ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী হিসেবে নতুন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে বিশেষ কোটা সুবিধা পাবেন প্রায় সাড়ে নয় লাখ বিনিয়োগকারী।
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নাম, বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হিসাব, সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের নামসহ পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা তৈরি করেছে বিশেষ স্কিম প্রণয়ন কমিটি। গতকাল সোমবারই চূড়ান্ত এই তালিকা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) জমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সুপারিশসহ বিশেষ স্কিম প্রণয়ন কমিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল, তাতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ২৬ হাজার। এর মধ্যে ঋণগ্রস্ত ও ঋণ ছাড়া উভয় শ্রেণীর বিনিয়োগকারীই রয়েছেন।
কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় ক্ষতিগ্রস্ত (১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ) বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ কমে গেছে।
এর কারণ হিসেবে কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, চূড়ান্ত তালিকা করতে গিয়ে দেখা গেছে, এক ব্যক্তির নাম দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের তালিকায় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এক ব্যক্তিকে একবারই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সাধারণত একজন বিনিয়োগকারী এক নামে একাধিক বিও হিসাব খুলে শেয়ারবাজারে (সেকেন্ডারি মার্কেট) বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি একক ও যৌথ নামের হিসাব মিলিয়ে সর্বোচ্চ দুটি আবেদন করতে পারেন।
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের চূড়ান্ত যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ২০৪টি ব্রোকারেজ হাউসের সাত লাখ ৩৯ হাজার ৮৮৩ জন, অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সদস্যভুক্ত ১০৩টি ব্রোকারেজ হাউসের এক লাখ ৫৪ হাজার ২৭৭ জন এবং ২৫টি মার্চেন্ট ব্যাংকের ৩৯ হাজার ১২০ জন বিনিয়োগকারী রয়েছেন। মোট নয় লাখ ৩৩ হাজার ২৮০ জন।
এসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান কমিটির চূড়ান্ত তালিকা পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘গতকাল বিকেলে এই তালিকা কমিশনের হাতে এসে পৌঁছেছে। এখন তালিকাটি যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
সাইফুর রহমান বিশেষ স্কিম কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।
এর আগে গত ৪ মার্চ শেয়ারবাজার ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বা স্কিম ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় এক বছরের সুদের ৫০ শতাংশ মওকুফ এবং আইপিওতে ২০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের ঘোষণা দেওয়া হয়।
শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগ করে তার বিপরীতে যাঁরা ঋণসুবিধা নিয়েছেন, কেবল তাঁরাই সুদ মওকুফের সুবিধা পাবেন। আর ঋণগ্রস্ত বা ঋণ ছাড়া উভয় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী আইপিও কোটা সুবিধা পাবেন। এ জন্য ২০১২ ও ২০১৩ সালে ইস্যু হওয়া সব আইপিওতে ২০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রণোদনা ঘোষণার পরপরই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি ক্যাপিটাল তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের এক বছরের সুদ মওকুফের ঘোষণা দেয়। তবে আইসিবির বাইরে অন্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক) ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। ::::