বড়লোক হবার সঠিক পদ্ধতিগুলো

Saturday, October 19, 2013 Other
অর্থই যেনো অনর্থের মূল কারণ না হয় সেজন্য টাকা-পয়সা সঠিকভাবে ব্যবহারের কিছু পদ্ধতি রয়েছে। জীবনে টাকা-পয়সার সর্বাধিক সুষ্ঠু ব্যবহার কী হতে পারে সে সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। উন্নত দেশগুলোতে অর্থের যথার্থ ব্যবহারের শিক্ষাদান শিশুকাল থেকেই শুরু করা হয়। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত এ পদ্ধতি অনুসরণ করা। নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার এমনই একটি বই 'গেট আ ফিনানসিয়াল লাইফ'। এর লেখক বেথ কবলাইনার সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। তাছাড়া ইউএস প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তিনি। তাঁর অপর একটি বই 'মানি অ্যাজ ইউ গ্রো' থেকে আপনারা সন্তানের বয়েসের ভিত্তিতে অর্থের ব্যবহার সংক্রান্ত নানা বাস্তবমুখী উপদেশ পাবেন। অর্থের ব্যবহার সংক্রান্ত শিক্ষা নানা বয়েসে ভিন্নমুখী হয়ে থাকে। আপনাদের জন্য গবেষকদের কিছু শিক্ষা এখানে তুলে ধরা হল। আশা করি জীবনের অতিব জরুরি এই টাকা-পয়সার সঠিক ব্যবহার সম্বন্ধে আপনার সন্তানকে সচেতন করতে সাহায্য করবে এই প্রতিবেদন। কবলাইনারের মতে অর্থ জমানো এবং খরচের শিক্ষা মাত্র তিন বছর বয়েস থেকেই শিশুরা পেতে পারে। ব্রিটেনের মানি অ্যাডভাইস সার্ভিসের তত্ত্বাবধানে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় দেখা গেছে, সাত বছর বয়েস থেকেই মানুষের অর্থ সংক্রান্ত যাবতীয় অভ্যাস গড়ে উঠতে থাকে। কাজেই যতো দ্রুত আপনার সন্তান এসব শিক্ষা পাবে, সে ততো দ্রুত অর্থের ফলপ্রসূ ব্যবহার ঘটাতে পারদর্শী হয়ে উঠবে। বয়স যখন ৩ থেকে ৫ বছর: এ বয়েসী শিশুদের মূল শিক্ষাটি হল- 'তুমি যা কিনতে চাও তার জন্যে তোমাকে অপেক্ষা করতে হতে পারে'। কবলাইনারের মতে, এ শিক্ষাটি সব বয়েসী মানুষের জন্যই বাস্তবতা। শিশুদের বোঝাতে হবে যে, সে যা চায় তার জন্য কিছু সময় ব্যয় করতে হবে। কারণ প্রয়োজনীয় টাকা তার জমাতে হবে। এর মাধ্যমে অপেক্ষা করে পরিতৃপ্তি লাভের মতো বড় একটি গুণ শিশুরা অর্জন করে। আবার তারা এ শিক্ষাটিও পায় যে, কোনো কিছু এতো দ্রুত শুরু করতে নেই। আপনার করণীয়: ১. প্রথম কাজটি হবে তাকে বোঝানো। শিশুটি কোনো কিছু চাইলে তাকে সুন্দরভাবে বোঝান যে, জিনিসটি পেতে হলে তাকে টাকা জমাতে হবে এবং এ জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ২. আপনার শিশুকে টাকা জমানোর জন্য তিনটি মাটির ব্যাংক কিনে দিন। একটিতে লিখা থাকবে 'জমা', আরেকটিতে 'খরচ' এবং অন্যটিতে 'অংশগ্রহণ'। তাকে বোঝান, বড় কিছু কিনতে চাইলে জমার ব্যাংকটিতে টাকা রাখতে হবে। আর সব