➤ কাদের মোল্লা যে যুদ্ধাপরাধী ছিলেন তার প্রমান পাকিস্তানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাতেকলমে দিয়ে দিলেন...এখনও যাদের সন্দেহ আছে তারা এবার মেনে নিন কাদের মোল্লা কী ছিলেন...Kader Mulla
'পুরনো ক্ষত উন্মোচিত না করে বাংলাদেশের সরকার দূরদর্শিতা, উদারতা এবং মহানুভবতা প্রদর্শন করলে তা মঙ্গলজনক হতো' বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান। গত ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া জানান এই পাক মন্ত্রী। পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ডন এক প্রতিবেদনে লিখেছে, মোল্লার মৃত্যুদণ্ডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, তার (কাদের মোল্লা) মৃত্যুতে প্রতিটি পাকিস্তানি অত্যন্ত মর্মাহত এবং সমব্যথী। ওই বিবৃতিতে নিসার আলী খান আরো বলেন, ১৯৭১ সালের ঘটনার ৪২ বছর পর মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দেওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও পরিতাপের বিষয় এবং কিছু ক্ষেত্রে একে বিচারিক খুন বলা যেতে পারে। 'নিঃসন্দেহে ১৯৭১-এ পাকিস্তানের প্রতি আনুগাত্য ও সংহতি প্রকাশ করায় এই জামায়াত নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে', মন্তব্য করেন চৌধুরী নিসার। 'বাংলাদেশের জন্মলগ্নে এবং শেষ সময় পর্যন্ত তিনি (মোল্লা) ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন', যোগ করেন মন্ত্রী। বিবৃতিতে নিসার বলেন, 'বৈশ্বিক আবহে সকল দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি রক্ষায় মুসলিম বিশ্বের সার্বজনীন সামাজিকতা ও প্রথা এবং শর্ত অনুযায়ী অতীতের যতো ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই উচিত'। 'কিন্তু এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার মাধ্যমে অতীতের একটি ক্ষতকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে' বলে মনে করেন নিসার। সেইসঙ্গে 'বাস্তবিক অর্থে এটা খু্বই আফসোসের বিষয়, যখন একটি দেশ যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে তখন যুদ্ধসংশ্লিষ্ট সব পক্ষই সহিংসতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে'। তাই দুই দেশের জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে পারস্পরিক সুসম্পর্ক রক্ষার লক্ষ্যে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধের নীতি গ্রহণ করাটাই সমীচীন বলে মতপ্রকাশ করেন মন্ত্রী। চৌধুরী নিসারের এ বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। তিনি বলেন, 'এটা পাকিস্তানি মন্ত্রীর ব্যক্তিগত মতামত। ১৯৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে কাদের মোল্লার শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। আদালত তাকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে দণ্ড দিয়েছেন এবং এখানে সরকারের কিছুই করার নেই। এটা আদালতের নিজস্ব বিষয়'। ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার পরদিন অর্থাৎ গতকাল শুক্রবার পাকিস্তান পার্লামেন্টে পাকিস্তানি জামাত-ই-ইসলামির দলনেতা শাহেবজাদা তারিকুল্লাহ দণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি নিন্দাপ্রস্তাব পাস ও পার্লামেন্ট মুলতবি করার বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করলে বেশ বিব্রত বোধ করে সরকার'। তবে এ ঘটনা নিয়ে নিসার খান বেশ শক্ত এই বিবৃতি দিয়েছেন। স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিকের কাছে আবেদন করে এই ফাঁসির ঘটনায় পার্লামেন্টে মতামত প্রকাশের জন্য আগামী সোমবার পর্যন্ত সময় নিয়েছেন আন্তঃপ্রাদেশিক সমন্বয়মন্ত্রী রিয়াজ হুসেইন পীরজাদা। কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক নিউজ ব্রিফিং অনুষ্ঠানে বলেন, 'যদিও অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো পাকিস্তানের নীতি নয়, তবুও আমরা দেখেছি যে, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের এ রায় নিয়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে'