শেয়ারবাজার বাংলাদেশে বিনিয়োগের তুলনায় অনেক বেশি মুনাফা করছে বিদেশি কোম্পানিগুলো। ২০০৯-১০ অর্থবছরেই তারা এদেশ থেকে মুনাফা বাবত নিজ নিজ দেশে নিয়ে গেছে ৬ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার। আর গত ১০ বছরে তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশ থেকে মুনাফা ও ডিভিডেন্ড হিসেবে নিয়েছে ৩৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার সমপরিমাণ ৪৮০ কোটি ডলার। এই এক দশকে বিদেশি কোম্পানিগুলোর মুনাফার প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৮৫ শতাংশ। কিন্তু তাদের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭২ শতাংশ।
সম্প্রতি বিনিয়োগ বোর্ড প্রকাশিত ‘ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ (১৯৭১-২০১০) বা বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (১৯৭১-২০১০)’ শীর্ষক এক রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। অর্থাত্ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মুনাফার প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশে বিদেশি কোম্পানিগুলো অনেক এগিয়ে থাকলেও তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়েনি। রিপোর্টটির বিনিয়োগচিত্রে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর দেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ২০০৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে। এ সময় বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩১৯৭ দশমিক ৬২৩ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ১৯৯০ সালে দশমিক ৬২৩ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯১ সালে ২ দশমিক ৮৪১ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯২ সালে ১৮ দশমিক ৯১৯ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৩ সালে দশমিক ২০০ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৪ সালে ২৮ দশমিক ০৩৮ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৫ সালে ১০ দশমিক ৩১৮ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৬ সালে ২২ দশমিক ২৫৭ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৭ সালে ১৯১ দশমিক ২৪২ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৮ সালে ১০১৮ দশমিক ৮৭১ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৯ সালে ৪৩৬ দশমিক ৯০৭ মিলিয়ন ডলার, ২০০০ সালে ৪০৬ দশমিক ৬৯৫ মিলিয়ন ডলার, ২০০১ সালে ১১ দশমিক ২৫৮ মিলিয়ন ডলার, ২০০২ সালে ৩৫ দশমিক ৯৬৩ মিলিয়ন ডলার, ২০০৩ সালে ৮৩ দশমিক ৫১৬ মিলিয়ন ডলার, ২০০৪ সালে ২২৪ দশমিক ৮০৬ মিলিয়ন ডলার, ২০০৬ সালে ১১২০ দশমিক ৮২০ মিলিয়ন ডলার, ২০০৭ সালে ৫৫ দশমিক ১৬৩ মিলিয়ন ডলার, ২০০৮ সালে ৬৫ দশমিক ৫৮৪ মিলিয়ন ডলার, ২০০৯ সালে ৪৪ দশমিক ৬৮৮ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১০ সালে ৩৬ দশমিক ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়।
বিনিয়োগ বোর্ডের ১৫৮ পৃষ্ঠার রিপোর্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মুনাফা অর্জনের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে বিদেশি মোবাইল ফোন, ব্যাংক কোম্পানি, লিজিং, বীমা, বিদ্যুত্, গ্যাস, পেট্রোলিয়াম এবং টেক্সটাইল ও বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ১০ বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড ও মুনাফা হিসাবে নিজের দেশে নিয়ে গেছে ৪৮০ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড ও মুনাফা বাবদ ব্যাংকিং চ্যানেলে ৮৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার নিয়ে যায়। অথচ এই অর্থবছরে বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ৬৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এফডিআই’র পরিমাণ ছিল ৯৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০০৭-০৮ অর্থবছর শেষে এই পরিমাণ ছিল ৭৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার আর ২০০৬-০৭ অর্থবছর শেষে মোট এফডিআই’র পরিমাণ ছিল ৭৯ কোটি ২৭ লাখ ডলার। উল্লেখ, ২০০০-০১ অর্থবছরে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৫৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।
