স দেওয়ার আগে দেখে নেওয়া হয় তিনি একজন শিক্ষিত বা সচেতন মানুষ কি না, ড্রাইভিংয়ের জটিল নিয়মকানুন বোঝার, আত্মস্থ করার বা মুহূর্তের দরকারে প্রয়োগ করার মতো ক্ষিপ্র মেধা তাঁর আছে কি না, চারপাশের মানুষ পৃথিবী ও পরিবেশ সম্বন্ধে তিনি সজাগ বা মানবিকবোধে জাগ্রত কি না। কেননা একজন অকর্ষিত নির্বোধ বা হিতাহিতজ্ঞানশূন্য মানুষকে একটা বাস বা ট্রাকের লাইসেন্স দেওয়া আর ভোজালি হাতে একজন দুর্বৃত্তকে খুন করার ঢালাও লাইসেন্স দিয়ে কোনো লোকালয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া প্রায় একই ব্যাপার।
এসবের পরও ওই সব দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা সহনীয় রাখতে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যাপারে এত কড়াকড়ি। ওই সব দেশের বহু মানুষকেই বলতে শুনেছি, এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া পিএইচডি করার চেয়ে কঠিন। কথাটা যে মিথ্যা নয়, তা বোঝা যায় ওই সব দেশে হাজার হাজার শিক্ষিত আর বুদ্ধিমান মানুষকে ড্রাইভিং লাইসেন্স টেস্টে বছরের পর বছর ফেল করতে দেখে। তা ছাড়া লাইসেন্স পেলেও গাড়ি চালানোর ছোট-বড় ভুলের জন্য কীভাবে চালকদের নম্বর কাটা হতে হতে একসময় তাদের লাইসেন্স বাতিল হয়, তা-ও আপনারা সবাই জানেন।
অথচ ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো এমন একটি বিপজ্জনক জিনিস আমাদের দেশে বিক্রি হয় প্রায় পানির দামে। এ যেন ‘গভর্নমেন্ট কা মাল দরিয়ামে ঢাল’। মানুষের জীবনকে গরু-ছাগলের জীবনের চেয়ে সস্তা মনে করার এমন নজির হয়তো আর কোনো দেশে নেই। অধিকাংশ সময় সামান্য ঘুষের বিনিময়ে, পরীক্ষা নিয়ে বা না নিয়ে, ভালো-মন্দ বিবেচনায় অক্ষম কিছু অবোধ মূঢ় ও জন্তুসুলভ মানুষের হাতে এ জিনিস অবাধে বিকিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে লাইসেন্স পাওয়া চালক দেশে আছে চার লাখের ওপর। কখনো কখনো ঘটে আরও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি বা শ্রমিক ফেডারেশন এগুলো লুট করে নেয় স্রেফ পেশিশক্তির তাণ্ডব চালিয়ে—চালকদের ন্যূনতম যোগ্যতা বা পরীক্ষা ছাড়াই। এই সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। অনেকে আবার কোনো লাইসেন্সই করে না, রাস্তায় নির্বিকারে গাড়ি চালিয়ে যায় ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে। না, পাকা লাইসেন্স কখনো করতেও হয় না এদের। রাস্তায় এদের ধরতে পুলিশের ঘুষের ভাগ্য খুলে যায়, তাদের গোঁফের ফাঁকে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। ফলে তাদের এরা পাকড়াও করবে কি, এদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্যই আল্লাহর দরবারে আবেদন জানায়। এদের সংখ্যাও তিন লাখের কম নয়। ফলে আজ দেশের রাস্তায় গোটা জাতির জীবন পুরো নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠেছে। সড়কপথে আমাদের জীবন ও বাঁচা-মরা এখন কিছু দুর্বৃত্তের হাতের নিছক খেলা আর লুটের জিনিস। ফলে অসংখ্য মানুষের রক্ত আর আর্তনাদ নিত্যদিন হাজার হাজার সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে দেশের রাস্তাগুলোকে বিভীষিকায় ভরিয়ে তুলছে।
