পতনের বৃত্ত থেকে বের হতেই পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানা উদ্যোগে সাময়িকভাবে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেলেও সেটি স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কোনো উদ্যোগের সুফল আসছে না। গতকালও দুই শেয়ারবাজারে আবার দরপতন ঘটেছে। শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে বাণিজ্যিক ব্যাংকের একক গ্রাহক ঋণসীমা (সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট) এবং অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের সময় এক বছর বাড়িয়ে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। গত সোমবার লেনদেন চলাকালেই এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই বাজারের চিত্র পাল্টে যায়। দিনশেষে দরপতনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসে বাজার। গতকাল মঙ্গলবারও সেই ধারাবাহিকতা নিয়েই দুই স্টক এক্সচেঞ্জে দিনের লেনদেন শুরু হয়। গতকাল লেনদেনের প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৮০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর কিছুটা নিম্নগতি দেখা যায়। সকাল সাড়ে ১১টার পর ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক আবারও বাড়তে থাকে। দুপুর ১২টার মধ্যে তা আগের দিনের চেয়ে ১০২ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৯৪৩ পয়েন্টে ওঠে। এটিই ছিল গতকাল ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। এরপর শুরু হয় দরপতন, যা দিনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দিনশেষে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৮১০ পয়েন্টে। বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আকতার হোসেন সান্নামাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারের লেনদেনের চিত্র দেখে মনে হয়েছে, ঘোষণা দিয়েও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে খুব বেশি সক্রিয় ছিল না। দুপুরের পর বিনিয়োগকারীরা যখন দেখল লেনদেনের পরিমাণ কম, তখন তাঁরা হতাশ হয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক একক গ্রাহক ঋণসীমা সমন্বয়ের সময় বাড়ালেও তাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ ক্ষমতা বাড়েনি। হয়তো বিক্রির চাপ কিছুটা কমবে।’ আকতার হোসেন আরও বলেন, এই মুহূর্তে বাজারে বড় প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বিনিয়োগে এগিয়ে আসে সেই উদ্যোগই নিতে হবে। পাশাপাশি এসইসি ও ডিএসইকে বাজার তদারকি আরও জোরদার করতে হবে। ঢাকার বাজারে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬৮ শতাংশেরই দাম কমেছে। এদিন ডিএসইতে ২৫৯ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৭৬টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ৭৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১০টির দাম। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৪০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৩ পয়েন্টে। চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৫২ শতাংশেরই দাম কমেছে। দিনশেষে সিএসইতে ১৮৫টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৯৬টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ৭৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির দাম। শেয়ারের দাম কমার পাশাপাশি দুই বাজারেই লেনদেন কমেছে। মঙ্গলবার ঢাকার বাজারে ৩৩৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৭ কোটি টাকা কম। আর চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ১৪ কোটি টাকা কম।