রিপোর্টটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে এখন শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন শিল্প ইউনিট রয়েছে ৪১৮টি। এতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৭ হাজার ১২ দশমিক ৭৬৮ মিলিয়ন ডলার এবং কর্মসংস্থান হয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ৯৫৭ জনের। অন্যদিকে জয়েন্ট ভেঞ্চারে শিল্প ইউনিট গড়ে উঠেছে ১১৭৯টি। এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ হাজার ১৭২ দশমিক ৪৭০ মিলিয়ন ডলার এবং কর্মসংস্থান হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ২০৭ জনের।
তবে বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রমতে, গত ১০ বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮৫ শতাংশ। আর এ সময়ে বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭২ শতাংশ। বিশেষ করে বিদেশি মোবাইল অপারেটররা এখন তাদের পুনর্বিনিয়োগকেই সরাসরি ‘এফডিআই’ (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) হিসেবে প্রচার করছে।
বিনিয়োগ বোর্ডের দেয়া অন্য এক তথ্যে জানা যায়, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সব সময় বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জোর গলায় প্রচার করলেও দুর্বল বিনিয়োগ নীতির কারণে তারা কোটি কোটি ডলার মুনাফা ঠিকই করতে পারছে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর মুনাফার অঙ্ক বাড়ার পরও বাণিজ্য ও সেবাখাতের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে না। কিন্তু সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নানা সুবিধা দিয়েই যাচ্ছে।
জানা গেছে, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ হলে মুনাফার শতকরা ৫০ ভাগ সরকার রেখে দেয় এবং বাকি ৫০ ভাগ বিনিয়োগকারী তার দেশে নিয়ে যেতে পারে। তবে মুনাফার শতকরা ৫০ ভাগ ভারত সরকার রেখে দেয় মানে ওই ৫০ ভাগ ভারতেই বিনিয়োগকারীকে পুনর্বিনিয়োগ বা খরচ করতে হয়, কোনোভাবেই ভারতের বাইরে নেয়া যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের শতভাগ, এমনকি তারও বেশি পরিমাণ মুনাফা বৈধ পথেই নিজ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারে। গ্রামীণফোনের একজন সাবেক হাই-লেবেল কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, টেলিনর সাড়ে চারশো মিলিয়ন ডলার এনেছিল। এরপর তাদেরকে বিদেশ থেকে আর একটি ডলারও আনতে হয়নি। অথচ এখন বাংলাদেশে তাদের সম্পদের আর্থিক মূল্য তিনশ’ ষাট কোটি মার্কিন ডলারকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বিনিয়োগ বোর্ড মতে, দুটো কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসে। প্রথম কারণ হচ্ছে এখানকার সস্তা শ্রম। দ্বিতীয়টি হচ্ছে কর অবকাশসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা। তাদের মুনাফার মূল উত্সও এই দুটি ইস্যু। তাই গ্যাস, বিদ্যুত্ ও অবকাঠামো সমস্যার কথা জেনেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসছে।
বোর্ড সূত্রমতে, চীনে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি মাসিক ২০০ মার্কিন ডলার। ভারতে তা প্রায় ১০০ ডলার। আর বাংলাদেশে মাত্র ৪৫ ডলার। তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা মাসিক ন্যূনতম ৭০ ডলার মজুরির জন্য আন্দোলন করলেও সরকার ও শিল্প মালিকরা তা মেনে নেয়নি। সর্বশেষ সরকার ও মালিক পক্ষ সমন্বিতভাবে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৪৫ ডলার নির্ধারণ করেছে। আর এই সুবিধা বেশি করে কাজে লাগাচ্ছে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কারখানাগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমার দেশকে বিনিয়োগ বোর্ডের রিপোর্টটির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো যতটা না বিনিয়োগ করছে মুনাফা হিসাবে নিয়ে যাচ্ছে তার বেশি। তার মতে, অধিকাংশ বিদেশি প্রতিষ্ঠান লাভের যে অংশ আইনত বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেটুকুই বিনিয়োগ করছে। অতিরিক্ত কোনো বিনিয়োগ করছে না।
রিপোর্টটিতে দেখানো হয়েছে, গত ১০ বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুনাফা হিসেবে নিজের দেশে বৈধ পথে নিয়ে গেছে প্রায় ৪৮০ কোটি ডলার। এছাড়া ২০০০-০১ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ২০০১-০২ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৫০ লাখ, ২০০২-০৩ অর্থবছরে ৩৫ কোটি ৫০ লাখ, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৩৩ কোটি ৮০ লাখ, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৪১ কোটি ৮০ লাখ, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৩৯ কোটি ৬০ লাখ, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৫৬ কোটি ৯০ লাখ, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৬৪ কোটি ৫১ লাখ, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৮৫ কোটি ৭৩ লাখ এবং সর্বশেষ ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৮৪ কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার বৈধপথে বিদেশে পাঠিয়েছে।
