নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১০-১২-২০১৩
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হলেও শেয়ারবাজারে লেনদেনে অগ্রগতি হচ্ছে। হরতাল-অবরোধে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজারে স্বাভাবিক লেনদেন চলছে। এতে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। গতকাল উভয় শেয়ারবাজারে লেনদেন বাড়লেও শেয়ারের দরে ছিল মিশ্রভাব। তবে আগের দিনের ধারাবাহিকতায় এদিনও ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারগুলো দর বৃদ্ধিতে শীর্ষে অবস্থান নেয়।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নির্বাচন সামনে রেখে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট নিরসনে চলমান তত্পরতার মধ্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়েছে। বিরোধী জোটের ডাকা অবরোধ কর্মসূচির সময়সীমা আরো বাড়ানো হয়েছে। আর আজও হরতাল ডেকেছে জামায়াত। রাজনৈতিক সংকটের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি এখনো হয়নি। তবে হরতাল-অবরোধে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে দেশের মানুষ। সংঘাত-সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যেও কাজ সম্পাদনে ছুটছে তারা। আর বিনিয়োগকারীরাও ফিরছেন শেয়ারবাজারে। ফলে ধীরে ধীরে লেনদেনে অগ্রগতি হচ্ছে।
বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়ায় গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বেশি। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কেনাবেচা হয় ৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড, যা আগের দিনের চেয়ে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা বেশি।
এদিকে আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়। উত্পাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকা ও তুলনামূলক দুর্বল স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারই বাড়ে বেশি। ডিএসইর বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টিই দুর্বল মৌলভিত্তির। এর মধ্যে আজিজ পাইপস, রহিমা ফুড করপোরেশন, সমতা লেদার, নর্দার্ন জুট, কেঅ্যান্ডকিউ, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, বিচ হ্যাচারি, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ও ফ্যামিলিটেক্স, দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়।
গতকাল উভয় শেয়ারবাজারে সব ধরনের সূচকের পরিমাণ কমে। দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়লেও মৌলভিত্তিসম্পন্ন ও বড় মূলধনি অধিকাংশ শেয়ারের দর কমায় সূচকের পরিমাণ কমে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এদিন ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট কমে ৪২৮৯ দশমিক ৮২ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ৫ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে ১৪৯৫ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে দাঁড়ায়। অন্যদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক ২২ পয়েন্ট ও সিএসই-৩০ সূচক ৩৮ পয়েন্ট কমে।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া ২৯১ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৩২টির দর বাড়ে, ১৩০টির কমে এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৯টির দর। অন্যদিকে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১৮ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৯৩টির দর বাড়ে, কমে ১০২টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির দর।
ডিএসইর খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, কেবল তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি কোম্পানিরও শেয়ারের দর গতকাল কমেনি। এ খাতের ছয়টি কোম্পানিরই দর বাড়ায় সার্বিকভাবে ২ শতাংশ দর বেড়েছে। এছাড়া কাগজ ও মুদ্রণ খাতের একমাত্র কোম্পানি হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপারও সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে (প্রায় ১০ শতাংশ) কেনাবেচা হয়। আর ব্যাংকিং ও বীমা খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর কমলেও বাড়ে অধিকাংশ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক শেয়ারের দর। এতে সার্বিকভাবে দেড় শতাংশের বেশি বাড়ে এ খাতের শেয়ারের দর। অন্য খাতগুলোয় ছিল মিশ্রভাব।
সার্বিকভাবে অগ্রগতি হওয়ায় গতকাল খাতওয়ারি লেনদেনে শীর্ষে থাকা বস্ত্র খাতের লেনদেন কমে ১৪ কোটি টাকা। এদিন খাতটির লেনদেন হওয়া ৩০ কোম্পানির ১৬২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়; যা মোট লেনদেনের ২৫ শতাংশের বেশি। এর পরের অবস্থানে ছিল প্রকৌশল খাতের ২৪ কোম্পানির ৮১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২৪ কোম্পানির পৌনে ৭৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন। একক কোম্পানি হিসেবে এদিন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস কোম্পানির সর্বাধিক ৩৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো— জেনারেশন নেক্সট, ডেল্টা লাইফ, গোল্ডেন হারভেস্ট, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, সেন্ট্রাল ফার্মা, আরএন স্পিনিং, বেঙ্গল উইন্ডসর, গোল্ডেন সন্স, আরগন ডেনিমস ও ওরিয়ন ফার্মা।
দর বৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানি হলো— রহিমা ফুড, সেন্ট্রাল ফার্মা, হাক্কানী পাল্প, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ১ম প্রাইম ফিন্যান্স মি. ফা., লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, বিচ হ্যাচারি, গোল্ডেন হারভেস্ট, ফাইন ফুডস ও ইবিএল এনআরবি মি. ফা.।
অন্যদিকে দর হ্রাসে শীর্ষ ১০ কোম্পানি হলো— লিবরা ইনফিউশন, ইস্টার্ন ক্যাবলস, রংপুর ফাউন্ড্রি, ৪র্থ আইসিবি, মেট্রো স্পিনিং, মিথুন নিটিং, জুট স্পিনার্স, আলহাজ টেক্সটাইল, বিডি ল্যাম্পস ও রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
Blog Archive
- ► 2011 (2088)