রোজায় লাগামহীনভাবে সবজির দাম বাড়লেও ঈদের পর কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমিষের বাজার- মুরগি, মাছ, গরু ও খাসির মাংসের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।
ঈদের পর আবহাওয়া ভালো থাকায় সবজির উৎপাদন বেড়েছে, এছাড়া বৃষ্টি না হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে। ফলে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। আর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় সবজির দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।
অন্যদিকে রোজায় সরকার নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে। মাংস বিক্রেতাদের দাবি- রমজানে চাহিদা বেশি থাকায় বেশি বিক্রি হয়েছে, তাই লাভ কম হলেও পুষিয়ে নেওয়া গেছে। কিন্তু এখন ওই দামে বিক্রি করে আর পোষানো যাচ্ছে না।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কাঁঠালবাগান বাজার, হাতিরপুল বাজারের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে- বাজারে প্রতি কেজি সবজিতে দাম কমেছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। তবে কাঁচামরিচের দামে অস্থিরতা যেন কাটছেই না। বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। যা গতকালও বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
বাজারে প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, বরবটি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকায় ও পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়।
বাজারে রোজার পরও দাম কমেনি আলু ও টমেটোর। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকায় ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। যা রোজায়ও একই দামে বিক্রি হয়েছিল।
তবে ঈদের পর পুরোদমে বাজার চালু না হওয়ার সুযোগে বেশি দাম হাতিয়ে নিচ্ছে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতারা। বাজারে যে পণ্যের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ভ্যানে ওই পণ্যের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
বাজারে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে কিনা জানতে চাইলে প্রায় সবজি বিক্রেতারাই বলেন, ‘বৃষ্টি না হলে এবং সরবরাহ ঠিকমতো থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’
ঈদের পর ঢাকায় মানুষ কম থাকায় দাম এখনো কম আছে বলে জানান তারা। তবে সব মানুষ ফেরার পর দাম নিয়ন্ত্রণে না থাকার আশঙ্কার কথাও বলেন তারা।
অন্যদিকে পর্যাপ্ত যোগান থাকার পর বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। ব্যবসায়ীরা বলছে, রোজার পর মাংসের তুলনায় মাছের চাহিদাই বেশি, আর চাহিদা অনুপাতে সরবরাহ কম, যে কারণে দাম বাড়ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে- প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়, সরপুঁটি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, পাঙাস ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় ও কই মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। এছাড়া বাজারে প্রতিজোড়া ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায় ও মাঝারি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতিজোড়া এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়।
এছাড়া প্রতি কেজি মুরগি (ফার্ম) বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিছ ২৭০ থেকে ৩০০ টাকায়। বেড়েছে ডিমের দামও। রোজায় প্রতি হালি ডিম ২৪ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ টাকায়।
রোজায় সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি ২৭০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়।
গরুর মাংস সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি না করার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা হাফিজ (৪৫) বলেন, ‘রোজায় গরুর মাংসের চাহিদা বেশি ছিল। প্রতিদিন দুই-তিনটি গরুর মাংস বিক্রি হতো। তাই লাভ কম হলেও পুষিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু এখন একটি গরুর মাংস বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে যায়। তাই পোষানো যায় না।’
এছাড়া গরুর খাদ্যের দাম বেড়েছে, যে কারণে গরুর দামও কিছুটা বেড়েছে। গরুর মাংসের দাম বাড়ার এটি আর একটি কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।