আর্থিক খাতে ঝুঁকির দিকগুলো বিবেচনায় রেখে কঠোর নজরদারি ও তদারকি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। তিনি বলেছেন, দেশের ব্যাংকগুলোতে নানা ধরনের উদ্ভাবনী ঋণ উপাদান (ডেরিভেটিভস) ও বন্ধকী ঋণ (সাবপ্রাইম মর্টগেজ) ব্যবস্থা নেই। ব্যাংকগুলো আবাসন খাতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেনি। তিনি বলেন, ‘তবুও, আর্থিক খাতে অনেক বিপদ ও ঝুঁকির আশঙ্কা আমাদেরও রয়েছে। তাই আমাদের আরও কঠোরভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে, যাতে এসব ঝুঁকিসমূহ যথাসময়ে শনাক্ত করে ব্যাংকগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থাপনার (বেস্ট প্র্যাকটিসেস) প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন এবং ব্যাংক প্রশিক্ষণ একাডেমির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় গভর্নর গতকাল শনিবার এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক প্রশিক্ষণ একাডেমিতে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস কে সুর চৌধুরী। বক্তব্য দেন ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা, জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী, আবুল কাশেম ও প্রশিক্ষণ একাডেমির নির্বাহী পরিচালক আতাউর রহমান। গভর্নর বলেন, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কঠোর নজরদারি বজায় রাখতে হবে। তদারকির কার্যকারিতা বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক সুস্থতা এবং স্থিতিশীলতার অন্যতম পরিমাপক হচ্ছে মূলধন পর্যাপ্ততা। ফলে, মূলধন পর্যাপ্ততা-সংক্রান্ত ব্যাসেল-২ নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং নিকট ভবিষ্যতে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজর রয়েছে। তবুও আমাদের এদিকে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।’ আতিউর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই এটা প্রকাশ করা হবে। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সুপারভিশনের ক্ষেত্রে কোনো রকম অনিয়ম ও কারচুপি মেনে নেওয়া হবে না। গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয়ের একটি স্বতন্ত্র উৎ পত্তি বা ইতিহাস রয়েছে। যেমন, ১৯৮০-এর শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেভিংস ব্যাংকের বিপর্যয়ের কারণ ছিল রিয়েল এস্টেট খাতে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। ১৯৯১-এর শেষদিকে এশিয়ার অর্থনৈতিক মন্দার কারণ ছিল দুর্বল তারল্য ব্যবস্থাপনা। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংকট যা সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তার কারণ ছিল একক-পরিবারভিত্তিক হাউজিং মার্কেট খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ দেওয়া। তিনি বলেন, ‘ফলে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে নানাবিধ কারণে যেকোনো সময় যেকোনো দেশে ব্যাংকিং তথা আর্থিক খাতে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তাই সেটা প্রতিরোধ করতে আমাদের সদাসতর্ক থাকতে হবে ও প্রয়োজনীয় রক্ষাকবচ তৈরি করতে হবে।’