শেয়ারবাজার :::: পুঁজিবাজারে ইলেকট্রনিক শেয়ার সংরক্ষণ ও লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) বিভিন্ন চার্জ কমিয়ে আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
বিভিন্ন চার্জ কমিয়ে আনার বিষয়টি চুড়ান্ত করার জন্য আগামী সপ্তাহে সিডিবিএল পরিচালনা বোর্ডের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকের মাধ্যমেই সিডিবিএর কি ধরনের চার্জ কমাবে তার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট সূত্র।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন সিডিবিএলকে শেয়ার সংরক্ষণ ও লেনদেনের জন্য বিভিন্ন ফি নামিয়ে আনার অনুরোধ জানায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন।
এ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ জুলাই ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত ২১ আগস্ট কমিটি সিডিবিএল-এর কোন কোন খাতে ফি কমানো যায় এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ সভাপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সিডিবিএল এর বিভিন্ন ফি কমানোর জন্য এসইসি’র চেয়ারম্যান গত দুই মাস আগে অনুরোধ জানিয়েছেন। এর পর থেকেই সিডিবিএল তাদের চার্জ কমানোর জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে একটি বৈঠক করা কথা রয়েছে। বৈঠকে ফি কমানোর বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে।
এদিকে পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সিডিবিএলের মুনাফার পরিমাণ ব্যাপক হারে বাড়ছে।
সিডিবিএলের বার্ষিক প্রতিবেদন দেখা গেছে, ২০০৮ সালে সিডিবিএলের কর পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে এ মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৫৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০১০ সালে কর-পরবর্তী মুনাফা ১০০ কোটি টাকা ছাড়ায়।
ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী বিভিন্ন পর্যায়ে সিডিবিএল ১০ ধরনের চার্জ পুঁজিবাজার থেকে আদায় করে। এর মধ্যে ৫ ধরনের চার্জ সরাসরি বিনিয়োগকারীদের বহন করতে হয়।
নতুন বিও হিসাব খোলার সময় সিডিবিএল পাচ্ছে-১৫০ টাকা।
প্রতিটি লেনদেনের ক্ষেত্রে সিডিবিএলের চার্জে হার ০.০২৫ শতাংশ।
এক্ষেত্রে শেয়ার ক্রয় এবং বিক্রয় উভয় ক্ষেত্রেই বাজার মূল্যের ভিত্তিতে এ চার্জ আদায় করা হয়। অথচ সিডিবিএলে জমাকৃত শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি ও হস্তান্তরের সঙ্গে বাজার মূল্যের কোন সম্পর্ক নেই।
এছাড়া শেয়ার ডিমেট করার ক্ষেত্রেও বাজার মূল্যের ০.০২৫ শতাংশ হারে চার্জ আদায় করা হয়।
আইপিওর মাধ্যমে বাজারে নতুন ইস্যু যুক্ত হলে ইস্যু মূল্যের ০.০২৫ শতাংশ চার্জ আদায় করে সিডিবিএল।
একই সঙ্গে বোনাস ও রাইট শেয়ার বিতরণের ক্ষেত্রেও বাজার মূল্যের ভিত্তিতে চার্জ আদায় করা হয়। আবার প্রতিটি ইস্যুয়ার কোম্পানির কাছ থেকেও বার্ষিক ফি আদায় করা হয়।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সিডিবিএল যেসব চার্জ আদায় করছে, অন্যান্য দেশে তার অধিকাংশই নেই। আবার যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর হারও অনেক কম।
ভারতের দুটি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরিতে বিও হিসাব খোলার সময় কোনো চার্জ দিতে হয় না ।
ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্ষিক হিসাব রক্ষণ ফি’ও নেই।
শুধু শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সার্ভিসেস (সিডিএসএল) প্রতিবারের জন্য সাড়ে ৫ টাকা এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি (এনএসডিএল) সাড়ে ৪ টাকা চার্জ নিয়ে থাকেন তারা।
এ দুটি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ডিমেটের জন্যও কোনো চার্জ নেয় না।
এছাড়া অযৌক্তিক আরও কিছু ফি আদায় করে থাকে সিডিবিএল।
যেমন বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার সংরক্ষণের জন্য বার্ষিক ৫০ টাকা হারে কাস্টডি ফি আদায় করা হয়। ভারতে এ ধরনের ফি নেওয়া হয় না।
একইভাবে পাকিস্তানের সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি কোম্পানির (সিডিসি) ফির হারও সিডিবিএলের তুলনায় অনেক কম। এভাবে প্রতি বছর মুনাফা বাড়লেও শেয়ারবাজারের স্বার্থে অতিরিক্ত চার্জ আদায় বন্ধ করছে না সিডিবিএল।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণ ও লেনদেনের জন্য ২০০০ সালে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) প্রতিষ্ঠিত হয়।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, কয়েকটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিসহ মোট ১০৩টি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে সিডিবিএল প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর পরিচালনা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৪।
প্রাথমিকভাবে এই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ছিল।