রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা নেতিবাচক হলেও শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। বর্তমানে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও রেড়েছে। ফলে শেয়ারের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি সপ্তাহে সব কার্যদিবসে সূচকে যোগ হয়েছে বাড়তি পয়েন্ট। গতকালও এ ধারাবাহিকতা ছিল শেয়ারবাজারে। লেনদেন হওয়া অধিকাংশ শেয়ারের দর বাড়ায় উভয় বাজারে প্রধান মূল্যসূচক দুই শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স মূল্যসূচক এদিন সাড়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। আর লেনদেনেও দেখা যায় অনেক অগ্রগতি।
নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দেশের প্রধান দুই দলের মতবিরোধের জেরে সৃষ্ট অস্থিরতায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলোয় বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকলেও তা বিতরণ করা যাচ্ছে না। তবে এ পরিস্থিতির মধ্যেও শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন সাইডলাইনে থাকা প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন। বিদেশীরাও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। তবে এসব বিনিয়োগকারীর আগ্রহে রয়েছে ব্যাংকিং খাত। বিপর্যয়ের মধ্যে থাকা ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের দর কম থাকায় বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হচ্ছেন। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের চিন্তা মাথায় রেখেই এ খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন তারা। এতে চাহিদা বাড়ায় এ খাতের শেয়ারের দর নিয়মিত বাড়ছে।
আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের দর বাড়ে ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বর্তমানে ডিএসইর বাজার মূলধনের ২০ শতাংশের বেশি ধারণ করছে ব্যাংকিং খাত। তাই এ খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে সূচকে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। যদিও গতকাল বীমা খাতের শেয়ারের দর সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। এদিন ডিএসইতে জীবন বীমা কোম্পানি খাতের শেয়ারের দর বাড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আর সাধারণ বীমা কোম্পানির শেয়ারের দর গড়ে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বাড়ে।
ডিএসইতে গতকাল ৭৬ শতাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৮৮ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বেড়ে ৪২০০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। গত ১৮ জুলাইয়ের পর সূচকের এটিই সর্বোচ্চ অবস্থান। মূলত ব্যাংক, ওষুধ, জীবন বীমা ও টেক্সটাইল খাতের কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ায় সূচকের উন্নতি হয়। এদিন ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ১৮.১৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৪৫৩.৩২ পয়েন্টে দাঁড়ায়। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হওয়া ৭০ শতাংশ শেয়ারের দর বাড়ায় সার্বিক মূল্যসূচক ২৭৮ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ১২৯২৯ পয়েন্টে দাঁড়ায়।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৮৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেশি। এদিন ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় ব্যাংকিং খাতের শেয়ার। চলতি বছর প্রথমবারের মতো ব্যাংকিং খাত ১০০ কোটি টাকা লেনদেন ছাড়িয়েছে। বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কারণে গত সপ্তাহ থেকে এ খাতের লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। অন্যদিকে সিএসইতে কেনাবেচা হয় ৪৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড; যা আগের দিনের চেয়ে ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা বেশি।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৮৯টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বাড়ে ২২১টির, কমে ৫২টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির শেয়ারের দর। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ১০০টির দর বাড়ে ৩ শতাংশের বেশি। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বাড়ে ১৫৩টির, কমে ৫০টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৪টির শেয়ারের দর।
এদিন ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো— গ্রামীণফোন, ইউসিবিএল, স্কয়ার ফার্মা, আইএফআইসি, ফার্স্টলিজ ইন্টারন্যাশনাল, জেনারেশন নেক্সট, সিটি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, অ্যাকটিভ ফাইন ও বেক্সিমকো লিমিটেড।
দর বৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানি হলো— ফার্স্টলিজ ইন্টারন্যাশনাল, ফিনিক্স ফিন্যান্স, ইবিএল, আইএফআইসি, ইউএলসি, রিলায়েন্স ১, পিপলস লিজিং, বে-লিজিং, আইপিডিসি ও জিএসপি ফিন্যান্স।
অন্যদিকে দর হ্রাসে শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানি হলো— ন্যাশনাল পলিমার, রহিম টেক্সটাইল, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, জিল বাংলা সুগার, অ্যাকটিভ ফাইন, লিবরা ইনফিউশন, দেশ গার্মেন্টস, বিডি অটোকারস, রেকিট বেনকিজার ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট।
- See more at: http://bonikbarta.com/sharemarket/2013/11/08/21641#sthash.LeYTYy1q.dpuf