বাংলাদেশে লাইসেন্স পাওয়া পেশাদার চালক বর্তমানে সাড়ে ছয় লাখ। বললে হয়তো ভুল হবে না যে এদের মধ্যে পাঁচ লাখ চালকই হয়তো ওই ধরনের, যাদের অনেকে এর মধ্যে হয় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, নয় যেকোনো মুহূর্তে ঘটাতে পারে। এদের অধিকাংশই শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত, প্রশিক্ষণহীন, নিজের বা অন্যদের জীবনের মূল্য বোঝার ক্ষমতাবিবর্জিত একধরনের মূঢ় মানুষ; যারা সচেতনভাবে নয়, অবোধ ও হিতাহিতবোধশূন্যতার কারণেই ওই দুর্ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে।
পত্রপত্রিকায় এসেছে এ ধরনের বিপজ্জনক ও অযোগ্য চালকের সংখ্যা ভয়াবহ রকমে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুক্তিহীন ও নির্বিবেক দাপটে। এ সংগঠনটির ‘কার্যকরী সভাপতি’ শাজাহান খান বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহনমন্ত্রী। জানা যায়, বাংলাদেশের মোট সাড়ে ছয় লাখ চালকের মধ্যে এক লাখ ৯৬ হাজার ৫১৬ জনকে তাঁর বেপরোয়া চাপের মুখে বিআরটিএকে ‘কোনো রকম শিক্ষা ও যোগ্যতার পরীক্ষা ছাড়াই’ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হয়েছে। এই চালকেরা ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষ খুন করে বলব না, তবে এদের অশিক্ষা আর অযোগ্যতার খেসারতে হররোজ অসংখ্য মানুষ রাস্তায় রাস্তায় খুন হয়। এক লেখক রসিকতা করে লিখেছেন, ‘শাজাহান খানের তালিকা অনুযায়ী লাইসেন্স পান বলে বিআরটিএর কর্মীরা এদের ‘খানসেনা’ বলেন।’
সম্প্রতি তিনি নতুনভাবে হুমকি দিয়েছেন, তাঁর নতুন তালিকা অনুযায়ী আরও ২৮ হাজার জন ‘অশিক্ষিত’ চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। দাবিটি শুনে এক ভদ্রমহিলা ডেইলি স্টার-এর কাছে মন্তব্য করেছেন: দেশে ‘আরও ২৮ হাজার নতুন খুনি আসছে’। তিনি কেবল দাবি তোলেননি, মিডিয়ার প্রতিরোধের মুখে তিনি তাঁর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষ ব্যবহার করে সংবাদ সম্মেলন করছেন এবং নানাভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
জনাব শাজাহান খানের সঙ্গে আমার পরিচয় মাত্র বছর খানেক আগে, একটি সেমিনারে। একই মঞ্চে বসে আমি তাঁর বক্তৃতা শুনছিলাম। বক্তৃতায় নৌপরিবহনমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাঁর সাফল্যের দিকগুলো তুলে ধরছিলেন। আজকাল হাতেগোনা দু-একজন বাদে জনগণ কোনো রাজনীতিবিদের কথা বিশ্বাস করে না। আমিও হয়তো করতাম না। কিন্তু তাঁর প্রদীপ্ত আত্মবিশ্বাস, বলিষ্ঠ বাচনভঙ্গি ও সরলতা তাঁর ব্যাপারে আমার মনে আস্থার ভাব জাগিয়ে তোলে। মুহূর্তের বিভ্রমে তাঁর কথাগুলো আমার কাছে সত্যি বলে মনে হয়। কিন্তু সম্প্র্রতি পত্রপত্রিকা মারফত তাঁর অতীত ও বর্তমানের যেসব কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি উঠে এসেছে, তাতে আমার সেই বিভ্রমের অবসান ঘটেছে।
