দিনভর মূল্যসূচকের ওঠানামার মধ্য দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। এই ওঠানামার মধ্যে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক দিনশেষে প্রায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৬৬ পয়েন্টে। সূচক বাড়লেও বেশির ভাগ শেয়ারের দাম ও লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমেছে। অন্যদিকে সিএসইতে মূল্যসূচক সামান্য বাড়লেও লেনদেন কমেছে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণে বাজার এমন আচরণ করছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত। গতকাল বৃহস্পতিবার বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) উদ্যোগে পুঁজিবাজার সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্য হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এই সভাকে কেন্দ্র করেই গতকালের বাজারে শেয়ারের দামের উত্থান-পতন ঘটেছে। সভাকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশাও ছিল অনেক। সভা শেষে এসইসির পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একক গ্রাহক ঋণসীমা (সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট) সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিনিধি।
লেনদেন চলাকালেই এই ঘোষণার খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায় বাজারে। বেলা দুইটার দিকে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৪ পয়েন্টে ওঠে। এরপর একক গ্রাহক ঋণসীমা সমন্বয়ের ঘোষণা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়লে ফের সূচক কমতে থাকে, যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে ২৫২টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৩৩টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ১০২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৭টির দাম। দিনশেষে ডিএসইতে প্রায় ২৯৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ৮৩ কোটি টাকা কম।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক গতকাল প্রায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮৮৪ পয়েন্টে। দিনশেষে সিএসইতে ১৭৪ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৭৯টির দাম বেড়েছে, কমেছে ৭৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২১টির দাম। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে চট্টগ্রামের বাজারে ৩৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
এসইসির সভা: শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিনিয়োগের ওপর আরোপিত দুটি শর্ত আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। গতকাল এসইসির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সভায় প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেডের রাইট শেয়ার ও ১৫০ কোটি টাকার দুটি মেয়াদহীন মিউচুয়াল ফান্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়। সভাশেষে এসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার পঞ্চম তফসিলের কারণে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো চাইলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে ১০ শতাংশ ও একক খাতে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারত না। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এসইসি গতকাল দুটি শর্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রিমিয়ার লিজিং ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যে বিদ্যমান একটি শেয়ারের বিপরীতে একটি রাইট শেয়ার ইস্যু করবে। এ ছাড়া দুটি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১০০ কোটি টাকার এমটিবি ইউনিট ফান্ডের ট্রাস্ট ডিড এবং ৫০ কোটি টাকার সন্ধানী লাইফ ইউনিট ফান্ডের প্রসপেক্টাস অনুমোদন করা হয়।