শেয়ারবাজার :::: গ্রামীণের দুই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক ও ট্রাস্টি কমিটি তাদের বোনাস শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব সম্পর্কে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে আইনি ব্যাখ্যা দিয়েছে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাঈদ ও ট্রাস্টি কমিটির চেয়ারম্যান আবদু দায়ান কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাখ্যা দেন। এসইসি গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই কর্মকর্তার দেওয়া ব্যাখ্যায় সন্তোষ প্রকাশ করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে বোনাস শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি এসইসি।
এ বিষয়ে এইমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাঈদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বোনাস ইস্যুর বিষয়ে এসইসির পক্ষ থেকে আমাদের কাছে বোনাস ইস্যুর বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এ-সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়েছি।'
গত ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত ট্রাস্টি কমিটির সভায় গ্রামীণ-১ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য ৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ও ২৫ শতাংশ নগদ এবং গ্রামীণ-২ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস ও ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। তবে বোনাস ঘোষণার কারণে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এড়াতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ২৫ আগস্ট থেকে শেয়ারবাজারে দুই ফান্ডের ইউনিট লেনদেন বন্ধ রাখা হয়। চলতি বছরের ১৪ মার্চ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এসইসি। তাতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা, ২০০১ সংশোধন করা হয়। সংশোধিত বিধিমালায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বোনাস ঘোষণার পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, 'ইউনিট হোল্ডারদের জন্য যেই ক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে ভিন্ন প্রকৃতির লভ্যাংশের প্রস্তাবে কিংবা কোনো প্রকার এনটাইটেলমেন্টের ব্যাপারে (যেসব মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বা স্কিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) কমিশনের পূর্বানুমোদন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেই ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ডের উলি্লখিত সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় একই সঙ্গে এই মর্মে প্রকাশ বা প্রচার করতে হবে যে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর হবে, এবং এর অনুকূলে কমিশনের অনুমোদন পাওয়া গেলে তা সঙ্গে সঙ্গেই পুনরায় প্রকাশ বা প্রচার করা হবে।' বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, 'কমিশনের ওইরূপ অনুমোদন পাওয়া না গেলে তাও সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশ বা প্রচার করতে হবে এবং সেই ক্ষেত্রে কমিশনের ওইরূপ সিদ্ধান্ত পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ড, সংশ্লিষ্ট বিধিমালা মোতাবেক, বিশেষ করে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ব্যাপারে পুনরায় সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক প্রয়োজনীয় ঘোষণা জারি ও প্রকাশ বা প্রচার করবে।'
এই বিধিমালা অনুসরণ করে গত ২৪ আগস্ট গ্রামীণ-১ ও গ্রামীণ-২ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি কমিটি নগদ লভ্যাংশের সঙ্গে বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ফান্ড ম্যানেজারের ওয়েবসাইট এবং পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে এসইসির অনুমোদনসাপেক্ষে বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের রাইট ও বোনাস দেওয়ার বিষয়ে গত বছর হাইকোর্টে একটি রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে বলা হয়, মিউচ্যুয়াল ফান্ডসংক্রান্ত আইন সংশোধনের আগে গঠিত ফান্ডগুলোর ক্ষেত্রে এই সংশোধনী কার্যকর হবে না। ফলে ২০০৮ সালের জুন মাসের আগে গঠিত ফান্ডগুলো বোনাস ও রাইট শেয়ার দিতে পারবে। তবে কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ডের রাইট ও বোনাস শেয়ার ঘোষণার আগে অবশ্যই এসইসির অনুমোদন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়া বা না দেওয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার এসইসির।
হাইকোর্টের ওই রায়ের আলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড স্কিম রাইট বা বোনাস শেয়ার প্রস্তাব করার সুযোগ পাবে। ২০০৮ সালের জুন মাসের আগে অনুমোদন পাওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে গ্রামীণ মিউচ্যুয়াল ফান্ড-১ এবং গ্রামীণ মিউচ্যুয়াল ফান্ড-২ অন্যতম।