চলমান মন্দা পরিস্থিতি কাটিয়ে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। গতকাল সোমবার এসইসিতে অনুষ্ঠিত পৃথক দু'টি বৈঠকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পৰ থেকে বাজার সংশিস্নষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়।
সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে এসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা মার্চেন্ট ব্যাংক এবং স্টক এঙ্চেঞ্জের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দু'দফায় বৈঠক করেন। বৈঠকে পুঁজিবাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে এসইসির পৰ থেকে শেয়ারবাজারের বর্তমান অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিবাচক ভূমিকার ওপর গুরম্নত্বারোপ করা হয়। বিশেষ করে বাজারে নিম্নমুখী ধারা শুরু হলে স্থিতিশীলতার স্বার্থে শেয়ার বিক্রির চাপ কমাতে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া তারল্য প্রবাহ বাড়াতে এসব প্রতিষ্ঠানকে মার্জিন ঋণের হার বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়।
এসইসি কর্মকর্তারা বলেন, মন্দা পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এই আতঙ্ক দূর করার ৰেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও অপরিণত আচরণ করছে বলে কমিশন মনে করছে। বাজারে শেয়ারের দর কমে গেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানও বিক্রির দিকে ঝুঁকে পড়ে। এ ধরনের প্রবণতা পুঁজিবাজারের জন্য নেতিবাচক।
তাঁরা বলেন, বড় দরপতনের পরিস্থিতি তৈরি হলে বাজারের স্বার্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। এ সময় শেয়ার বিক্রির প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এর মধ্য দিয়ে বাজারে ভারসাম্য তৈরি হবে। এছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক দূর করার ৰেত্রেও মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হলে বাজারে দীর্ঘস্থায়ী মন্দা তৈরি হবে। এতে মধ্যসত্মতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও ৰতিগ্রসত্ম হবে।
বৈঠকে মার্চেন্ট ব্যাংকারদের পৰ থেকে জানানো হয়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পৃথক কোম্পানিতে পরিণত হওয়ায় ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণের পদ্ধতি কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের পৰে মার্জিন ঋণের হার বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এৰেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পৰ থেকে একক গ্রাহকের জন্য নির্ধারিত ঋণ সীমা সংক্রানত্ম নির্দেশনা মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের জন্য শিথিল করা হলে মার্জিন ঋণে বাড়ানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করা সহজ হবে।
তবে কোন কোন মার্চেন্ট ব্যাংকের পৰ থেকে জানানো হয়, সামগ্রিকভাবে বাজারে তারল্য সঙ্কট অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই মার্জিন ঋণের হার বাড়িয়েছে। কিন্তু বাজারে মন্দা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় গ্রাহকরা ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনায় উৎসাহিত হচ্ছে না। অনেক ৰেত্রে ঋণ বাড়ানোর পর গ্রাহকরা সেখান থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
তারল্য সঙ্কট দূর করার বিষয়ে এসইসি কর্মকর্তারা বলেন, পুঁজিবাজারে তারল্য সমস্যা দূর করতে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু ইতিবাচক সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। কলমানি সুদের হার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়াতে রেপোর মাধ্যমে প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোকে উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ টাকা ধার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একক গ্রাহকের ঋণসীমার শর্ত শিথিল করা হয়েছে।