সেমিনারের সেই বক্তৃতায় তিনি বারবার বলেছিলেন, এখন তাঁর আর চাওয়ার কিছু নেই। যার মানে, এখন জাতিকে শুধু দেওয়াই তাঁর একমাত্র স্বপ্ন। কিন্তু এসব অশুভ তৎপরতার পর তাঁর ওই বক্তব্যকে সত্যি মনে করার কোনো রকম কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। মনে হতে চায়, এখনো তাঁর চাওয়া শেষ হয়নি। চালকেরা যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স নেবে, এটাই দেশের আইন। এ ব্যাপারে নাক গলাতে কেন আসছেন তিনি? এই নির্মম বেকারত্বের যুগে আজ দেশে কি চালক হতে চাওয়া অল্প শিক্ষিত যুবকের অভাব আছে? তবে কেন যোগ্যদের নিচে ফেলে তিনি অযোগ্যদের সুবিধা দিতে চান? হেলপারদের করতে চান চালক? আমরা দেখে এসেছি, এ দেশে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ ধরনের গণহারে সুবিধা নেওয়ার পেছনে বিরাট অঙ্কের আর্থিক লেনদেন থাকে। তাঁর ব্যাপারে ওই প্রসঙ্গ না টেনেও বলি, এসব ন্যায়নীতিবিরুদ্ধ তৎপরতার উদ্দেশ্য কী? ক্ষমতা? মন্ত্রিত্ব? তাও তো তিনি পেয়েছেন। তাতেও কি তাঁর চাওয়া শেষ হয়নি? আবারও চাই ক্ষমতা? অনৈতিকতার মাধ্যমে চিরদিনের জন্য আমৃত্যু ক্ষমতা?
তাঁর এসব অপরাধমূলক কাজের জন্য দেশে যে লাখ লাখ দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই সঙ্গে যে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু, পঙ্গুত্ব আর হাহাকার উঠছে—তার মূল হোতা বা হত্যাকারী হিসেবে দেশের জনগণ ওই অশিক্ষিত-অবোধ চালকদের বদলে যদি তাঁর দিকে আঙুল উঁচায়, তার কী জবাব হবে তাঁর?
আগে তিনি ছিলেন একজন শ্রমিকনেতা, আজ তিনি মন্ত্রী। আজ তাঁর গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে, যা আমার মতো দেশের বাকি ১৬ কোটি মানুষের জন্য নিষিদ্ধ। এই পতাকার মানে কি তাঁর জানা আছে? না থাকলে তাঁকে জানাই, এর মানে আজ তিনি এই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মর্যাদার প্রতীক, জনগণের জীবন, সম্পদ, স্বার্থ ও সুবিচারের রক্ষক। এই মর্যাদা নিয়ে কী করে তিনি এমন ন্যায়নীতিহীন ও আইনবিরুদ্ধ ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করেন? করতে চাইলে শ্রমিকনেতা হয়ে তা করাই তো ভালো। মন্ত্রিত্ব বা রাজনীতি মানে কি শুধু জাতিকে নির্বিবেকভাবে লুণ্ঠন করার অবারিত মওকা?
তিনি বারবার বলছেন, দেশে এক লাখ ২০ হাজার চালক রয়েছে, এই ঘাটতি পূরণ হবে কী করে? উত্তরে বলব, এ ব্যাপারে মাথাব্যথা রাষ্ট্রের। এর জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় আছে। এ নিয়ে তাঁকে মাথা না ঘামালেও চলবে। মন্ত্রীর কর্তৃত্ব ও মর্যাদা নিয়ে এ ধরনের অপরাধ বা অপরাধীদের রক্ষক ও পৃষ্ঠপোষক হওয়ার কী অধিকার আছে তাঁর?