সময় ছোট কেনাকাটা যেমন- চকোলেট বা জুস ইত্যাদি কেনার জন্য খরচের ব্যাংকে টাকা থাকবে। আর বন্ধুদের সাথে কিছু কিনতে হলে বা সবাই মিলে একসাথে কিছু করতে অংশগ্রহণের ব্যাংকে টাকা রাখতে হবে। ৩. এমন কিছু সে দাবি করতে পারে যা কেনার সাধ্য তার নেই বা আপনারও সে পরিমাণ অর্থের যোগান দেয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে তা কিনতে হলে তাকে ওই পরিমাণ অর্থ জমাতে হবে। এজন্য হয়তো অনেক সময় লেগে যাবে। তার সাথে কথা বলে আপনারা ঠিক করুন, অন্য কিছু কেনা যায় কিনা। কারণ সময়ক্ষেপণের বিষয়টি বেশি লম্বা করাটা উচিত নয়। নিজের জমানো টাকায় কেনা সম্ভব নয় দেখলে তার নিজেরও মত পরিবর্তন হতে পারে। আর জমানো সম্ভব হলে আপনার সন্তানের পরিতৃপ্তি হবে দেখার মতো। বয়স যখন ৬ থেকে ১০ বছর: এ বয়েসীদের মূল শিক্ষাটি হল- 'তোমাকে ঠিক করতে হবে যে, কিভাবে টাকাটা খরচ করতে চাও'। সন্তানকে বোঝান, টাকার পরিমাণ সীমিত। কাজেই এই টাকা খরচ করতে হবে চিন্তা-ভাবনা করে। কারণ একবার খরচ করে ফেললে পরবর্তি খরচের জন্য টাকা থাকবে না। এ বয়েসীদের ওই তিনটি ব্যাংকে টাকা জমানোর সাথে আপনাকে পরামর্শকের ভূমিকায় থাকতে হবে বলে মনে করেন কবলাইনার। এ সময় জমা, খরচ এবং অংশীদার ব্যাংকে টাকা জমানোর জন্য সন্তানের নির্দিষ্ট লক্ষ্য জুড়ে দিতে হবে। এসব নিয়ে আপনি তার সাথে আলোচনা করবেন। তাছাড়া এখন কিছুটা বড় ধরনের অর্থ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে তাকে জড়াতে হবে। আপনার করণীয়: ১. কিছু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে তার সাথে কথা বলুন। যেমন- জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের একটি জুস কিনতে গেলে ৫ টাকা বেশি খরচ হয়। কিন্তু একই স্বাদের অন্য জুস কিনলে এ টাকাটা বেঁচে যাবে। কাজেই কোনটা করলে ভাল হবে? এ প্রশ্নটি নিয়ে আলাপ করুন। অথবা প্রতিদিন কিনতে হচ্ছে এমন একটি জিনিস একটি করে না কিনে একবারে বেশি পরিমাণে কিনলে ক্রয়মূল্য কম পড়বে- এমন হিসাব সম্পর্কে তাকে ধারণা দিন। ২. মার্কেটে গেলে তার হাতে অল্প কিছু টাকা ধরিয়ে দিন। ধরুন ৫০ টাকা দিয়ে তাকে বলুন তার যা খেতে ইচ্ছা করছে তা এই টাকার মধ্যে কিনতে। এতে করে সে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সিদ্ধান্ত নিতে অভ্যস্ত হবে। ৩. শপিংয়ে গেলে কেনাকাটার ফাঁকে নানা প্রশ্ন করে তার জবাবটি শুনুন। যেমন- এ জিনিসটি কি আসলেও কেনার প্রয়োজন আছে? এটা না কিনে ধার করা যায় না? অন্য কোথাও কি এটা কম দামে পাওয়া যেতে পারে? ইত্যাদি প্রশ্ন তার মধ্যে নানামুখী উপায় নিয়ে চিন্তা করতে শেখাবে। বয়স যখন ১১ থেকে ১৩: মূল শিক্ষাটি হল- 'তুমি যতো দ্রুত টাকা জমাতে