পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। তারপরও পুঁজিবাজারে সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ ও আগে লগি্নকরা অর্থ আটকে পড়ায় ঝুঁকিমুক্ত নয় দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের ২৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টিই পুঁজিবাজারে আইনি সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা জানান, বাজারের মন্দা পরিস্থিতিতে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে তাঁদের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ আইনি সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে পারছেন না। অপরদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ ১.৪৯ শতাংশ বেড়েছে। পুঁজিবাজারে শেয়ার ক্রয়ের জন্য দেওয়া ঋণ আটকে পড়ায় খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০০৩ সালের ১৬ ধারা অনুযায়ী, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারে না। কিন্তু জুনভিত্তিক আর্থিক বিবরণী থেকে দেখা গেছে ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করে আছে। মার্চ প্রান্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৬২ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা জুন প্রান্তিকে ১.৪৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে এক হাজার ১৭৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একটি সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টতা অনেক বেশি। আমরা দেখতে পেয়েছি কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পুঁজিবাজারে দেওয়া মার্জিন ঋণ সমন্বয় না হওয়া। অর্থাৎ এ খাতে তাদের বিনিয়োগ আটকে গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এবং প্রাইম ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদ খান বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় কিছুটা মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। তাদের অনেক বিনিয়োগ আটকে গেছে এবং নতুন করে তারা ব্যাংক থেকে ঋণও পাচ্ছেন না। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্বাহী পরিচালক এইচ এম কায় খসরু বলেন, 'আমরা ধারাবাহিকভাবেই এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা জানিয়েছে বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা শেয়ার বিক্রয় করতে পারছে না। আমরাও তাদের বলেছি, পুঁজিবাজার যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেভাবেই ধীরে ধীরে ধারণকৃত শেয়ার ছেড়ে তাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আইনি সীমার মধ্যে নামিয়ে আনা।' বিনিয়োগ কমাতে সময় বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক একক ঋণগ্রহীতা সীমা কমিয়ে আনার জন্য জন্য ২০১১ সালের ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজার বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত দুটি পৃথক সার্কুলার জারি করে তা সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। উভয় সার্কুলারে বলা হয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মার্চেন্ট ব্যাংকিং ও ব্রোকারেজ কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে গঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের (মার্চেন্ট ব্যাংক) অনুকূলে বিদ্যমান ঋণ আইনি সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর ২০১১-এর পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বর্ধিত সময়ের মধ্যে বর্তমান ঋণ স্থিতি কোনোক্রমেই বৃদ্ধি করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আটকে পড়ায় এ সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। তবে এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যমান ঝুঁকি বাড়বে না। কারণ উভয় সার্কুলারেই শর্ত দেওয়া হয়েছে, কোনোক্রমেই বর্তমান ঋণ স্থিতি বাড়তে পারবে না। অর্থাৎ স্থিতি ধরে রাখতে গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি তিন মাসে তাদের আগে দেওয়া ঋণের সুদ সমন্বয় করতে গিয়ে কিছু শেয়ার বিক্রয় করতেই হবে, নতুবা ঋণের স্থিতি বেড়ে যাবে।