এ প্রসঙ্গে একটা প্রস্তাব দিয়ে শেষ করি। দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িগুলোকে পত্রপত্রিকায় প্রায়ই ‘ঘাতক ট্রাক’ বা ‘ঘাতক বাস’ বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আমার ধারণা, ‘ঘাতক ট্রাক’ বা ‘ঘাতক বাস’ বলে আসলে কিছু নেই। আছে ‘ঘাতক ড্রাইভার’ বলে একটা জিনিস। এখন প্রশ্ন, এই ঘাতক চালক লোকটি কে? ‘ঘাতক ড্রাইভার’ লোকটি সে-ই, যে নিজের জীবনের মূল্য বুঝতে পারে না; ফলে অন্যদের জীবনের মূল্য বোঝাও তার পক্ষে সম্ভব হয় না। এ জন্যই মালবোঝাই ট্রাককে রাস্তার পাশের দোকানপাটের ওপর তুলে দেওয়া বা গাড়িভর্তি মানুষ নিয়ে বাসকে খাদে ফেলে দিতে তার বিবেকে বাধে না। এখন প্রশ্ন, নিজের জীবনের মূল্য বোঝে না কোন মানুষ? উত্তর একটাই: যার শিক্ষা নেই। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা শুধু মানুষকে লিখতে-পড়তে বা আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে শেখায় না, এর ভূমিকা আরও অনেক বড়। এটি মানুষকে সচেতন করে; চারপাশ সম্বন্ধে সজাগ ও অবহিত করে; জীবন, পৃথিবী, পারিপার্শ্ব বা জীবনের ভালো-মন্দ সম্বন্ধে উচ্চতর মানবিক বোধের জন্ম দেয়। ফলে নিজের জীবনের মূল্য, অর্থ বা গুরুত্ব সে আরও স্পষ্ট করে বুঝতে পারে। তাই অন্যের জীবনের দাম বা ক্ষতির বেদনাও তার কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। ফলে সে তখন শুধু গাড়ি চালায় না, পাশাপাশি মানুষকে রক্ষাও করে, একটা নিরাপদ ও স্বস্তিময় নিশ্চিত সড়কপথের জন্ম দেয়। দীর্ঘদিন শ্রমিক আন্দোলন করতে গিয়ে শিক্ষার এ দিকটির কথা মন্ত্রী হয়তো ভেবে দেখারও সময় পাননি। ফলে ড্রাইভিং সম্বন্ধে তাঁর ধারণা হয়ে গেছে স্থূল, একপেশে আর যান্ত্রিক। গাড়ি চালানোকেই তিনি ড্রাইভিং মনে করেন। চালকের সংখ্যা বাড়ানোর দরকারটাই তিনি বোঝেন, এর সঙ্গে জড়িত মানবিক বা সামাজিক সমস্যাগুলো বুঝতে পারেন না।
এখন প্রশ্ন, ন্যূনতম কতটুকু শিক্ষা থাকলে একজন মানুষ নিজের জীবনের মূল্য বুঝতে শুরু করে? আমার ধারণা, ন্যূনতম এসএসসি পাস করলে। এর চেয়ে কম শিক্ষাও শিক্ষা; কিন্তু এসএসসি শুধু শিক্ষা নয়, এটা একটা সনদ। এই সনদ একজন সাধারণ মানুষের সামনে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার স্বপ্ন এনে দাঁড় করায়, জীবন সম্বন্ধে তাকে আশাবাদী করে। ফলে নিজের জীবনের মতো অন্যদের জীবনের মূল্যও তখন তার কাছে ধরা পড়ে।
তাই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে আমার প্রস্তাব, অতীতে যা হওয়ার হয়েছে; কিন্তু এখন মাঝারি থেকে বড় গাড়ির চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনপক্ষে এসএসসি করা হোক। শক্ত করে ব্যাপারটা কার্যকর করুন। আমি বিশ্বাস করি, দেশ অচিরেই এর সুফল পাবে। কেননা মানবিক বোধের উৎকর্ষের চেয়ে বড় রক্ষাকবচ পৃথিবীতে আর নেই। তবে বাসের চালক কোনোভাবেই বিএ পাসের নিচে হওয়া উচিত নয়; যেহেতু তাদের গাড়ির গতি রাস্তার ট্রাক বা অন্য অধিকাংশ গাড়ির গতির চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বশ্বাস এবং তাদের সামান্যতম ভুলের মাশুলও মর্মান্তিক।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: শিক্ষাবিদ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি।
