বাংলা ভাষাভাষীদের প্রেরণার উৎস ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম, মোরা ঝর্ণার মতো চঞ্চল’ গানটির বিকৃত সুর পরিবর্তন করে সঠিক সুরে বিজ্ঞাপন পুনর্নির্মাণ করতে বাধ্য হয়েছে গ্রামীণফোন। নজরুল ইনস্টিটিউটের কাছে এ ঘটনার জন্য লিখিতভাবে দুঃখপ্রকাশও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রসঙ্গত, গ্রামীণফোন বিজ্ঞাপনটিতে শুধু যে সুর বিকৃত করেছে এমন নয়, এতে কিছু তরুণকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা নিতান্তই অরুচিকর। বিখ্যাত এ গানটির সুর বিকৃত করে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করলে সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় সাধারণ মানুষের মধ্যেও। এমনই এক অবস্থায় পাঠকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।
এরপর বিজ্ঞাপনটিতে ব্যবহার করা বিকৃত সুরের গানটি পরিবর্তন করে সঠিক সুরসহ চলতি সপ্তাহ থেকে দেশের স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপনটি পুন:প্রচার শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, তরুণদের মধ্যে গ্রামীণফোনের ‘ডিজুস’ ব্র্যান্ডকে জনপ্রিয় করার জন্য বিজ্ঞাপনটি প্রচার করছে গ্রামীণফোন। প্রথম বিজ্ঞাপনটি থেকে বিতর্কিত ও আপত্তিকর ভিডিওচিত্রগুলো বাদ দিয়ে এটির সময়সীমা দেড় মিনিট থেকে কমিয়ে ৩০ সেকেন্ড করা হয়েছে।
সঠিক সুরে বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর গ্রামীণফোনের উদ্দেশ্যে ইউটিউবে একজন মন্তব্য করেন, ‘‘আমাদের আন্দোলন কিছুটা হলেও সার্থক হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নজরুলের গানের আসল সুরে ফিরে এসেছে গ্রামীণফোন। তবে ভিডিওচিত্রগুলো পরিবর্তন করলে আরো বেশি ভালো হতো। আশা করি, ভবিষ্যতে গ্রামীণফোন আমাদের ভাষা ও সাঙ্গীতিক ঐতিহ্যের বিকৃত উপস্থাপন করবে না।
বাংলাদেশ কপিরাইট ও আইপি ফোরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যারিস্টার এবিএম হামিদুল মিজবাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘গ্রামীণফোন তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। এটি ইতিবাচক দিক। তবে আগের বিকৃত সুরটি যে যে ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে সেসব থেকে তা মুছে ফেলতে হবে। ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে এখনো ভিডিওগুলো রয়েছে। সেখান থেকেও এগুলো মুছতে হবে। ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপন নির্মাণের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোনকে এসব বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।’’
তিনি আরো জানান, গ্রামীণফোন এর আগেও অনেক ক্ষেত্রে এমন কাজ করেছে। অতীতের এই কাজগুলো এখন আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য দলিল-দস্তাবেজ সংগ্রহ করার পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের কপিরাইট অফিস,বাংলাদেশ’র রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “কপিরাইটের প্রতি সবারই শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। গ্রামীণফোন তাদের ভুল বুঝতে পেরেছ। তবে ভবিষ্যতে এভাবে সুর বিকৃতির মাধ্যমে কপিরাইট লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে গানের সুর বিকৃতির অভিযোগ এটিই প্রথম নয়। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একাধিকবার জনপ্রিয় বাংলা গানের সুর বিকৃতির অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তী সময়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে তারা বিজ্ঞাপনগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের সুর ও ভাববিকৃতির ধারক বিজ্ঞাপনগুলোর বিষয়ে বাংলানিউজের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।