ভারতে বাড়ছে বাংলাদেশি নারী ও শিশু পাচারের সংখ্যা। পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্ত ছাড়া ত্রিপুরা-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়েও প্রচুর সংখ্যক পাচার হয়ে আসছে বাংলাদেশিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ছয় মাসে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে অন্তত ২৫ জন বাংলাদেশি নারী ও শিশু উদ্ধার করেছেন ভারতের নিরাপত্তা রক্ষীরা।
যদিও গোপন সূত্রে আরো বেশি সংখ্যক ভারতে প্রবেশের খবর থাকলেও গোয়েন্দারা খবর পেলেও বিক্রি হওয়া ওইসব বাংলাদেশি নারী ও শিশুকে আটক কিংবা উদ্ধার করতে পারেননি। তেমনই সম্ভব হয়নি আন্তর্জাতিক নারী ও শিশু পাচার চক্রের কোনো বড় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা।
মুম্বাই, দিল্লি ও ব্যাঙ্গালুরুতে কাজ ভাল কাজের লোভ দেখিয়ে সীমান্তঘেঁষা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের কিশোরী ও শিশুদের নিয়ে আসা হচ্ছে। স্থানীয় কিছু পাচারকারীকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে কার্যত ভারতে বসে এই চক্র চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী ও শিশু পাচারকারীরা। পাচার হয়ে আসা বাংলাদেশি নারীদের ভারতের বিভিন্ন রেড-লাইট জোনে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে শিশুদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে এই ব্যবসায়।
গত ছয় মাসের শুধুমাত্র উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা দিয়ে অন্তত শতাধিক বাংলাদেশি নারী ও শিশু পাচার হয়ে এসেছে ভারতে। পাচারের রুট হিসাবে বরাবরই পছন্দের এই জেলার বনগাঁর পেট্টাপোল এবং বসিরহাটের গোঁজাডাঙা সীমান্তে।
যদিও উত্তর চব্বিশ পরগনার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে জানান, সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে বিএসএফ রয়েছে। সীমান্তের জিরো পয়েন্টের বিষয়টি তাদেরই দেখার কথা। তবে পুলিশের কাছে তথ্য থাকলে আমরা রাস্তা বা ট্রেন থেকে এমন বহু বাংলাদেশি নারী ও শিশুকে আটক করেছি।
বসিরহাটের সাংসদ হাজি নরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, সীমান্তের বহু স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। সে কারণে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সঙ্গে এমন পাচারের ঘটনাও বেড়েছে।
এই ইস্যুতে কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি পাচার হয়ে আসছে ভারতে। কুটনৈতিক স্তরের প্রায় সবগুলো স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার আলোচনা করছে। কিন্তু সমস্যা সেই একই জায়গায় রয়েছে।
কলকাতার সেচ্ছাসংস্থার কর্মী অরবিন্দ সাকসেনা জানান, আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিকভাবে সবল না করা পর্যন্ত ক্যান্সারের মতোই ছড়িয়ে পড়বে এই পাচারের সমস্যা।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের এক কিশোরীকে কলকাতার এক যৌনপল্লীতে বিক্রি করতে এসে ধরা পড়েছেন নদীয়ার এক ব্যক্তি। গতকাল শুক্রবার উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে ওই কিশোরীকে ব্যারাকপুরের টিটাগড়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেখানে একটি বাড়িতেই বসে কলকাতার সোনাগাছির যৌনপল্লীতে বিক্রির চূড়ান্ত ফয়সালা হয়।
সীমান্ত থেকে এই ঘটনার খবর পেয়ে ওঁৎ পেতে থাকেন গোয়েন্দারা এই চক্রকে ধরতে। শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ নদীয়ার জয়ন্ত ঘোষকে বাংলাদেশি কিশোরীসহ গ্রেপ্তার করে।
গোয়েন্দাদের জেরার মুখে জয়ন্ত জানায়, বাংলাদেশি কয়েকজন নারী পাচারকারীর কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জের মেয়েটিসহ আরো চারজন মেয়েকে যৌনপল্লিতে বিক্রির কাজ পায় সে। যদিও গোয়েন্দারা বাকি চারজন বাংলাদেশি মেয়ের খোঁজ পাননি। পাচার হয়ে আসা বাংলাদেশি কিশোরীদের খোঁজে শনিবার থেকে কলকাতার সোনাগাছিসহ রাজ্যের বিভিন্ন যৌনপল্লিতে তল্লাশি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
- See more at: http://www.kalerkantho.com/online/world/2013/11/09/19705#sthash.vQSwyxag.dpuf