এ জন্য কে কবি বা নৃত্যশিল্পী হবে বা হবে ব্যবসায়ী, আইনজীবী, শ্রমিক বা নির্বাহী, তাদের চেয়ে একটা রাষ্ট্রকে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকতে হয় চালকদের নিয়ে, বিশেষ করে ট্রাক আর বাসের চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে। আগের পেশাগুলোর তুলনায় একজন চালক নিতান্তই সামান্য মানুষ, কিন্তু দুর্ঘটনাজনিত অসংখ্য মৃত্যু, দুর্ভাগ্য আর চোখের পানি এড়াতে একটা রাষ্ট্রকে এটা অনন্যোপায় হয়েই ভাবতে হবে।
এ জন্য উন্নত দেশগুলো কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে থাকে খুবই হুঁশিয়ার। লাইসেন্স দেওয়ার আগে দেখে নেওয়া হয় তিনি একজন শিক্ষিত বা সচেতন মানুষ কি না, ড্রাইভিংয়ের জটিল নিয়মকানুন বোঝার, আত্মস্থ করার বা মুহূর্তের দরকারে প্রয়োগ করার মতো ক্ষিপ্র মেধা তাঁর আছে কি না, চারপাশের মানুষ পৃথিবী ও পরিবেশ সম্বন্ধে তিনি সজাগ বা মানবিকবোধে জাগ্রত কি না। কেননা একজন অকর্ষিত নির্বোধ বা হিতাহিতজ্ঞানশূন্য মানুষকে একটা বাস বা ট্রাকের লাইসেন্স দেওয়া আর ভোজালি হাতে একজন দুর্বৃত্তকে খুন করার ঢালাও লাইসেন্স দিয়ে কোনো লোকালয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া প্রায় একই ব্যাপার।
এসবের পরও ওই সব দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা সহনীয় রাখতে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যাপারে এত কড়াকড়ি। ওই সব দেশের বহু মানুষকেই বলতে শুনেছি, এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া পিএইচডি করার চেয়ে কঠিন। কথাটা যে মিথ্যা নয়, তা বোঝা যায় ওই সব দেশে হাজার হাজার শিক্ষিত আর বুদ্ধিমান মানুষকে ড্রাইভিং লাইসেন্স টেস্টে বছরের পর বছর ফেল করতে দেখে। তা ছাড়া লাইসেন্স পেলেও গাড়ি চালানোর ছোট-বড় ভুলের জন্য কীভাবে চালকদের নম্বর কাটা হতে হতে একসময় তাদের লাইসেন্স বাতিল হয়, তা-ও আপনারা সবাই জানেন।
অথচ ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো এমন একটি বিপজ্জনক জিনিস আমাদের দেশে বিক্রি হয় প্রায় পানির দামে। এ যেন ‘গভর্নমেন্ট কা মাল দরিয়ামে ঢাল’। মানুষের জীবনকে গরু-ছাগলের জীবনের চেয়ে সস্তা মনে করার এমন নজির হয়তো আর কোনো দেশে নেই। অধিকাংশ সময় সামান্য ঘুষের বিনিময়ে, পরীক্ষা নিয়ে বা না নিয়ে, ভালো-মন্দ বিবেচনায় অক্ষম কিছু অবোধ মূঢ় ও জন্তুসুলভ মানুষের হাতে এ জিনিস অবাধে বিকিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে লাইসেন্স পাওয়া চালক দেশে আছে চার লাখের ওপর। কখনো কখনো ঘটে আরও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি বা শ্রমিক ফেডারেশন এগুলো লুট করে নেয় স্রেফ পেশিশক্তির তাণ্ডব চালিয়ে—চালকদের ন্যূনতম যোগ্যতা বা পরীক্ষা ছাড়াই। এই সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। অনেকে আবার কোনো লাইসেন্সই করে না, রাস্তায় নির্বিকারে গাড়ি চালিয়ে যায় ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে। না, পাকা লাইসেন্স কখনো করতেও হয় না