সম্প্রতি বিনিয়োগ বোর্ড প্রকাশিত ‘ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ (১৯৭১-২০১০) বা বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (১৯৭১-২০১০)’ শীর্ষক এক রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। অর্থাত্ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মুনাফার প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশে বিদেশি কোম্পানিগুলো অনেক এগিয়ে থাকলেও তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়েনি। রিপোর্টটির বিনিয়োগচিত্রে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর দেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ২০০৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে। এ সময় বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩১৯৭ দশমিক ৬২৩ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ১৯৯০ সালে দশমিক ৬২৩ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯১ সালে ২ দশমিক ৮৪১ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯২ সালে ১৮ দশমিক ৯১৯ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৩ সালে দশমিক ২০০ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৪ সালে ২৮ দশমিক ০৩৮ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৫ সালে ১০ দশমিক ৩১৮ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৬ সালে ২২ দশমিক ২৫৭ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৭ সালে ১৯১ দশমিক ২৪২ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৮ সালে ১০১৮ দশমিক ৮৭১ মিলিয়ন ডলার, ১৯৯৯ সালে ৪৩৬ দশমিক ৯০৭ মিলিয়ন ডলার, ২০০০ সালে ৪০৬ দশমিক ৬৯৫ মিলিয়ন ডলার, ২০০১ সালে ১১ দশমিক ২৫৮ মিলিয়ন ডলার, ২০০২ সালে ৩৫ দশমিক ৯৬৩ মিলিয়ন ডলার, ২০০৩ সালে ৮৩ দশমিক ৫১৬ মিলিয়ন ডলার, ২০০৪ সালে ২২৪ দশমিক ৮০৬ মিলিয়ন ডলার, ২০০৬ সালে ১১২০ দশমিক ৮২০ মিলিয়ন ডলার, ২০০৭ সালে ৫৫ দশমিক ১৬৩ মিলিয়ন ডলার, ২০০৮ সালে ৬৫ দশমিক ৫৮৪ মিলিয়ন ডলার, ২০০৯ সালে ৪৪ দশমিক ৬৮৮ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১০ সালে ৩৬ দশমিক ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়।
বিনিয়োগ বোর্ডের ১৫৮ পৃষ্ঠার রিপোর্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মুনাফা অর্জনের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে বিদেশি মোবাইল ফোন, ব্যাংক কোম্পানি, লিজিং, বীমা, বিদ্যুত্, গ্যাস, পেট্রোলিয়াম এবং টেক্সটাইল ও বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ১০ বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড ও মুনাফা হিসাবে নিজের দেশে নিয়ে গেছে ৪৮০ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড ও মুনাফা বাবদ ব্যাংকিং চ্যানেলে ৮৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার নিয়ে যায়। অথচ এই অর্থবছরে বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ৬৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এফডিআই’র পরিমাণ ছিল ৯৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০০৭-০৮ অর্থবছর শেষে এই পরিমাণ ছিল ৭৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার আর ২০০৬-০৭ অর্থবছর শেষে মোট এফডিআই’র পরিমাণ ছিল ৭৯ কোটি ২৭ লাখ ডলার। উল্লেখ, ২০০০-০১ অর্থবছরে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৫৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।
রিপোর্টটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে এখন শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন শিল্প ইউনিট রয়েছে ৪১৮টি। এতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৭ হাজার ১২ দশমিক ৭৬৮ মিলিয়ন ডলার এবং কর্মসংস্থান হয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ৯৫৭ জনের। অন্যদিকে জয়েন্ট ভেঞ্চারে শিল্প ইউনিট গড়ে উঠেছে ১১৭৯টি। এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ হাজার ১৭২ দশমিক ৪৭০ মিলিয়ন ডলার এবং কর্মসংস্থান হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ২০৭ জনের।
