Time is only 11 days

Friday, May 04, 2012 Unknown
পদ ধরে রাখার জন্য আর মাত্র ১১ কার্মদিবস সময় পাচ্ছেন পরিচালকরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২১ মের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানির পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। ফলে সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিচালকদের কাছ থেকেও শেয়ার ধারণের প্রবণতা বেড়ে গেছে। শুধু গত আট দিনে বাজার থেকে সরাসরি এবং উপহার ও হস্তান্তর বাবদ প্রায় সাত কোটি শেয়ার লেনদেনের ঘোষণা এসেছে পরিচালকদের কাছ থেকে। তবে শেয়ার ধারণের ঘোষণা যেমন আসছে তেমনি শেষ সময়ে এসে এখনো অনেক পরিচালক নানাভাবে বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। গতকালও যেমন সকালে প্রথম এক ঘণ্টায় বাজারে সূচক ও লেনদেন যখন ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই নতুন করে শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে নতুন করে রিট হচ্ছে বলে গুজব ছড়ানো হয়।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, এসইসি পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার ধরে রাখার বাধ্যবাধকতা জারির পর গত বুধবার পর্যন্ত ৩২২ ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালকের কাছ থেকে সরাসরি বাজার থেকে ২১ কোটি ৫৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৯টি শেয়ার কেনার ঘোষণা এসেছে। ইতিমধ্যে অনেক পরিচালক তাঁদের শেয়ার কেনা সম্পন্ন করেছেন। একই সময়ে ৭৩ পরিচালক আরো ১৭ কোটি ৮২ লাখ ৮২ হাজার ২৫৮টি শেয়ার উপহার ও হস্তান্তর হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সব মিলিয়ে পদ ধরে রাখার জন্য পরিচালকরা এ পর্যন্ত ৩৯ কোটি ৪০ লাখ ৯৫ হাজার ৮১৭টি শেয়ার লেনদেন করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২২ নভেম্বর এসইসি সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ এবং ব্যক্তিগতভাবে পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার ধরে রাখার বাধ্যবাধকতা জারি করে। এ সময়ের মধ্যে শর্তপূরণের জন্য তালিকাভুক্ত ২৩২ কম্পানির এক হাজার ৩২৫ পরিচালককে প্রায় দুই শ কোটি শেয়ার কিনতে হবে। এই জন্য ২১ মে পর্যন্ত তাঁদের মাত্র ১১টি কার্যদিবস হাতে পাচ্ছেন। এই সময়ে শেয়ার কিনে শর্তপূরণ করতে হলে পরিচালকদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি শেয়ার কেনার ঘোষণা আসতে হবে, জানালেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।
এদিকে, সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার ধারণের ঘোষণা বেড়ে যাওয়াকে বাজার বিশ্লেষকরা ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। এ জন্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া আদালতে রিট করে শেয়ার ধারণের সময়সীমা বাড়ানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, তা ভেস্তে যাওয়ায় অনেক পরিচালক গুজবের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম ধস নামানোর ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছেন। বাজার একটু ভালো হতে থাকলেই শেয়ার ধারণ নিয়ে এসইসিকে জড়িয়ে হাউসগুলোয় নানাভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তবে গত আট কার্যদিবসে যে হারে শেয়ার কেনার ঘোষণা এসেছে, তাতে বাজার আবারও ঘুরে দাঁড়াবে বলে জানালেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেই। এই আট দিনে পরিচালকদের কাছ থেকে যে সাত কোটি শেয়ার লেনদেনের ঘোষণা এসেছে, তার মধ্যে সরাসরি বাজার থেকে চলতি দরে কেনা হবে চার কোটি ২২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৭০টি শেয়ার। এর মধ্যে গতকাল সিটি ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালক এ-১ পলিমার লিমিটেড ৫৮ লাখ ৯ হাজার শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন, যা পরিচালকদের কাছ থেকে আসা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ শেয়ার কেনার ঘোষণা। নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ার কেনার জন্য ঘোষণার দিন থেকে ৩০ কার্যদিবস সময় পেলেও পদ ধরে রাখার জন্য কোটা পূরণে পরিচালকদের ২১ মে অর্থাৎ পরবর্তী ১১ কার্যদিবসের মধ্যেই শেয়ার কেনা সম্পন্ন করতে হবে। যাঁরা এ সময়ের মধ্যে শেয়ার কিনে ২ শতাংশ শেয়ার হাতে রাখার কোটা পূরণ করতে ব্যর্থ হবেন, তাঁদের নিয়ম অনুযায়ী পরিচালক পদ হারাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সালেহ জহুর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখন থেকে যে পরিচালকই শেয়ার কেনার ঘোষণা দেবেন, তাঁদের এসইসি নির্ধারিত ২১ মের মধ্যেই কোটা পূরণ করতে হবে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবে আগামী কিছুদিন বাজারে পরিচালকদের অংশগ্রহণ বেড়ে যাবে। এতে বাজারের স্বাভাবিক গতিও ফিরে আসবে বলে মনে হচ্ছে।'
অবশ্য এ জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসিকে কঠোর হতে হবে বলে তিনি মনে করেন। ড. সালেহ জহুর বলেন, 'শেয়ার না কেনার জন্য এখনো নানাভাবে অনেক পরিচালক ছলচাতুরী করার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে এসইসি ও সংশ্লিষ্টদের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে হবে। এ ছাড়া পরিচালকরা আগে যেভাবে এসইসিকে না জানিয়ে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে যাতে সেভাবে আর কোনো অনিয়ম করতে না পারেন, সে জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর হতে হবে।'

Blog Archive