শেয়ারবাজার :::: ১৮ বছর আগের ঘটনা। ১৯৯৩ সালের ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক জনসভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তাই অবিলম্বে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। অন্যথায় সারা দেশে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
একই দিন জাতীয় সংসদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘জনগণ ভোট দিয়েছে সংসদে এসে কথা বলার জন্য। হরতাল, ভাঙচুর করে দেশের উন্নয়ন হবে না। যা বলার সংসদে এসে বলুন। আসুন, সংসদে আলোচনা করে সব সমস্যার সমাধান করি।’
১৯৯৩ সালের ৭ ডিসেম্বর ভোরের কাগজ-এর প্রথম পাতায় এ সংবাদ ছাপা হয়েছিল। ১৮ বছর আগে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবিতে হরতাল-অবরোধ করেছে। বিএনপি সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে আওয়ামী লীগকে সংসদে এসে সব বিষয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
আর এখন বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে। আওয়ামী লীগ সংসদে এসে আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে।
১৯৯৩ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সামনে নিয়ে আসেন। সারা দেশে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৯৪ সালের ১০ ও ২৬ এপ্রিল এই দাবিতে হরতাল ডাকে আওয়ামী লীগ। এরপর সচিবালয় ঘেরাও, অবরোধ, মশাল মিছিল, পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে দলটি। বিএনপি বিরোধী দলের এই দাবিকে পুরোপুরি অযৌক্তিক বলতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ’৯৪ সালের ৩ জুন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।
ওই সময়ের পত্রপত্রিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ’৯৪ সালের ২৭ জুন সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেতার সম্মেলনকক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী পাঁচটি বিরোধী দল এ সময় উপস্থিত ছিল।
এ রূপরেখার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আবদুস সালাম তালুকদার সংসদে বলেন, অসাংবিধানিক কোনো দাবি মেনে নেওয়া যায় না। নিরপেক্ষ ব্যক্তির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়া সম্পর্কে খালেদা জিয়া সে সময় বলেছিলেন, ‘পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নন।’
১৯৯৪ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে এক সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং হতে হবে। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান পরিপন্থী। ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া হরতাল ও নৈরাজ্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সরকার পরিচালিত আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করা কারও জন্যই শোভন নয়।’ জাতীয় সংসদকে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সংসদেই সব বিষয়ের নিষ্পত্তি সম্ভব।’ (ভোরের কাগজ, ৪ অক্টোবর ১৯৯৪)
রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে কমনওয়েলথের মহাসচিব এমেকা এনিয়াওকুর বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেন ’৯৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকায় আসেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। একপর্যায়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বলেন। এই সরকারে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের পাঁচজন এবং বিরোধী দলের পাঁচজন মন্ত্রী থাকার প্রস্তাব করেন। আওয়ামী লীগ এই দাবি নাকচ করে দেয়। ’৯৪-এর ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চম সংসদের ১৪৭ জন বিরোধীদলীয় সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। এরপর শুরু হয় টানা হরতাল-আন্দোলন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মেনে ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন করে বিএনপি। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলন করতে থাকে। ’৯৬-এর ৯ মার্চ থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের হরতাল ডাকে আওয়ামী লীগ। ১০ মার্চ শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন।
আওয়ামী লীগের আন্দোলন সত্ত্বেও খালেদা জিয়া ২৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে নতুন সংসদ অধিবেশন শুরু করেন। ’৯৬ সালের ২১ মার্চ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। এরপর ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ওই অধিবেশনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনা হয়। সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাস হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু হওয়ার পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৯৪, ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মোট ৯৬ দিন হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পাশাপাশি একটি লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা, দুটি ৭২ ঘণ্টা এবং পাঁচটি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়। তবে ’৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ হরতাল না করার ঘোষণা দিয়েছিল।
১৯৯১ এবং ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে হরতালের বিপক্ষে কথা বলতে থাকেন খালেদা জিয়া। হরতাল করে দেশকে ধ্বংস না করার জন্যও তিনি বিরোধী দলসহ সবাইকে আহ্বান জানান। সংসদে এসে আলোচনা করে সব সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। কিন্তু এখন সংসদে না গিয়ে হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি মোজাফ্ফর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সবকিছুরই যেন পুনরাবৃত্তি চলছে। যখনই যারা ক্ষমতায় গেছে, তারাই প্রশাসনকে কাছে টেনে তাদের পক্ষে সবকিছু করার চেষ্টা করেছে। এটা কাম্য নয়। আর ’৯৬ সালে বিএনপি অনেক দুর্বল অবস্থায় ছিল বলে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সে অবস্থা নেই যে তারা দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে।
বর্তমান অবস্থায় করণীয় কী জানতে চাইলে মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে সব সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত সংসদে। এটাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কিন্তু সংসদের যে পরিবেশ, সেখানে যেভাবে বিএনপি নেতাদের গিবত করা হয়, তাতে দুই দল মিলে আলোচনা করার কোনো পরিবেশ নেই। একমাত্র সুশীল সমাজই পারে এ অবস্থায় ভূমিকা রাখতে। কিন্তু সেখানেও বিভক্তি। সুশীলরা আনুগত্য দেখাতেই ব্যস্ত। তার পরও যদি শিক্ষক, আইনজীবী সাধারণ মানুষ—সবাই মিলে দুই দলের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করাতে পারে এবং দুই দলকে আলোচনায় বসাতে পারে, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে।