এদের। রাস্তায় এদের ধরতে পুলিশের ঘুষের ভাগ্য খুলে যায়, তাদের গোঁফের ফাঁকে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। ফলে তাদের এরা পাকড়াও করবে কি, এদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্যই আল্লাহর দরবারে আবেদন জানায়। এদের সংখ্যাও তিন লাখের কম নয়। ফলে আজ দেশের রাস্তায় গোটা জাতির জীবন পুরো নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠেছে। সড়কপথে আমাদের জীবন ও বাঁচা-মরা এখন কিছু দুর্বৃত্তের হাতের নিছক খেলা আর লুটের জিনিস। ফলে অসংখ্য মানুষের রক্ত আর আর্তনাদ নিত্যদিন হাজার হাজার সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে দেশের রাস্তাগুলোকে বিভীষিকায় ভরিয়ে তুলছে।
বাংলাদেশে লাইসেন্স পাওয়া পেশাদার চালক বর্তমানে সাড়ে ছয় লাখ। বললে হয়তো ভুল হবে না যে এদের মধ্যে পাঁচ লাখ চালকই হয়তো ওই ধরনের, যাদের অনেকে এর মধ্যে হয় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, নয় যেকোনো মুহূর্তে ঘটাতে পারে। এদের অধিকাংশই শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত, প্রশিক্ষণহীন, নিজের বা অন্যদের জীবনের মূল্য বোঝার ক্ষমতাবিবর্জিত একধরনের মূঢ় মানুষ; যারা সচেতনভাবে নয়, অবোধ ও হিতাহিতবোধশূন্যতার কারণেই ওই দুর্ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে।
পত্রপত্রিকায় এসেছে এ ধরনের বিপজ্জনক ও অযোগ্য চালকের সংখ্যা ভয়াবহ রকমে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুক্তিহীন ও নির্বিবেক দাপটে। এ সংগঠনটির ‘কার্যকরী সভাপতি’ শাজাহান খান বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহনমন্ত্রী। জানা যায়, বাংলাদেশের মোট সাড়ে ছয় লাখ চালকের মধ্যে এক লাখ ৯৬ হাজার ৫১৬ জনকে তাঁর বেপরোয়া চাপের মুখে বিআরটিএকে ‘কোনো রকম শিক্ষা ও যোগ্যতার পরীক্ষা ছাড়াই’ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হয়েছে। এই চালকেরা ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষ খুন করে বলব না, তবে এদের অশিক্ষা আর অযোগ্যতার খেসারতে হররোজ অসংখ্য মানুষ রাস্তায় রাস্তায় খুন হয়। এক লেখক রসিকতা করে লিখেছেন, ‘শাজাহান খানের তালিকা অনুযায়ী লাইসেন্স পান বলে বিআরটিএর কর্মীরা এদের ‘খানসেনা’ বলেন।’
সম্প্রতি তিনি নতুনভাবে হুমকি দিয়েছেন, তাঁর নতুন তালিকা অনুযায়ী আরও ২৮ হাজার জন ‘অশিক্ষিত’ চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। দাবিটি শুনে এক ভদ্রমহিলা ডেইলি স্টার-এর কাছে মন্তব্য করেছেন: দেশে ‘আরও ২৮ হাজার নতুন খুনি আসছে’। তিনি কেবল দাবি তোলেননি, মিডিয়ার প্রতিরোধের মুখে তিনি তাঁর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষ ব্যবহার করে সংবাদ সম্মেলন করছেন এবং নানাভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
