,

অমানুষ হবার সহজ উপায়- Technology making humane inhumane

Saturday, October 19, 2013 Other
প্রযুক্তি মানবসমাজকে মানবিকতা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা প্রযুক্তিকে অমানবিক মনে করছে। মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর চিপ নির্মাতা ইন্টেল সম্প্রতি গ্রাহকদের ওপর ‘ইন্টেল ইনোভেশন ব্যারিয়ার’ শীর্ষক একটি জরিপ চালায়। জরিপে প্রযুক্তি সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের এ ধরনের মতামত উঠে আসে। খবর বিবিসির। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি করতে পারে না— এ ধরনের কার্যক্রমের তালিকা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। বায়োনিক ম্যান থেকে শুরু করে থ্রিডি প্রিন্টার সবই প্রযুক্তির আশীর্বাদ। জীবনকে আগের তুলনায় অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে প্রযুক্তি। মানুষের জীবনের বড় অনেক সিদ্ধান্তই প্রযুক্তি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। কিন্তু এ প্রযুক্তিই মানুষের মধ্যে মানবিক আচরণ হ্রাসের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা। তাদের মতে, প্রযুক্তি মানুষের মধ্যে অমানবিক আচরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর চিপ নির্মাতা ইন্টেলের সাম্প্রতিক এক জরিপে এ ধরনের তথ্য উঠে আসে। কোম্পানিটি ব্রাজিল, চীন, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ১২ হাজার প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ওপর ‘ইন্টেল ইনোভেশন ব্যারিয়ার’ শীর্ষক জরিপটি পরিচালনা করে। এতে তরুণরা প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেকটা নেতিবাচক মন্তব্য করলেও বয়স্ক গ্রাহকরা একে তাদের অন্যতম সহায় বলে মনে করছেন। এদিকে জরিপ অনুযায়ী তরুণরা আগামী সময়গুলোয় প্রযুক্তি বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন। তবে প্রযুক্তিই জীবনের সবকিছু নয় বলে মনে করছেন তারা। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬১ শতাংশ তরুণ মনে করেন, প্রযুক্তি মানুষের মধ্যে অমানবিক আচরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। এদিকে ৫৯ শতাংশ তরুণ মনে করেন, বর্তমানে সমাজব্যবস্থা প্রযুক্তির ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। নৃতত্ত্ববিদ ও ইন্টেল ল্যাবের মিথস্ক্রিয়া ও অভিজ্ঞতা গবেষণা বিভাগের পরিচালক ড. জিনিভাইবে বেল বলেন, তরুণদের বক্তব্য শুনলে প্রথমে মনে হবে তারা প্রযুক্তিবিরোধী। কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই অনেক জটিল। প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের মতামত একবারে অগ্রাহ্য করার মতো নয়। তবে বর্তমান প্রজন্ম যে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, সেটিও তারা স্বীকার করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম চাচ্ছে প্রযুক্তিতে তাদের আরো প্রাধান্য দেয়া হোক। এদিকে আমরাও প্রযুক্তিকে বোঝা না বানিয়ে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গে পরিণত করতে অবিরত কাজ করে যাচ্ছি।’ জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণদের এক-তৃতীয়াংশই (৩৬ শতাংশ) মনে করেন যে, প্রযুক্তিকে তাদের প্রয়োজন বোঝার জন্য আরো উন্নত হতে হবে। তাদের মতে, প্রযুক্তি ব্যবস্থা, সেবা ও যন্ত্রাংশকে এমনভাবে তৈরি করা উচিত, যাতে করে তারা সময় উপযোগীভাবে তাদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়। তরুণরা প্রযুক্তির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অসন্তুষ্ট হলেও তারা ভবিষ্যতে একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে আগ্রহী। এমনকি তারা মনে করেন, আগামী সময়গুলোয় প্রযুক্তি বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সক্ষম হবে। জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণদের ৫৭ শতাংশ মনে করেন, প্রযুক্তি আগামী সময়ে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ৫২ শতাংশ মনে করেন, প্রযুক্তি আগামী সময়ে যোগাযোগ খাতে ভূমিকা রাখবে ও ৪৯ শতাংশ মনে করেন, এটি আগামী সময়গুলোয় স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহারে তরুণদের তুলনায় বয়স্কদের আগ্রহ তুলনামূলক বেশি বলে জরিপের প্রতিবেদনে জানানো হয়। বিশ্বজুড়ে ৪৫ বছরোর্ধ্ব নারীরা মনে করে, বর্তমানে মানুষ প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করছে না। তাদের মতে, জীবনকে উন্নত করতে প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বৃদ্ধি করা উচিত। বয়স্করা প্রযুক্তিকে তাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন। তাদের মতে, প্রযুক্তিই এখন তাদের অন্যতম সহায়। প্রযুক্তি দিয়ে বয়োবৃদ্ধরা এখন তাদের যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হচ্ছেন বলে জানান। তাদের মতে, প্রযুক্তি মানুষকে আরো বেশি মানবিক করে তুলছে। এর মাধ্যমে বয়স্করা তাদের আপনজনের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারছেন। ফলে সামাজিক যোগযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেকোনো সম্পর্কের বাঁধন আরো দৃঢ় হয় বলেও জরিপে অংশগ্রহণকারী বয়স্ক গ্রাহকরা মন্তব্য করেছেন। উদীয়মান বাজারগুলোয় প্রযুক্তি প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতি বয়স্কদের আগ্রহ একই হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা যে পরিমাণে প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, তাকে পর্যাপ্ত বলে মেনে নিতে নারাজ ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বের গ্রাহকরা। চীনের এ বয়সী ৭০ শতাংশ নারীই মনে করেন, প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে না। চীন ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার অধিকাংশ বয়স্ক গ্রাহক মনে করে, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করবে। আগামীতে প্রযুক্তির পর্যাপ্ত ব্যবহার ও প্রয়োগ করা হলে শিক্ষা খাতে উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে ৬৬ শতাংশ, যোগাযোগ খাতে ৫৮, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ৫৭ ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে ৫৬ শতাংশ। ব্যক্তি উন্নয়নে বয়স্করা ব্যক্তিগোপনীয়তা বিসর্জন দিতেও রাজি রয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৬ শতাংশ বয়স্ক গ্রাহক বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহারে আগ্রহী, যা তাদের বিভিন্ন অভ্যাস নিরূপণ করবে। ৭৭ শতাংশ স্মার্ট শৌচাগার ব্যবহারে আগ্রহী। তারা মনে করেন, স্মার্ট শৌচাগার তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন জরুরি তথ্য সরবরাহ করবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তিকে সবসময় সব বয়সী গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হয়। তরুণদের প্রযুক্তি খাতে আগ্রহী করতে ও বয়স্কদের ধরে রাখতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো অবিরত কাজ করে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা। - See more at: http://bonikbarta.com/telecom-and-technology/2013/10/19/19432#sthash.MWezAejn.dpuf

Blog Archive