শেয়ারবাজারে মন্দাভাব অব্যাহত থাকলেও বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়ছে। সেকেন্ডারি বাজারে টানা দরপতন হলেও প্রাইমারি বাজার চাঙ্গা রয়েছে। ফলে নতুন কোম্পানির প্রাইমারি শেয়ার পেতে বিও হিসাব খোলার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ২৭ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর হিসাব যোগ হয়েছে প্রায় সোয়া দুই লাখ।
এদিকে বিও হিসাব বাড়লেও তাতে শেয়ারধারীর সংখ্যা কমছে। বর্তমানে শেয়ার রয়েছে— এমন বিও হিসাবের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। আগের বছরের এপ্রিলে এর সংখ্যা ছিল ১৮ লাখের বেশি। তবে বর্তমানে যেসব বিও হিসাবে শেয়ার রয়েছে তার প্রায় ৬০ শতাংশই হচ্ছে প্রাইমারি শেয়ারহোল্ডারদের। অবশিষ্ট বিও হিসাবে শেয়ার থাকলেও এরা নিয়মিত লেনদেনে অংশগ্রহণ করেন না। সেকেন্ডারি বাজারে মন্দা অব্যাহত থাকায় প্রাইমারি বাজারনির্ভরতা বাড়ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) দেয়া তথ্যানুযায়ী গতকাল পর্যন্ত মোট বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ ৩ হাজার ৬৩৯টি। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি মোট বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৮১০টি। বর্তমানে যে পরিমাণ বিও হিসাব রয়েছে, তার মধ্যে কোম্পানির বিও হিসাব হচ্ছে ৯ হাজার ৫২৭টি। বর্তমানে যে বিও হিসাব রয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৭ লাখ হিসাবে কোনো শেয়ার নেই। আর ২ লাখ ৩৫ হাজার বিও হিসাব রয়েছে, যেগুলোয় কখনই শেয়ার ছিল না। মোট বিও হিসাবের প্রায় ৩০ শতাংশের মধ্যে কোনো শেয়ার নেই।
দেশের প্রধান বাজারে (সেকেন্ডারি মার্কেট) আড়াই বছর ধরেই মন্দাবস্থা চলছে। টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে গেছে। অন্যদিকে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবে শেয়ার থাকলেও কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ায় তা লেনদেন হচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্জিন ঋণসংকট। গ্রাহকদের নিজস্ব ইকুইটি কমে যাওয়ায় মার্জিন বিধিমালার কারণে ঋণে কেনা শেয়ার লেনদেন করা যাচ্ছে না। যদিও কিছু দিন আগে মার্জিন ঋণ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট উপবিধি স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক সংকট। নেতিবাচক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বড় বিনিয়োগকারীদের উল্লেখযোগ্য অংশই এখন সাইডলাইনে রয়েছে। এসব কারণে বর্তমানে নিয়মিত বিনিয়োগকারীরা অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে শেয়ার রয়েছে— এমন ১৭ লাখ ৭০ হাজার বিও হিসাবের মধ্যে প্রাইমারি শেয়ারধারী প্রায় ১২ লাখ। অবশিষ্ট ৫ লাখ ৭০ হাজার বিও হিসাবধারী প্রতি মাসে একাধিকবার লেনদেন করেন। আগের বছর শেয়ারবাজারে নিয়মিত লেনদেনকারীর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ লাখ। এক বছরের ব্যবধানে এ ধরনের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে ২ লাখের বেশি। মূলত মন্দা পরিস্থিতির কারণেই শেয়ারবাজারে নিয়মিত বিনিয়োগকারী কমে যাচ্ছে।
এদিকে সেকেন্ডারি মার্কেটে মন্দাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলেও প্রাইমারি বাজারে চাঙ্গাভাব লক্ষ করা গেছে। নতুন কোম্পানির আইপিওতে শেয়ার পেতে কয়েক গুণ বেশি আবেদন জমা পড়ছে। মূলত অভিহিত মূল্যে তুলনামূলক দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের কারণে প্রাইমারি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। আইপিওতে পাওয়া শেয়ার সেকেন্ডারি বাজারে কয়েক গুণ বেশি দরে বিক্রির সুযোগ থাকায় প্রাইমারি বাজার চাঙ্গা রয়েছে। এতে বিও হিসাব খোলার প্রবণতা বাড়ছে।
উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে চাইলে সিডিবিএলের আওতাধীন যেকোনো ডিপিতে (ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট) একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলতে হয়। একজন ব্যক্তি একটি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে একক নামে একটি এবং যৌথ নামে একটি বিও হিসাব খুলতে পারেন।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি প্রদান করে হিসাব নবায়ন করতে হয়। প্রতিটি বিও হিসাব নবায়নের জন্য বর্তমানে ৫০০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে সিডিবিএল ১৫০ টাকা, হিসাব পরিচালনাকারী ব্রোকারেজ হাউস ১০০ এবং বিএসইসি ৫০ টাকা পায়। বাকি ২০০ টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়।
২০০৮ সালের জুন মাসে শেয়ারবাজারে বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৭১ হাজার ২৫২টি। ২০০৯ সালের একই সময়ে তা বেড়ে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ১৫টিতে দাঁড়ায়। ২০১০ সালে বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী যুক্ত হয় শেয়ারবাজারে। সে বছরের জুন পর্যন্ত বিও হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৭। ডিসেম্বরের মধ্যে সংখ্যাটি ৩০ লাখ অতিক্রম করে। তবে ওই বছরের ধসের পরও শেয়ারবাজারে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১১ সালের মে মাস শেষে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩৪ লাখে। তবে ওই বছরের জুলাইয়ে এ সংখ্যা কমে ২৬ লাখ ৭৮ হাজারে নেমে আসে। ২০১২ সালে তা আরো কমে ২৬ লাখ ১৬ হাজারে নেমে এসেছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৮১০।
- See more at: http://www.bonikbarta.com/sharemarket/2013/10/15/19352#sthash.IGUj9TtH.dpuf