জনাব শাজাহান খানের সঙ্গে আমার পরিচয় মাত্র বছর খানেক আগে, একটি সেমিনারে। একই মঞ্চে বসে আমি তাঁর বক্তৃতা শুনছিলাম। বক্তৃতায় নৌপরিবহনমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাঁর সাফল্যের দিকগুলো তুলে ধরছিলেন। আজকাল হাতেগোনা দু-একজন বাদে জনগণ কোনো রাজনীতিবিদের কথা বিশ্বাস করে না। আমিও হয়তো করতাম না। কিন্তু তাঁর প্রদীপ্ত আত্মবিশ্বাস, বলিষ্ঠ বাচনভঙ্গি ও সরলতা তাঁর ব্যাপারে আমার মনে আস্থার ভাব জাগিয়ে তোলে। মুহূর্তের বিভ্রমে তাঁর কথাগুলো আমার কাছে সত্যি বলে মনে হয়। কিন্তু সম্প্র্রতি পত্রপত্রিকা মারফত তাঁর অতীত ও বর্তমানের যেসব কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি উঠে এসেছে, তাতে আমার সেই বিভ্রমের অবসান ঘটেছে।
সেমিনারের সেই বক্তৃতায় তিনি বারবার বলেছিলেন, এখন তাঁর আর চাওয়ার কিছু নেই। যার মানে, এখন জাতিকে শুধু দেওয়াই তাঁর একমাত্র স্বপ্ন। কিন্তু এসব অশুভ তৎপরতার পর তাঁর ওই বক্তব্যকে সত্যি মনে করার কোনো রকম কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। মনে হতে চায়, এখনো তাঁর চাওয়া শেষ হয়নি। চালকেরা যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স নেবে, এটাই দেশের আইন। এ ব্যাপারে নাক গলাতে কেন আসছেন তিনি? এই নির্মম বেকারত্বের যুগে আজ দেশে কি চালক হতে চাওয়া অল্প শিক্ষিত যুবকের অভাব আছে? তবে কেন যোগ্যদের নিচে ফেলে তিনি অযোগ্যদের সুবিধা দিতে চান? হেলপারদের করতে চান চালক? আমরা দেখে এসেছি, এ দেশে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ ধরনের গণহারে সুবিধা নেওয়ার পেছনে বিরাট অঙ্কের আর্থিক লেনদেন থাকে। তাঁর ব্যাপারে ওই প্রসঙ্গ না টেনেও বলি, এসব ন্যায়নীতিবিরুদ্ধ তৎপরতার উদ্দেশ্য কী? ক্ষমতা? মন্ত্রিত্ব? তাও তো তিনি পেয়েছেন। তাতেও কি তাঁর চাওয়া শেষ হয়নি? আবারও চাই ক্ষমতা? অনৈতিকতার মাধ্যমে চিরদিনের জন্য আমৃত্যু ক্ষমতা?
তাঁর এসব অপরাধমূলক কাজের জন্য দেশে যে লাখ লাখ দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই সঙ্গে যে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু, পঙ্গুত্ব আর হাহাকার উঠছে—তার মূল হোতা বা হত্যাকারী হিসেবে দেশের জনগণ ওই অশিক্ষিত-অবোধ চালকদের বদলে যদি তাঁর দিকে আঙুল উঁচায়, তার কী জবাব হবে তাঁর?
আগে তিনি ছিলেন একজন শ্রমিকনেতা, আজ তিনি মন্ত্রী। আজ তাঁর গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে, যা আমার মতো দেশের বাকি ১৬ কোটি মানুষের জন্য নিষিদ্ধ। এই পতাকার মানে কি তাঁর জানা আছে? না থাকলে তাঁকে জানাই, এর মানে আজ তিনি এই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মর্যাদার প্রতীক, জনগণের জীবন, সম্পদ, স্বার্থ ও সুবিচারের রক্ষক। এই মর্যাদা নিয়ে কী করে তিনি এমন ন্যায়নীতিহীন ও আইনবিরুদ্ধ ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করেন? করতে চাইলে শ্রমিকনেতা হয়ে তা করাই তো ভালো। মন্ত্রিত্ব বা রাজনীতি মানে কি শুধু জাতিকে নির্বিবেকভাবে লুণ্ঠন করার অবারিত মওকা?
তিনি বারবার বলছেন, দেশে এক লাখ ২০ হাজার চালক রয়েছে, এই ঘাটতি পূরণ হবে কী করে? উত্তরে বলব, এ ব্যাপারে মাথাব্যথা রাষ্ট্রের। এর জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় আছে। এ নিয়ে তাঁকে মাথা না ঘামালেও চলবে। মন্ত্রীর কর্তৃত্ব ও মর্যাদা নিয়ে এ ধরনের অপরাধ বা অপরাধীদের রক্ষক ও পৃষ্ঠপোষক হওয়ার কী অধিকার আছে তাঁর?
