শেয়ারবাজার :::: দেশের শেয়ারবাজারের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। সম্প্রতি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্বের বৃহত্তম ফান্ড ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফান্ড ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলটন[Golgman Sacks and Franklin Templeton is investing in Dhaka Stock Exchange (DSE)]। মূলত অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলটন দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। প্রতিষ্ঠানটি গত ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের বাজার নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। পওে জুনের মাঝামাঝিতে ব্র্যাক ইপিএলে অ্যাকাউন্ট খোলে প্রতিষ্ঠানটি।
ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, নেঙ্ট-১১ দেশগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য গোল্ডম্যান স্যাকস নেঙ্ট-১১ ইক্যুয়িটি ফান্ড নামে একটি তহবিল গঠন করেছে। ওই তহবিলের একটি অংশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। গত ১৫ জুলাইয়ের শেয়ার ধারণসংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে এই ফান্ডের পোর্টফোলিওতে বাংলাদেশের তিনটি কম্পানির শেয়ার রয়েছে।
গত ডিসেম্বরের পর থেকে টানা বিপর্যয়ে অধিকাংশ শেয়ারের দর মৌলভিত্তির কাছাকাছি চলে আসায় এখনই বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট সময় বলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মনে করছে।
ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে শেয়ার কেনার দিকেই বেশি আগ্রহী ছিল। ২০১১ সালের প্রথম সাত মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৪৪ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ সময় ডিএসইর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সর্বমোট ৭৯১ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার কিনেছে। এর অধিকাংশই বিনিয়োগ করা হয়েছে এপ্রিলের পর থেকে। এর বিপরীতে তারা শেয়ার বিক্রি করেছে ৭৫৩ কোটি সাত লাখ ৪০ হাজার টাকার। এর মধ্যে জানুয়ারি ও জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে সাত মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিট ক্রয় দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর আগে টানা তিন বছর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রির পরিমাণ বেশি ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে বিশ্বের বৃহত্তম ফান্ড ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস ২০০৫ সালে বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির ১১টি (নেঙ্ট-১১) দেশের অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করে। ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, নেঙ্ট-১১ দেশগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য গোল্ডম্যান স্যাকস নেঙ্ট-১১ ইক্যুয়িটি ফান্ড নামে একটি তহবিল গঠন করেছে। ওই তহবিলের একটি অংশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। গত ১৫ জুলাইয়ের শেয়ার ধারণসংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে এই ফান্ডের পোর্টফোলিওতে বাংলাদেশের তিনটি কম্পানির শেয়ার রয়েছে। নেঙ্ট-১১ তালিকার অন্য দেশগুলো হলো_কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইরান, পাকিস্তান, মেঙ্েিকা, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। ২০৫০ সালের মধ্যে এই দেশগুলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। মূলত, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্যই প্রতিষ্ঠানটি ওই গবেষণাপত্র প্রণয়ন করেছিল।
ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের ৩২টি দেশে ৪১টি অফিসের মাধ্যমে ফ্রাঙ্কলিন টেমপ্লেটনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ভারতের মুম্বাই অফিসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রতিষ্ঠানটি মোট ১০০টি মেয়াদহীন (ওপেন এন্ড) এবং সাতটি মেয়াদি (ক্লোজড এন্ড) মিউচ্যুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে। বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে এসব ফান্ডের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৫৭ বিলিয়ন পাউন্ড।
গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলটন সূত্র মতে, ব্র্যাক ইপিএলের মাধ্যমে তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানটি গত ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের বাজার নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরে গত জুনের মাঝামাঝি ব্র্যাক ইপিএলে অ্যাকাউন্ট খোলে প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির টেম্পলটন ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস ফান্ডের একটি অংশ এ দেশে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের লক্ষ্যে গঠিত এই ফান্ডটির মোট আকার ২৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠানটি কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিনিয়োগের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করে ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলটন এ দেশে ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চিন্তা করছে।
ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম দুটি ফান্ড ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস এবং ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলটন বিনিয়োগ করছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে। তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সামস্টিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যে বিনিয়োগও শুরু করেছে। কৌশলগত কারণে তাদের বিনিয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, আগে বাংলাদেশে আসা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই ছিল স্বল্পমেয়াদি। কিন্তু এবার যেসব প্রতিষ্ঠান আসছে তাতে দেশের শেয়ারবাজারে মানসম্পন্ন ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে।
১৯৮০ সালের ফরেন প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট (প্রমোশন অ্যান্ড প্রোটেকশন) আইনের আওতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহজ শর্তে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে মুনাফা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তবে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে কম্পানির প্রাথমিক শেয়ার কিনলে তাতে নির্ধারিত সময়ের জন্য লক ইন থাকে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিদেশিরা ওইসব শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না।
বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা অর্জনের সুযোগ অনেকটাই কমে গেছে। কেননা, উন্নত দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি শীর্ষ স্তরে পেঁৗছায়। তাই বর্তমানে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্র হিসেবে সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি এখন এশিয়ার দিকে। উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় এ দেশে বিনিয়োগ আসছে। এ ছাড়া এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি চীন ও ভারত। এ দুটি দেশের সঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।