পারবে, তোমার বিভিন্ন চাহিদা মেটানোর জন্য ততো দ্রুত টাকা তৈরি থাকবে'। এ বয়েসে তাকে টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সম্পর্কে জ্ঞান দিন। তাকে কমপাউন্ড ইন্টারেস্ট নিয়ে বোঝান। তার এখনকার জমানো এবং আগের জমানো একসাথে হয়ে কি ধরনের লাভ হচ্ছে তার ধারণা দিন। আপনার করণীয়: ১. কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট সম্পর্কে বোঝাতে গাণিতিক উদাহরণ টানুন। যেমন- যদি তুমি ১৫ বছর বয়েস থেকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা জমাও, তাহলে তোমার ৫০ বছর বয়েসে মোট ৪২ হাজার হবে। আর যদি এ টাকা তুমি ৩০ বছর বয়েস থেকে জমানো শুরু করো তাহলে মাত্র ২৪ হাজার টাকা জমবে। ২. ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট এবং এর থেকে বাড়তি আয়ের বিষয়টি তার ধারণায় দিন। তবে সুদ সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার বিষয়েও তাকে অবগত করা উচিত। ৩. কবলাইনারের মতে, এ বয়েসে ছেলে-মেয়েরা পছন্দের জিনিস কিনতে চায়। এ ক্ষেত্রে তাদের বড় কিছু করতে ছোট কিছু ত্যাগ করার শিক্ষা দিন। যেমন- সে যদি স্কুল থেকে বের হয়ে প্রতিদিন একটি করে চিপস খায়, তবে তাকে হিসেব দিয়ে বুঝিয়ে দিন যে এই চিটসের টাকা জমিয়ে সে কিছু দিন পর বড় একটি জিনিস কিনতে পারবে। বয়স যখন ১৪ থেকে ১৮ বছর: এ বয়েসের মূল শিক্ষাটি হল- 'কোন খাতে খরচ করলে তার বিপরীতে কী আসতে পারে'। ধরুন সে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাচ্ছে। তার পছন্দের কোনো বিষয়ে পড়ার খরচ নিয়ে আলোচনা করুন। তাকে বোঝান, আগ্রহের সাথে তাল মিলিয়ে কোন বিষয় নিয়ে পড়লে কত টাকা খরচ হবে এবং ওই বিষয় নিয়ে পড়ে সে ভবিষ্যতে কতো টাকা উপার্জন করতে পারবে। তবে তার ইচ্ছাকে নিরুৎসাহিত করবেন না। এ সময় তাকে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজের উৎসাহ দিন। সেখান থেকে তার উপার্জন হবে। এর সাহায্যে সে তার লিখা-পড়ার জন্যে কিছু করতে পারবে। তবে শুধুমাত্র পড়াশোনার ক্ষতি না করে এসব কাজ চালানো যেতে পারে। বয়স যখন ১৮ বছরের বেশি: মূল শিক্ষাটি এমন- 'তোমার একটি ক্রেডিট কার্ড থাকতে পারে যদি মাস শেষে ঠিকমতো টাকা জমা দিতে পারো'। পার্টটাইম চাকরি থেকে উপার্জিত টাকা ব্যবহারে তার কিছু ভাল অভ্যাস গড়ে উঠবে। তাছাড়া এখন তার একটি ভাল চাকরি থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার সাথে নিজের টাকার সদ্ব্যবহার করতে শিখবে সে। এর মাধ্যমে জরুরি অবস্থায় টাকার প্রয়োজন যেমন মিটবে, তেমনি এই উৎসকে সুষ্ঠু উপায়ে ধরে রাখার অভ্যাস তাকে আরো বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল করে তুলবে।

Blog Archive