ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিশেষ সাধারণ সভার (ইজিএম) ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে করা আবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার আবেদনকারী নিজেই সেটি প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে ইজিএম অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আর কোনো আইনি বাধা রইল না।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত মঙ্গলবার সব আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পরও ইজিএমটি বাতিল হয়। ওই ইজিএমে স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণের (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) অনুমোদিত কর্মসূচি বিশেষ সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণের কথা ছিল। এর পরদিনই আদালতে করা আবেদন প্রত্যাহার করে নেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহমেদ ইকবাল হাসান।
জানতে চাইলে আহমেদ ইকবাল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মোটেই ডিমিউচুয়ালাইজেশনের বিরুদ্ধে নই। আমিও চাই সুচারুভাবে এটি সম্পন্ন হোক। আদালতে আমি যে আবেদন করেছিলাম, সেটি ডিমিউচুয়ালাইজেশনের বিরুদ্ধে ছিল না। কোম্পানি আইনের কিছু অসংগতি তুলে ধরে আমি এই আবেদন করেছিলাম। এর মাধ্যমে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পরিপূর্ণ সুশাসন নিশ্চিত করায় ছিল আমার প্রত্যাশা। ডিমিউচুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য এবং ডিএসইর এক পরিচালকের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত আমি আবেদনটি প্রত্যাহার করেছি।’
যোগাযোগ করা হলে আবেদনকারীর আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন নিষেধাজ্ঞার আবেদন প্রত্যাহারের বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে অবহিত করা হয়েছে। এটি প্রত্যাহারের ফলে এখন ইজিএম অনুষ্ঠানে আর কোনো বাধা নেই।
এদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত আবেদনটি প্রত্যাহার হওয়ায় এখন দ্রুততম সময়ে আবারও নতুন করে ইজিএম অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিএসই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সভাপতি আহসানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার আবেদন প্রত্যাহারের পর এখন আইনজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন করে ইজিএম অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তবে ডিএসইর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার আবেদন প্রত্যাহারসংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনো তাঁদের হাতে পৌঁছায়নি। এই অবস্থায় ইজিএমের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের জন্য আজ বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের এক সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় ইজিএমের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে।
আইন অনুযায়ী, ডিমিউচুয়ালাইজেশন কর্মসূচি অনুমোদনপ্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে ইজিএম অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে প্রাথমিক শেয়ারধারীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ শেয়ার বণ্টন, ব্লক হিসাবে ৬০ শতাংশ শেয়ার সংরক্ষণ এবং স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান সদস্যদের মধ্যে লেনদেনের নিবন্ধন সনদ বা ট্রেক বণ্টন করতে হবে।
ডিএসই জানিয়েছে, আইনে নির্ধারিত ৩০ দিনের সময়সীমা গতকাল শেষ হয়েছে। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই ইজিএম সম্পন্ন করা গেল না।
প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি: মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে ইজিএমের আয়োজন করেছিল ডিএসই। ইজিএম শেষে সদস্যদের নিয়ে আলাদা একটি সম্মেলনও হওয়ার কথা ছিল। ওই সম্মেলনে সদস্যদের মধ্যে লেনদেনের নিবন্ধন সনদ, শেয়ারের বরাদ্দপত্র এবং ৬০ শতাংশ শেয়ার ব্লক হিসেবে সংরক্ষণের বিষয়ে প্রত্যেক সদস্যকে একটি করে নিশ্চয়তাপত্রও দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এ লক্ষ্যে সব আয়োজন চূড়ান্তও করা হয়। সেই সঙ্গে সদস্যদের রাতের খাবারেরও আয়োজন করা হয়।
ডিএসইর সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এই পুরো আয়োজনে প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়। ডিএসইর তহবিল থেকেই এই অর্থের সংস্থান করা হয়েছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইজিএম অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এই অর্থের বড় অংশই ‘অপব্যবহার’ হলো।