একই দিন জাতীয় সংসদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘জনগণ ভোট দিয়েছে সংসদে এসে কথা বলার জন্য। হরতাল, ভাঙচুর করে দেশের উন্নয়ন হবে না। যা বলার সংসদে এসে বলুন। আসুন, সংসদে আলোচনা করে সব সমস্যার সমাধান করি।’
১৯৯৩ সালের ৭ ডিসেম্বর ভোরের কাগজ-এর প্রথম পাতায় এ সংবাদ ছাপা হয়েছিল। ১৮ বছর আগে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবিতে হরতাল-অবরোধ করেছে। বিএনপি সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে আওয়ামী লীগকে সংসদে এসে সব বিষয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
আর এখন বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে। আওয়ামী লীগ সংসদে এসে আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে।
১৯৯৩ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সামনে নিয়ে আসেন। সারা দেশে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৯৪ সালের ১০ ও ২৬ এপ্রিল এই দাবিতে হরতাল ডাকে আওয়ামী লীগ। এরপর সচিবালয় ঘেরাও, অবরোধ, মশাল মিছিল, পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে দলটি। বিএনপি বিরোধী দলের এই দাবিকে পুরোপুরি অযৌক্তিক বলতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ’৯৪ সালের ৩ জুন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।
ওই সময়ের পত্রপত্রিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ’৯৪ সালের ২৭ জুন সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেতার সম্মেলনকক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী পাঁচটি বিরোধী দল এ সময় উপস্থিত ছিল।
এ রূপরেখার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আবদুস সালাম তালুকদার সংসদে বলেন, অসাংবিধানিক কোনো দাবি মেনে নেওয়া যায় না। নিরপেক্ষ ব্যক্তির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়া সম্পর্কে খালেদা জিয়া সে সময় বলেছিলেন, ‘পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নন।’
১৯৯৪ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে এক সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং হতে হবে। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান পরিপন্থী। ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া হরতাল ও নৈরাজ্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সরকার পরিচালিত আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করা কারও জন্যই শোভন নয়।’ জাতীয় সংসদকে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সংসদেই সব বিষয়ের নিষ্পত্তি সম্ভব।’ (ভোরের কাগজ, ৪ অক্টোবর ১৯৯৪)
রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে কমনওয়েলথের মহাসচিব এমেকা এনিয়াওকুর বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেন ’৯৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকায় আসেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। একপর্যায়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বলেন। এই সরকারে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের পাঁচজন এবং বিরোধী দলের পাঁচজন মন্ত্রী থাকার প্রস্তাব করেন। আওয়ামী লীগ এই দাবি নাকচ করে দেয়। ’৯৪-এর ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চম সংসদের ১৪৭ জন বিরোধীদলীয় সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। এরপর শুরু হয় টানা হরতাল-আন্দোলন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মেনে ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন করে বিএনপি। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলন করতে থাকে। ’৯৬-এর ৯ মার্চ থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের হরতাল ডাকে আওয়ামী লীগ। ১০ মার্চ শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন।
আওয়ামী লীগের আন্দোলন সত্ত্বেও খালেদা জিয়া ২৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে নতুন সংসদ অধিবেশন শুরু করেন। ’৯৬ সালের ২১ মার্চ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। এরপর ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ওই অধিবেশনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনা হয়। সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাস হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু হওয়ার পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৯৪, ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মোট ৯৬ দিন হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পাশাপাশি একটি লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা, দুটি ৭২ ঘণ্টা এবং পাঁচটি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়। তবে ’৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ হরতাল না করার ঘোষণা দিয়েছিল।
১৯৯১ এবং ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে হরতালের বিপক্ষে কথা বলতে থাকেন খালেদা জিয়া। হরতাল করে দেশকে ধ্বংস না করার জন্যও তিনি বিরোধী দলসহ সবাইকে আহ্বান জানান। সংসদে এসে আলোচনা করে সব সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। কিন্তু এখন সংসদে না গিয়ে হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি মোজাফ্ফর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সবকিছুরই যেন পুনরাবৃত্তি চলছে। যখনই যারা ক্ষমতায় গেছে, তারাই প্রশাসনকে কাছে টেনে তাদের পক্ষে সবকিছু করার চেষ্টা করেছে। এটা কাম্য নয়। আর ’৯৬ সালে বিএনপি অনেক দুর্বল অবস্থায় ছিল বলে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সে অবস্থা নেই যে তারা দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে।
বর্তমান অবস্থায় করণীয় কী জানতে চাইলে মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে সব সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত সংসদে। এটাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কিন্তু সংসদের যে পরিবেশ, সেখানে যেভাবে বিএনপি নেতাদের গিবত করা হয়, তাতে দুই দল মিলে আলোচনা করার কোনো পরিবেশ নেই। একমাত্র সুশীল সমাজই পারে এ অবস্থায় ভূমিকা রাখতে। কিন্তু সেখানেও বিভক্তি। সুশীলরা আনুগত্য দেখাতেই ব্যস্ত। তার পরও যদি শিক্ষক, আইনজীবী সাধারণ মানুষ—সবাই মিলে দুই দলের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করাতে পারে এবং দুই দলকে আলোচনায় বসাতে পারে, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে।