সরকারের অবস্থান- Politics-Election-Kader Mulla

Saturday, December 14, 2013 Other
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ জ্যেষ্ঠ প্রতিমন্ত্রী সাইয়েদা ওয়ার্সিনির্বাচনের তফসিলে পরিবর্তন না আনা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে কাদের মোল্লার ফাঁসির বিষয়ে সরকারের অবস্থান জোরালোভাবে যুক্তরাজ্যকে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সফররত ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিমন্ত্রী সাইয়েদা ওয়ার্সির কাছে সরকারের এ মনোভাব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল সাইয়েদা ওয়ার্সি এক দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। এ সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন। জানা গেছে, গতকাল সকালে সাইয়েদা ওয়ার্সি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা করেন। এর মধ্যে শেষ ২০ মিনিট তাঁরা দুজন আলোচনা করেন একান্তে। তাঁদের প্রথম দফা আলোচনায় মূল প্রসঙ্গ ছিল বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি। ফলে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পেছানোর সুযোগ আছে কি না জানতে চান সাইয়েদা ওয়ার্সি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেন, নির্বাচনের তফসিল পেছানোর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের তফসিল পেছানো হলেই যে বিএনপি আসবে এর নিশ্চয়তা কোথায়! দুই দেশের কূটনীতিকেরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় এরপর আসে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের প্রসঙ্গটি। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো নীতিগতভাবে ফাঁসির বিরোধী বলে এ বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ সময় শেখ হাসিনা খুব স্পষ্ট করেই বলেন, একজন অপরাধীর পক্ষে ‘বিভিন্ন দেশ ও জোটের সাফাই’ তাকে বিস্মিত করে। কারণ এসব দেশ ও জোট একজন মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির জন্য ফোন করছে ও চিঠি লিখছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, রাজপথে যখন নিরপরাধ মানুষ আগুনে পুড়ে নির্মমভাবে প্রাণ হারায়, লোকজনের ওপর বোমা ছুড়ে মারা হয়, ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় তখন তাদের মানবাধিকারের প্রশ্নটি কতটা জোরালোভাবে তোলা হয়। জানা যায়, ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যেসব উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী সেসব বিষয়ে বেশ জোরের সঙ্গেই তাঁর অবস্থান তুলে ধরেছেন।  এদিকে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সাইয়েদা ওয়ার্সি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে শুক্রবার অনুষ্ঠেয় সংলাপ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছানোর শেষ সুযোগগুলোর অন্যতম।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার উল্লেখ করে ওয়ার্সি বলেন, দুই পক্ষই তাঁকে সংলাপে বসার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। দুই নেত্রীই ছাড় দিতে চান বলে তাঁকে জানিয়েছেন।  প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিমন্ত্রী সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না। আমরা একটি টেকসই নির্বাচন দেখতে চাই, যেখানে বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।’  ওয়ার্সি বলেন, কী সংখ্যক ভোটার ভোট কেন্দ্রে গেলেন, কোনোরকম সহিংসতা ছাড়া ভোট হয়েছে কি না, ভোটাররা অবাধে ভোট দিয়েছেন কি না, এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।  কাদের মোল্লার ফাঁসির ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের উদ্বেগের প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৪২ বছর আগে যেসব নৃশংসতা হয়েছে তার বিচার হওয়া উচিত। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যেকোনো পরিস্থিতিতেই নীতিগতভাবে ফাঁসির বিরুদ্ধে। তবে বিচারহীনতার সংস্কৃতির পক্ষে নয়।  বাংলাদেশে চলমান সহিংসতার বিরোধিতা করে সাইয়েদা ওয়ার্সি বলেন, সব দলকেই যেকোনো ধরনের উসকানি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যে মাত্রায় সহিংসতা চলছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাজনৈতিক নেতাদের একটি সত্যিকার ও ইতিবাচক সংলাপে অংশ নিতে হবে। সংলাপের মধ্য দিয়ে সহিংসতার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে। কারণ সহিংসতা শুধু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নয়, দেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবিকাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

Blog Archive