শেয়ারবাজার :::: পুঁজিবাজারের শেয়ার রক্ষণাবেক্ষণকারী ও তথ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) মালিকানার কর্তৃক যাচ্ছে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে। প্রতিষ্ঠানটির আরও সাড়ে ৭ শতাংশ কেনার মাধ্যমে যৌথভাবে কর্তৃত্ব নিতে যাচ্ছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। এ জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে ৭২ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) যৌথভাবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মালিকানায় থাকা সিডিবিএলের সাড়ে ৭ শতাংশ বা এক কোটি ২০ লাখ শেয়ার কিনে নিচ্ছে। এরই মধ্যে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, শেয়ার ক্রয় চুক্তিটি সম্পাদিত হলে কোম্পানিটির মালিকানার সিংহভাগ দুই স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে চলে আসবে। বর্তমানে ডিএসই ও সিএসইর কাছে ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ করে মোট ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ বা ৯৪ লাখ ৭২ হাজার শেয়ার রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে আরও সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ার যুক্ত হলে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানার অংশ দাঁড়াবে ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। এত দিন সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ার নিয়ে এককভাবে মালিকানার শীর্ষে ছিল এডিবি।
সিডিবিএলের বর্তমান শেয়ারসংখ্যা ১৬ কোটি। এর মধ্য থেকে নিজেদের অংশ বিক্রি করে মালিকানা থেকে সরে দাঁড়াতে চায় এডিবি।
জানা গেছে, ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার বিক্রির জন্য দাম ধরা হয়েছে ৬০ টাকা। কারণ, সিডিবিএলকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার ৫০ টাকা প্রিমিয়াম যোগ করে বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছিল ৬০ টাকা। আর সেই দর ধরেই ডিএসই ও সিএইসির কাছে সিডিবিএলের শেয়ারের অংশ বিক্রি করে আন্তর্জাতিক ঋণ জোগান দাতা সংস্থা এডিবি পাবে ৭২ কোটি টাকা।
সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এইচ সামাদ জানান, শুরুতে প্রতিষ্ঠানটিতে এডিবি তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। এর বিনিময়ে এডিবি কোম্পানিটির সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পায়।
গত কয়েক বছরের লভ্যাংশ যোগ হয়ে এই শেয়ারসংখ্যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২০ লাখ শেয়ারে। সেই হিসাবে তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১১ বছরে এডিবির মুনাফা ৬৯ কোটি টাকা।
২০০০ সালে দেশের সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বিদেশি ব্যাংক, ডিএসই ও সিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংক, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও এডিবির অর্থায়নে সিডিবিএল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে। বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব ও শেয়ার রক্ষণাবেক্ষণ, শেয়ারবাজারের লেনদেনসহ আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয় সিডিবিএল।
এদিকে, এডিবির পক্ষে শেয়ার বিক্রির মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছেই আমরা আলাদাভাবে ৬০ লাখ করে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এখনো পর্যন্ত সংস্থা দুটি আমাদের লিখিত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তাদের সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে চুক্তি সম্পাদন করা হবে।’
যোগাযোগ করা হলে সিএসইর সভাপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা প্রস্তাবিত ৬০ লাখ শেয়ার কেনার ব্যাপারে পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমনকি আমরা এডিবির পুরো অংশই কিনতে রাজি আছি।’
জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায়ও এডিবির কাছ থেকে সিডিবিএলের শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি এডিবির অংশীদারির ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ শেয়ার কেনার ব্যাপারে আগ্রহী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক পরিচালক প্রথম আলোকে জানান, ‘সিডিবিএলের আয়ের বড় একটি অংশই আমাদের কাছ থেকে যায়। সেহেতু আমরা এটির বাড়তি মালিকানা চাইতেই পারি।’
সম্প্রতি সিডিবিএলকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে আবেদনও করা হয়। যেহেতু কোম্পানিটি শেয়ারবাজারের পরিকাঠামোগত একটি সংস্থা, তাই এটির শেয়ার ছাড়ার আবেদন নাকচ করে দেয় এসইসি।
শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব সংরক্ষণ, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার পরিসংখ্যান, বিও হিসাবের মাধ্যমে প্রতিদিনের শেয়ার কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে লেনদেন সম্পন্নসহ শেয়ারবাজারের তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করে সিডিবিএল। এই প্রতিষ্ঠানটি চালুর মধ্য দিয়ে দেশের শেয়ারবাজারে কাগুজে শেয়ারের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক শেয়ার লেনদেনব্যবস্থা শুরু হয়।