সুদের হার বাড়ানোর পরও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ছে না। গত অর্থবছরের জুলাই মাসের তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতির চাপ ও শেয়ারবাজারে টাকা আটকে থাকায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি আশংকাজনকভাবে কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে ৩১১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের একই মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার কারণ ব্যাংখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, 'মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অর্থাৎ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে সুদের হার বাড়ানোর পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে না।'
শেয়ারবাজারে মন্দার প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'শেয়ারবাজার যখন চাঙ্গা ছিল তখন অনেকেই বেশি মুনাফা পাওয়ার আশায় সঞ্চয়পত্র ভেঙে টাকা তুলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছিল। বেশ কিছুদিন ধরে বাজার বেশ খারাপ। এখন বিক্রি করলে অনেক লোকসান হবে। তাই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি না করে ধরে রেখেছেন। এতে প্রচুর টাকা আটকে আছে। তারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারছে না।'
এছাড়া ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার বাড়ানোয় একটু বেশি লাভের আশায় অনেকে এখন সঞ্চয়পত্র না কিনে ব্যাংকে টাকা রাখছেন বলে জানান জায়েদ বখত।
গত ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে সুদের হার কমানোয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি পাঁচ ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১১ হাজার ৫৯০ কোটি ৬৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। ২০১০-১১ অর্থবছরে তা নেমে আসে দুই হাজার ৫৬ কোটি ৯০ লাখ টাকায়।
বিষয়টি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের বা মুনাফার হার বাড়ানো হয়। পহেলা জুলাই থেকে তা কার্যকর হয়।
সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি সঞ্চয়পত্র - পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানো হয় সবচেয়ে বেশি। পরিবার সঞ্চয়পত্রের বার্ষিক সুদের হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ করা হয়। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয় ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
এছাড়া বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং ওয়েজ আর্নার্স বন্ডের সুদের হার ১১ থেকে বাড়িয়ে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ করা হয়।
সব সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর থেকে ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। আগে পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য সব সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ হারে উৎসে করা কেটে রাখা হতো।
হিসাব করে দেখা গেছে, উৎসে কর কাটার বিধান প্রবর্তন করায় পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিযোগকারীদের লাভ সামান্য বেড়েছে। আগে একজন নারী এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়ত্রের উপর মাসিক মুনাফা পেতেন ৯২০ টাকা। এখন এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মুনাফা পাবেন এক হাজার পাঁচ টাকা। কিন্তু উৎসে কর হিসেবে কেটে রাখা হবে ৫০ টাকা ২৯ পয়সা। হাতে পাবেন ৯৫৫ টাকা।
একইভাবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে আগে মাসিক মুনাফা পাওয়া যেতো ৯১৫ টাকা। এখন পাওয়া যাবে ৯৩৫ টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাস ভিত্তিক) গত অগাস্ট মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। যা গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। জুলাই মাসে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
গত অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছিল ৭ শতাংশ। কিন্তু বছর শেষে তা গিয়ে দাড়ায় ৮ দশমিক ৮ শতাংশে। এবারের বাজেটে (২০১১-১২) গড় মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।