এমন কথা কেউ বলতে পারেন! এমন কথা একজন মন্ত্রী বলতে পারেন? তা-ও আবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী? মজিবুর রহমান ফকির নামের এই প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘ধর্মমতে মুসলমানদের কোনো অকালমৃত্যু নেই। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর তাদের জন্য নির্ধারিত সময়েই মারা গেছে। তাদের জন্য দুঃখ লাগতে পারে। তবে এটাই বাস্তব।’ একজন মন্ত্রীর মানসিকতা, যুক্তি-শৃঙ্খলা এ রকম হয় কী করে? তাহলে তো খুনি খুন করে বলবে, আল্লাহ তাঁর হায়াত তুলে নিয়েছেন বলে উনি মারা গেছেন, আপনারা বিচার করার কে? বিচার করবেন আল্লাহ তাআলা। তাহলে আর হাসপাতাল দরকার কেন, কারণ স্বাস্থ্য দেন আল্লাহ, মৃত্যুও দেন তিনি। তাহলে আর এমডিজিতে শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ কেন? জন্ম দেবেন আল্লাহ, মারবেনও তিনি। আমরা কেবল আমাদের মাতৃমৃত্যুর হার বেশি বলে দুঃখ পেতে পারি, কিন্তু এ নিয়ে আমাদের করার কিছু নেই। অথচ আমাদের ধর্মেরই ঘোষণা, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করবেন না, যতক্ষণ না নিজেরাই নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে।’ এই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব স্বাস্থ্য আর পরিবারকল্যাণের, আর তিনি ‘বাংলাদেশে জনসংখ্যানীতি যুগোপ-যোগীকরণ জাতীয় কর্মশালা’য় বলে বসেন, ‘মা-বাবা শিক্ষিত হলে সন্তান বেশি হলে সমস্যা নেই। তিনি তাঁর মা-বাবার নবম সন্তান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর মা-বাবার নবম সন্তান ছিলেন!’ (প্রথম আলো, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১)। যে দেশে জনসংখ্যা এক নম্বর সমস্যা, সেই দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী যদি ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথের জন্ম দেওয়ার জন্য নয়টা, দশটা, চৌদ্দটা সন্তান জন্ম দেওয়ানোর জন্য নসিহত করতে থাকেন, তাহলে নিজের চোখ-কানকে বিশ্বাস করব, নাকি ভাবব, আমরা উন্মাদাশ্রমে বসবাস করছি। বাবার কোলে থাকা শিশু হঠা ৎ ছুটে আসা গুলিতে মারা যাওয়ার পর তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন।’ পরিশেষে তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ আবার কোন আল্লাহর মালের পাল্লায় আমরা পড়লাম।