,

বেক্সিমকো গ্রুপের সাতকাহন-Story on BEXIMCO

Monday, November 11, 2013 Other
বেক্সিমকো গ্রুপের বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে বিপাকে রয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো জিম্মি হয়ে পড়েছে গ্রুপটির কাছে। সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকে ক্রমেই বেড়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ। ২০১২ সাল শেষে চার ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এসব দেনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাও কার্যকর হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচকের ক্রমাবনতি হচ্ছে। তবে পাওনা অর্থ আদায়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ১৯৯৫-এর ৩০ মে পর্যন্ত বিডিবিএল (তখনকার শিল্প ব্যাংক) বেক্সিমকো টেক্সটাইলকে (এখন বেক্সিমকো লিমিটেডের সঙ্গে একীভূত) ১৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়। ওই ঋণের প্রায় ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে। বিডিবিএলের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও ঋণ পরিশোধের কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক বিডিবিএল অর্থঋণ আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে বেক্সিমকোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান অনলাইন বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এটা সম্ভবত কোনো ভুল বোঝাবুঝি। এটা আমরা স্পষ্ট জানিও না। আগামীকাল (আজ) বিষয়টি ঠিক করে নেব।’ বিডিবিএল সূত্রে জানা যায়, মামলা করার পূর্বশর্ত হিসেবে গাজীপুরে বেক্সিমকোর সম্পদ নিলামে বিক্রির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। তবে এ বিষয়ে বিডিবিএলের কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বিডিবিএল থেকেই সরবরাহ করা। ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী সব প্রক্রিয়া শেষে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। প্রসঙ্গত. ২০০৯ সালের ৫ জুলাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে খেলাপি গ্রাহকদের একটি তালিকা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৯ সালের মার্চভিত্তিক এ তালিকা তৈরি করে। এতে বেক্সিমকো গ্রুপকে সবচেয়ে বড় খেলাপি গ্রাহক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সংসদের তালিকা মতে, সে সময় বেক্সিমকো টেক্সটাইলের খেলাপি ছিল ৩৫৪ কোটি, পদ্মা টেক্সটাইলের ২৯৩ কোটি, সাইনপুকুর সিরামিকের ১৩৪ কোটি, বেক্সিমকো নিটিংয়ের ৮১ কোটি, বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৬০ কোটি, বেক্সিমকো কম্পিউটারের ১১ কোটি ও বেক্সিমকো ফ্যাশনের ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০০৯ সালের মার্চে গ্রুপটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪৩ কোটি টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক গুণ। ২০১২ সালে ব্যাংকগুলোর প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রুপটির কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ১৫৭ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৫০৬ কোটি, জনতা ব্যাংকের ৩ হাজার ৬৩ কোটি ও অগ্রণী ব্যাংকের ১৭৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গ্রুপটির কাছে চার ব্যাংকের পাওনা ৫ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া কোনো প্রতিষ্ঠানকে আর ঋণ দেয়া হবে না। বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ নিয়েও পর্ষদ সভায় আলোচনা হয়। এসব সভায় গ্রুপটিকে নতুন করে আর কোনো অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত হয়। সোনালী, জনতা, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংকের একাধিক পরিচালক জানান, বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ আদায় নিয়ে সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। ওই গ্রুপের ঋণ অনিয়মিত হয় আবার পুনঃতফসিলও হয়। কিন্তু পাওনা অর্থ আদায় হয় না। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ আগে নিয়মিতই ছিল। সময়মতো ঋণ পরিশোধে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। আমি নিজেই গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি শিগগিরই ঋণ নিয়মিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।’ এদিকে বেক্সিমকো লিমিটেডের সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৮৩ শতাংশ। মূলত বিক্রি হ্রাসের পাশাপাশি কোম্পানিটির পণ্যের উৎপাদন খরচ ও ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা সংকুচিত হয়ে পড়ছে। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে নেট মুনাফা হয়েছে মাত্র ৪০ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৭৭ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৪১ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ৫ টাকা ৩১ পয়সা। - See more at: http://bonikbarta.com/first-page/2013/11/11/21973#sthash.6VF5S5do.dpuf

Blog Archive