বন্ধু ছাড়া জীবন- ভাবলেই স্পষ্ট হয় জীবনের অপূর্ণতা। একজন বিপদে পড়া বন্ধুকে হাত ধরে টেনে তুলতে পারে আরেকজন বন্ধুই। সুতরাং আপনার উচিৎ জীবনের জন্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গ নেওয়া, তাদের এঁটে ধরে রাখা। কিন্তু সেইসঙ্গে আপনার উচিৎ কয়েক রকম বন্ধুর সঙ্গ ত্যাগ করা। জেনে নিন যে আট রকম বন্ধুকে আপনি ত্যাগ করবেন:
১। যে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী:
সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে কে না চায়। কিন্তু সবাই কি পারে সেখানে যেতে? প্রতিযোগিতায় অন্যদের পেছনে ফেলে তবেই সেখানে পৌঁছানো যায়। আপনার কোন বন্ধুই হয়তো দিন-রাত পরিশ্রম করছে এ জন্য, হয়তো আপনিই পেছনে পড়ছেন এতে- ক্ষতি নেই। কিন্তু অসুস্থ প্রতিযোগিতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সুতরাং এমন প্রতিযোগী বন্ধুকে আজই বলে দিন 'বিদায়'।
২। যে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় অনুপস্থিত:
যে আপনার জন্ম দিনে শুভেচ্ছা জানায় না। কিংবা সহমর্মিতা প্রকাশ করে না আপনার কোন নিকটজনের মৃত্যুতেও। যে প্রায় সব সময় ব্যস্ত থাকে নিজের কাজে। আজ আপনি হয়তো তাকে কল দিলেন, উত্তরে মেসেজ আসলো সপ্তাহখানেক পরে। আপনি হয়তো তাকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করলেন অথচ শেষ মুহূর্তে 'না' বললো সে- তাহলে আপনিই তাকে 'না' বলুন- কেননা সে তার জীবনে আপনার অস্তিত্বকে শ্রদ্ধা করে না।
৩। কথার ফুলঝুরিওয়ালা:
প্রকৃত বন্ধু সে-ই হয়, যাকে বিশ্বাস করা যায়। বিশ্বাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ; কথা আর কাজের সামঞ্জস্যতা। যে আপনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়- আর অনবরত দিতে থাকে অসংখ্য প্রতিশ্রুতি- এমন বন্ধুর সঙ্গ ছাড়ুন। কেননা, খুব শিগগির এতে আপনার আত্মসম্মানের ক্ষতি হবে। এর চেয়ে ভালো হয় যদি আপনি আপনার সময় ও শক্তি দুটোই জমা রাখেন তার জন্য- যে আপনার সঙ্গেই থাকতে চায় এবং আপনার পরীক্ষিত।
৪। বিরক্তিকর চটজলদি বন্ধু:
অহেতুক উদ্বিগ্ন অথবা যে আপনার অহেতুক দোষ খোঁজে- যে আপনার কাপড়, চুল, গাড়ি কিংবা যেকোনো বিষয়ে নাক গলায়- এমন খুঁতখুঁতে বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কোন মানে হয় না। সত্যিকার বন্ধুরা এসব করে না। সুতরাং এমন বন্ধুদের প্রশ্রয় দেবেন না।
৫। গোমড়া-মুখো বন্ধু:
মানুষ মাত্রই পরিচয় তার মননে- চিন্তায়, চিন্তার গভীরতায়। পরিচয় বহন করে তার যুক্তির তীক্ষ্ণ চর্চায়। তবে এসবই তাকে প্রকাশ করতে হয়। মনের ভাব নিষিদ্ধ কোনো বস্তু নয়। তাকে প্রকাশ করতে হয়। সেই সঙ্গে মেনে নিতে হয় যুক্তির হার। এসবের ভেতর দিয়েই মানুষ একে অন্যের পরিপূরক হয়। আপনি যদি আপনার বন্ধুর মধ্যে এই অবশ্যম্ভাবি উপাদানের অনুপস্থিতি দেখেন তবে আপনার উচিৎ হবে তার সঙ্গ ত্যাগ করা।
৬। সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত বন্ধু:
সামাজিক কর্মকাণ্ড- নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ একটি। এটা আপনার জীবনের সঙ্গে অবশ্যই থাকবে। কেননা আপনি শুধু আপনার নন, আপনি সমাজেরও। তবে এ জন্য মানুষ চিনতে হবে। আপনাকে জানতে হবে আপনার সমাজ কর্মী বন্ধু আসলেই এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত কী-না। কেননা এ ধরনের দোহাই দিয়ে অনেকেই চায় আপনার সহানুভূতি পেতে। যদি সত্যিকার বন্ধু রেখে এমন বন্ধুদের বেশি সময় দেন, তবে বুঝবেন- আপনি হাতের মুঠোয় সমস্যাকে তুলে আনলেন।
৭। অফিসের সহকর্মী বন্ধু:
বন্ধু সব জায়গায়ই থাকতে পারে। এমন কি অফিসেও। কিন্তু সমস্যা হলো, বাইরের কোন বন্ধুকে 'না' বলা যতটা আপনার জন্য সহজ, অফিসের বেলায় তা প্রায়ই কঠিন হয়। এতে আপনার ক্যারিয়ারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। তাই ভালো হয় অফিসের সহকর্মীকে ভালো সহকর্মী হিসেবেই গ্রহণ করা। আর যদি থেকেই থাকে কোন সত্যিকারের বন্ধু, তারপরও আপনার একটি সীমানা থাকা উচিৎ অন্তত অফিসে- যদি আপনি আপনার চাকরি ও বন্ধু দুটোই হারাতে না চান।
৮। পরচর্চা বা গুজব রটানো বন্ধু:
এমন অনেক বন্ধুই আছে যারা নানা গুজবের জন্ম দিতে উৎসাহী। আর গুজব রটনাকারীরা কথাও বলে বেশি। তার একই নিয়মিত কাজ হলো আপনার কানভারী করা। এ জন্য সার্বক্ষণিক কারণে-অকারণে আপনার ডেস্কের চারপাশে ঘুরঘুর করবে। আপনি এমন গুজব কারবারীর কিছু ব্যাপার ক্ষমা করতে চান কিংবা সহ্য করতে চান কিছু অত্যাচার- ঠিক আছে। কিন্তু সে কি ছোট্ট খুকিটি নাকি যে সর্বদাই আপনার ডেস্কে অকারণ বকবকানি করতে থাকবে। তা ছাড়া আপনি চান না আপনার বস বা অন্য কেউ আড়ি পাতুক আপনার দিকে। চান কি? এটি অহেতুক আপনার ওপর সন্দেহের সৃষ্টি করবে।