Saturday, June 04, 2011 Unknown
শেয়ারবাজার :::: শেষ পর্যন্ত সব আশঙ্কা পূর্বাভাস নাকচ করে দিয়ে চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার কার্যত লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাময়িকভাবে প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে দশমিক ৬৬ শতাংশ আর সরকার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিল দশমিক ৭০ শতাংশ
শিল্প খাতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বোরোর বাম্পার ফলন হিসাবে এনে বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে বিবিএস চলতি বছর শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি দশমিক ৫২ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে আর কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে দশমিক ৮২ শতাংশ তবে বোরোর উৎপাদনের হিসাব এখনো পায়নি বিবিএস ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় স্পার্সোর কাছ থেকে বোরোর ফলনের তথ্যও জানতে চেয়েছে বিবিএস অবশ্য বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় বোরোর বাম্পার ফলন ধরেই কৃষি প্রবৃদ্ধিসহ জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে বিবিএস সূত্রে জানা গেছে
অর্থমন্ত্রী তথা সরকার অবশ্য এবার বেশ আশাবাদী ছিল যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে গত বছরের জুন মাসে ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করার সময়ই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘আগামী অর্থবছরে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে দশমিক শতাংশ আমরা আশা করছি, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে সহায়তা প্রদান, পিপিপিসহ বেসরকারি খাতে ঋণের জোগান বৃদ্ধির মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে বেগবান করা এবং মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বৈদেশিক খাতকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রাখার মাধ্যম কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন সম্ভব পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যেও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
বিবিএসের প্রাক্কলন প্রকাশের আগে অবশ্য অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করে অন্যরা প্রায় কেউই এতখানি আশাবাদী হয়নি একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দেশীয় গবেষণা সংস্থা চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন প্রকাশ করেছিল, তার সবগুলোতেই প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে শতাংশের নিচে থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবার প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করেছিল দশমিক ৩০ শতাংশ বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন ছিল দশমিক ২০ শতাংশ আর ইউএন-এসকাপের প্রক্ষেপণ ছিল দশমিক ৪০ শতাংশ অন্যদিকে স্থানীয় গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণ প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করেছিল দশমিক ৯০ শতাংশ
২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে প্রবৃদ্ধির হার হয়েছিল দশমিক ৯০ শতাংশ, সেখানে এবার এক লাফে তা বেড়ে দশমিক ৭০ শতাংশে দাঁড়ানোর বিষয়টি তাই একটু প্রশ্ন তৈরি করে বৈকি এটা ঠিক যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার দশমিক ৭০ শতাংশ বা তার কিছু বেশি হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির সেই সক্ষমতা তৈরি হয়েছে তবে সমস্যা হলো, সক্ষমতার যথাযথ বাস্তবায়ন করা জায়গাটিতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে, যার প্রতিফলন পড়ছে প্রবৃদ্ধির হারে
দশমিক ৬৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নিঃসন্দেহে একটি রেকর্ড সাম্প্রতিককালের মধ্যে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ দশমিক ৬৩ শতাংশে উন্নীত হয় এর পর থেকেই প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার শতাংশের নিচে নেমে যায় সে বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে তার আগে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার শতাংশের সামান্য নিচে ছিল সে বছর হার ছিল দশমিক ৯৬ শতাংশ
প্রশ্ন থাকছে : তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলন গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার অতিরিক্ত প্রাক্কলন করেছে আমার মতে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের মতো শতাংশের মতোই রয়েছে।’
মির্জ্জা আজিজ ব্যাখ্যা করে বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবের জন্য দুই ধরনের পদ্ধতি রয়েছে এর একটা হলো, খাতভিত্তিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়েসমস্যা’ রয়েছে আরেকটি হলো, চাহিদাভিত্তিক ব্যয় হিসাবে
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে উচ্চহারে রপ্তানি হয়েছে কিন্তু তার চেয়ে বেশি আমদানিও হয়েছে এতে বাণিজ্য-ঘাটতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আবার গত বছরের তুলনায় প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধিও কমেছে
ছাড়া সরকারি উন্নয়ন ব্যয় অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নও সন্তোষজনক নয় এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি আর রাজস্ব ব্যয়ের বেশির ভাগই খরচ হয় সুদ পরিশোধ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে, যা জিডিপির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় না
আবার বিনিয়োগ জিডিপির অনুপাত বিবেচনা করেও প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন সঠিক হচ্ছে না বলে মনে করেন মির্জ্জা আজিজ কেননা, বিনিয়োগের প্রতি শতাংশের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতাংশ বাড়ে কিন্তু চলতি অর্থবছরে জিডিপিতে বিনিয়োগের অনুপাত ২৪ দশমিক শতাংশ ধরা হয়েছে কিন্তু দশমিক শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে জিডিপির ২৬ দশমিক শতাংশ বিনিয়োগ হওয়ার কথা
উল্লেখ্য, চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিনিয়োগ হয়নি বছরের শুরুতে জিডিপির সাড়ে ২৬ শতাংশ বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এখন তা কমিয়ে আনা হয়েছে বছরের জন্য জিডিপিতে বিনিয়োগের হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৪ দশমিক শতাংশ সাধারণত এই বিনিয়োগের প্রতি শতাংশের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতাংশ বাড়ে বলে ধরা হয়
আগামীর লক্ষ্যমাত্রা: এদিকে আগামী বাজেটে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে জন্য পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির খাতওয়ারি বিশ্লেষণ করে একটি সারসংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এতে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রপ্তানি, বিনিয়োগ, প্রবাসী-আয়, রাজস্ব খাত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি এসব খাতের আগামী কয়েক অর্থবছরের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে
পরিকল্পনা কমিশনের জিইডির তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার শতাংশ ধরা হয়েছে আর ২০১২-১৩ অর্থবছরে দশমিক শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সাড়ে শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে
চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরের শুরুতে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হলেও এখন তা বাড়ানো হয়েছে অব্যাহত পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বছর বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবমতে, গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির বার্ষিক গড় হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ
এদিকে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ছাড়া মূল্যস্ফীতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে শতাংশে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সাড়ে শতাংশে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে
প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ক্রমান্বয়ে বিনিয়োগ জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে আসন্ন অর্থবছরে বিনিয়োগ লক্ষ্য ধরা হয়েছে জিডিপির ২৮ দশমিক শতাংশ আর জিডিপির তুলনায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৯ দশমিক শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩১ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩২ দশমিক শতাংশ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে
চলতি বছর দুই হাজার ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে আর আগামী পাঁচ অর্থবছর পর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয় তিন হাজার ৮৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছাড়া ২০১১-১২ অর্থবছরে দুই হাজার ৫৭০ কোটি ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দুই হাজার ৯৪০ কোটি ডলার ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিন হাজার ৩৬০ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হবে
সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমদানি ব্যয়ও বাড়বে চলতি অর্থবছরে তিন হাজার ১০০ কোটি ডলার আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে হবে আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বার্ষিক আমদানি ব্যয় দাঁড়াবে পাঁচ হাজার ২৮০ কোটি টাকা আসন্ন ২০১১-১২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় তিন হাজার ৫৪০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে ছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছরে চার হাজার ৩০ কোটি ডলার ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চার হাজার ৬১০ কোটি ডলার আমদানি ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে
চলতি অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট এক হাজার ১৫০ কোটি ডলার দেশে পাঠাবেন বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে ২০১১-১২ অর্থবছরে এক হাজার ২৭০ কোটি ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক হাজার ৪২০ কোটি ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক হাজার ৫৯০ কোটি ডলার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক হাজার ৭৮০ কোটি ডলার প্রবাসী-আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে

Blog Archive