তবে বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রমতে, গত ১০ বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮৫ শতাংশ। আর এ সময়ে বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭২ শতাংশ। বিশেষ করে বিদেশি মোবাইল অপারেটররা এখন তাদের পুনর্বিনিয়োগকেই সরাসরি ‘এফডিআই’ (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) হিসেবে প্রচার করছে।
বিনিয়োগ বোর্ডের দেয়া অন্য এক তথ্যে জানা যায়, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সব সময় বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জোর গলায় প্রচার করলেও দুর্বল বিনিয়োগ নীতির কারণে তারা কোটি কোটি ডলার মুনাফা ঠিকই করতে পারছে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর মুনাফার অঙ্ক বাড়ার পরও বাণিজ্য ও সেবাখাতের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে না। কিন্তু সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নানা সুবিধা দিয়েই যাচ্ছে।
জানা গেছে, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ হলে মুনাফার শতকরা ৫০ ভাগ সরকার রেখে দেয় এবং বাকি ৫০ ভাগ বিনিয়োগকারী তার দেশে নিয়ে যেতে পারে। তবে মুনাফার শতকরা ৫০ ভাগ ভারত সরকার রেখে দেয় মানে ওই ৫০ ভাগ ভারতেই বিনিয়োগকারীকে পুনর্বিনিয়োগ বা খরচ করতে হয়, কোনোভাবেই ভারতের বাইরে নেয়া যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের শতভাগ, এমনকি তারও বেশি পরিমাণ মুনাফা বৈধ পথেই নিজ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারে। গ্রামীণফোনের একজন সাবেক হাই-লেবেল কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, টেলিনর সাড়ে চারশো মিলিয়ন ডলার এনেছিল। এরপর তাদেরকে বিদেশ থেকে আর একটি ডলারও আনতে হয়নি। অথচ এখন বাংলাদেশে তাদের সম্পদের আর্থিক মূল্য তিনশ’ ষাট কোটি মার্কিন ডলারকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বিনিয়োগ বোর্ড মতে, দুটো কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসে। প্রথম কারণ হচ্ছে এখানকার সস্তা শ্রম। দ্বিতীয়টি হচ্ছে কর অবকাশসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা। তাদের মুনাফার মূল উত্সও এই দুটি ইস্যু। তাই গ্যাস, বিদ্যুত্ ও অবকাঠামো সমস্যার কথা জেনেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসছে।
বোর্ড সূত্রমতে, চীনে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি মাসিক ২০০ মার্কিন ডলার। ভারতে তা প্রায় ১০০ ডলার। আর বাংলাদেশে মাত্র ৪৫ ডলার। তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা মাসিক ন্যূনতম ৭০ ডলার মজুরির জন্য আন্দোলন করলেও সরকার ও শিল্প মালিকরা তা মেনে নেয়নি। সর্বশেষ সরকার ও মালিক পক্ষ সমন্বিতভাবে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৪৫ ডলার নির্ধারণ করেছে। আর এই সুবিধা বেশি করে কাজে লাগাচ্ছে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কারখানাগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমার দেশকে বিনিয়োগ বোর্ডের রিপোর্টটির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো যতটা না বিনিয়োগ করছে মুনাফা হিসাবে নিয়ে যাচ্ছে তার বেশি। তার মতে, অধিকাংশ বিদেশি প্রতিষ্ঠান লাভের যে অংশ আইনত বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেটুকুই বিনিয়োগ করছে। অতিরিক্ত কোনো বিনিয়োগ করছে না।
রিপোর্টটিতে দেখানো হয়েছে, গত ১০ বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুনাফা হিসেবে নিজের দেশে বৈধ পথে নিয়ে গেছে প্রায় ৪৮০ কোটি ডলার। এছাড়া ২০০০-০১ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ২০০১-০২ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৫০ লাখ, ২০০২-০৩ অর্থবছরে ৩৫ কোটি ৫০ লাখ, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৩৩ কোটি ৮০ লাখ, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৪১ কোটি ৮০ লাখ, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৩৯ কোটি ৬০ লাখ, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৫৬ কোটি ৯০ লাখ, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৬৪ কোটি ৫১ লাখ, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৮৫ কোটি ৭৩ লাখ এবং সর্বশেষ ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৮৪ কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার বৈধপথে বিদেশে পাঠিয়েছে।