শেয়ারবাজার :::: শেষ পর্যন্ত সব আশঙ্কা ও পূর্বাভাস নাকচ করে দিয়ে চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার কার্যত লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাময়িকভাবে প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর সরকার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিল ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ।
শিল্প খাতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বোরোর বাম্পার ফলন হিসাবে এনে এ বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। বিবিএস চলতি বছর শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে। আর কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে বোরোর উৎপাদনের হিসাব এখনো পায়নি বিবিএস। ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও স্পার্সোর কাছ থেকে বোরোর ফলনের তথ্যও জানতে চেয়েছে বিবিএস। অবশ্য এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় বোরোর বাম্পার ফলন ধরেই কৃষি প্রবৃদ্ধিসহ জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে বিবিএস সূত্রে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রী তথা সরকার অবশ্য এবার বেশ আশাবাদী ছিল যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে। গত বছরের জুন মাসে ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করার সময়ই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘আগামী অর্থবছরে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আমরা আশা করছি, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে সহায়তা প্রদান, পিপিপিসহ বেসরকারি খাতে ঋণের জোগান বৃদ্ধির মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে বেগবান করা এবং মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বৈদেশিক খাতকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রাখার মাধ্যম কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন সম্ভব। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যেও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
বিবিএসের প্রাক্কলন প্রকাশের আগে অবশ্য অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা ও বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করে অন্যরা প্রায় কেউই এতখানি আশাবাদী হয়নি। একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও দেশীয় গবেষণা সংস্থা চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন প্রকাশ করেছিল, তার সবগুলোতেই প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবার প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করেছিল ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন ছিল ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। আর ইউএন-এসকাপের প্রক্ষেপণ ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে স্থানীয় গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণ প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করেছিল ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে প্রবৃদ্ধির হার হয়েছিল ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, সেখানে এবার এক লাফে তা বেড়ে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশে দাঁড়ানোর বিষয়টি তাই একটু প্রশ্ন তৈরি করে বৈকি। এটা ঠিক যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ বা তার কিছু বেশি হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির সেই সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তবে সমস্যা হলো, সক্ষমতার যথাযথ বাস্তবায়ন করা। এ জায়গাটিতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে, যার প্রতিফলন পড়ছে প্রবৃদ্ধির হারে।
৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নিঃসন্দেহে একটি রেকর্ড। সাম্প্রতিককালের মধ্যে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশে উন্নীত হয়। এর পর থেকেই প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে নেমে যায়। সে বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে। তার আগে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের সামান্য নিচে ছিল। সে বছর এ হার ছিল ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
প্রশ্ন থাকছে : তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলন গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার অতিরিক্ত প্রাক্কলন করেছে। আমার মতে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের মতো ৬ শতাংশের মতোই রয়েছে।’
মির্জ্জা আজিজ ব্যাখ্যা করে বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবের জন্য দুই ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। এর একটা হলো, খাতভিত্তিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ‘সমস্যা’ রয়েছে। আরেকটি হলো, চাহিদাভিত্তিক ব্যয় হিসাবে।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে উচ্চহারে রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি আমদানিও হয়েছে। এতে বাণিজ্য-ঘাটতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আবার গত বছরের তুলনায় প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধিও কমেছে।
এ ছাড়া সরকারি উন্নয়ন ব্যয় অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নও সন্তোষজনক নয়। এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। আর রাজস্ব ব্যয়ের বেশির ভাগই খরচ হয় সুদ পরিশোধ ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে, যা জিডিপির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় না।
শিল্প খাতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বোরোর বাম্পার ফলন হিসাবে এনে এ বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। বিবিএস চলতি বছর শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে। আর কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে বোরোর উৎপাদনের হিসাব এখনো পায়নি বিবিএস। ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও স্পার্সোর কাছ থেকে বোরোর ফলনের তথ্যও জানতে চেয়েছে বিবিএস। অবশ্য এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় বোরোর বাম্পার ফলন ধরেই কৃষি প্রবৃদ্ধিসহ জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে বিবিএস সূত্রে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রী তথা সরকার অবশ্য এবার বেশ আশাবাদী ছিল যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে। গত বছরের জুন মাসে ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করার সময়ই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘আগামী অর্থবছরে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আমরা আশা করছি, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে সহায়তা প্রদান, পিপিপিসহ বেসরকারি খাতে ঋণের জোগান বৃদ্ধির মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে বেগবান করা এবং মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বৈদেশিক খাতকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রাখার মাধ্যম কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন সম্ভব। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যেও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
বিবিএসের প্রাক্কলন প্রকাশের আগে অবশ্য অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা ও বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করে অন্যরা প্রায় কেউই এতখানি আশাবাদী হয়নি। একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও দেশীয় গবেষণা সংস্থা চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন প্রকাশ করেছিল, তার সবগুলোতেই প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবার প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করেছিল ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন ছিল ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। আর ইউএন-এসকাপের প্রক্ষেপণ ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে স্থানীয় গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণ প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করেছিল ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে প্রবৃদ্ধির হার হয়েছিল ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, সেখানে এবার এক লাফে তা বেড়ে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশে দাঁড়ানোর বিষয়টি তাই একটু প্রশ্ন তৈরি করে বৈকি। এটা ঠিক যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ বা তার কিছু বেশি হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির সেই সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তবে সমস্যা হলো, সক্ষমতার যথাযথ বাস্তবায়ন করা। এ জায়গাটিতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে, যার প্রতিফলন পড়ছে প্রবৃদ্ধির হারে।
৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নিঃসন্দেহে একটি রেকর্ড। সাম্প্রতিককালের মধ্যে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশে উন্নীত হয়। এর পর থেকেই প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে নেমে যায়। সে বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে। তার আগে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের সামান্য নিচে ছিল। সে বছর এ হার ছিল ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
প্রশ্ন থাকছে : তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলন গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার অতিরিক্ত প্রাক্কলন করেছে। আমার মতে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের মতো ৬ শতাংশের মতোই রয়েছে।’
মির্জ্জা আজিজ ব্যাখ্যা করে বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবের জন্য দুই ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। এর একটা হলো, খাতভিত্তিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ‘সমস্যা’ রয়েছে। আরেকটি হলো, চাহিদাভিত্তিক ব্যয় হিসাবে।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে উচ্চহারে রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি আমদানিও হয়েছে। এতে বাণিজ্য-ঘাটতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আবার গত বছরের তুলনায় প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধিও কমেছে।
এ ছাড়া সরকারি উন্নয়ন ব্যয় অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নও সন্তোষজনক নয়। এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। আর রাজস্ব ব্যয়ের বেশির ভাগই খরচ হয় সুদ পরিশোধ ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে, যা জিডিপির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় না।