এ প্রসঙ্গে একটা প্রস্তাব দিয়ে শেষ করি। দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িগুলোকে পত্রপত্রিকায় প্রায়ই ‘ঘাতক ট্রাক’ বা ‘ঘাতক বাস’ বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আমার ধারণা, ‘ঘাতক ট্রাক’ বা ‘ঘাতক বাস’ বলে আসলে কিছু নেই। আছে ‘ঘাতক ড্রাইভার’ বলে একটা জিনিস। এখন প্রশ্ন, এই ঘাতক চালক লোকটি কে? ‘ঘাতক ড্রাইভার’ লোকটি সে-ই, যে নিজের জীবনের মূল্য বুঝতে পারে না; ফলে অন্যদের জীবনের মূল্য বোঝাও তার পক্ষে সম্ভব হয় না। এ জন্যই মালবোঝাই ট্রাককে রাস্তার পাশের দোকানপাটের ওপর তুলে দেওয়া বা গাড়িভর্তি মানুষ নিয়ে বাসকে খাদে ফেলে দিতে তার বিবেকে বাধে না। এখন প্রশ্ন, নিজের জীবনের মূল্য বোঝে না কোন মানুষ? উত্তর একটাই: যার শিক্ষা নেই। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা শুধু মানুষকে লিখতে-পড়তে বা আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে শেখায় না, এর ভূমিকা আরও অনেক বড়। এটি মানুষকে সচেতন করে; চারপাশ সম্বন্ধে সজাগ ও অবহিত করে; জীবন, পৃথিবী, পারিপার্শ্ব বা জীবনের ভালো-মন্দ সম্বন্ধে উচ্চতর মানবিক বোধের জন্ম দেয়। ফলে নিজের জীবনের মূল্য, অর্থ বা গুরুত্ব সে আরও স্পষ্ট করে বুঝতে পারে। তাই অন্যের জীবনের দাম বা ক্ষতির বেদনাও তার কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। ফলে সে তখন শুধু গাড়ি চালায় না, পাশাপাশি মানুষকে রক্ষাও করে, একটা নিরাপদ ও স্বস্তিময় নিশ্চিত সড়কপথের জন্ম দেয়। দীর্ঘদিন শ্রমিক আন্দোলন করতে গিয়ে শিক্ষার এ দিকটির কথা মন্ত্রী হয়তো ভেবে দেখারও সময় পাননি। ফলে ড্রাইভিং সম্বন্ধে তাঁর ধারণা হয়ে গেছে স্থূল, একপেশে আর যান্ত্রিক। গাড়ি চালানোকেই তিনি ড্রাইভিং মনে করেন। চালকের সংখ্যা বাড়ানোর দরকারটাই তিনি বোঝেন, এর সঙ্গে জড়িত মানবিক বা সামাজিক সমস্যাগুলো বুঝতে পারেন না।
এখন প্রশ্ন, ন্যূনতম কতটুকু শিক্ষা থাকলে একজন মানুষ নিজের জীবনের মূল্য বুঝতে শুরু করে? আমার ধারণা, ন্যূনতম এসএসসি পাস করলে। এর চেয়ে কম শিক্ষাও শিক্ষা; কিন্তু এসএসসি শুধু শিক্ষা নয়, এটা একটা সনদ। এই সনদ একজন সাধারণ মানুষের সামনে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার স্বপ্ন এনে দাঁড় করায়, জীবন সম্বন্ধে তাকে আশাবাদী করে। ফলে নিজের জীবনের মতো অন্যদের জীবনের মূল্যও তখন তার কাছে ধরা পড়ে।
তাই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে আমার প্রস্তাব, অতীতে যা হওয়ার হয়েছে; কিন্তু এখন মাঝারি থেকে বড় গাড়ির চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনপক্ষে এসএসসি করা হোক। শক্ত করে ব্যাপারটা কার্যকর করুন। আমি বিশ্বাস করি, দেশ অচিরেই এর সুফল পাবে। কেননা মানবিক বোধের উৎকর্ষের চেয়ে বড় রক্ষাকবচ পৃথিবীতে আর নেই। তবে বাসের চালক কোনোভাবেই বিএ পাসের নিচে হওয়া উচিত নয়; যেহেতু তাদের গাড়ির গতি রাস্তার ট্রাক বা অন্য অধিকাংশ গাড়ির গতির চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বশ্বাস এবং তাদের সামান্যতম ভুলের মাশুলও মর্মান্তিক।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: শিক্ষাবিদ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি।