খাবিনা? জোড় কইরা বাইন্দা খাওয়ামু- How to stop hunger strike

Sunday, October 20, 2013 Other
গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দিদের অনশন ভাঙাতে ভয়ংকর সব শাস্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। বন্দিদের মনোবল ভাঙাই এসব শাস্তির লক্ষ্য। বন্দিদের কাগজপত্র ও তাদের আইনজীবীদের বক্তব্য থেকে জানা গেছে এ তথ্য। ওষুধ বন্ধ করা, নির্জন কক্ষে আটক রাখা, কাপড়চোপড় খুলে নেওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো, কক্ষের তাপমাত্রা বাড়ানো-কমানো, ব্যবহারের জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়াসহ নানা উপায় অবলম্বন করে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন এ কারাগারের রক্ষীরা। নির্যাতনের কৌশলও গোপন রাখা হয়। মার্কিন সামরিক বাহিনী সম্প্রতি এক ঘোষণায় জানায়, গুয়ানতানামো বে কারাগারের বন্দিদের অনশনের অবসান হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণাকে 'ভুয়া' বলে অভিহিত করে। তারা জানায়, সেখানে এখনো অন্তত ১৬ জন বন্দিকে জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে এবং দুজন হাসপাতালে আছে। এক বন্দি জানান, কারাগারে আটক সর্বশেষ ব্রিটিশ নাগরিক শাকের আমেরের (৪৪) ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়, তাতে তাঁর পক্ষে অনশন অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। কারাগারে বন্দি সিরিয়ার নাগরিক আবু ওয়ায়েল দিয়াব (৪২) জানান, কারাগারের দাঙ্গা বিভাগের এঙ্ট্রিম রিঅ্যাকশন ফোর্সের সদস্যরা আমেরের অনশন ভাঙানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে দিনে পাঁচবার তাঁর কক্ষে ঢুকত। আমেরের চিকিৎসা-সংক্রান্ত নথি থেকে জানা যায়, সেনারা তাঁকে খাবার, পানি ও ওষুধ দিত না। এরপর সেনারা তাঁর কক্ষে আবার প্রবেশ করত এবং খাবার না দেওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করত। মূলত তাঁকে জাগিয়ে রাখাই ছিল এদের কৌশল। আমেরের মতোই কারাগারে ১১ বছর বন্দি আছেন ওয়ায়েল। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওয়ায়েল বলেন, 'সেনারা আমেরকে ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে পোশাক খুলে নিত এবং একটি মাত্র অন্তর্বাস পরিয়ে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রাখত, যা ছিল তাঁর জন্য অপমানকর।' ইয়েমেনের সামির মুকবেল নামের এক বন্দি জানান, অনশন ভাঙাতে সেনারা বন্দিদের নির্জন কক্ষে আটক রাখে। বন্দিদের অনশন আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ওই বন্দিশিবির বন্ধের ঘোষণা দেন। আহমেদ বেলবাচা নামের আলজেরিয়ার এক বন্দি জানান, নির্জন কক্ষে আটক রাখার কৌশলটি কাজে লাগিয়ে বন্দিদের কাছ থেকে রাজনৈতিক বক্তব্যও আদায় করা হয়। এ ছাড়া সেনারা বন্দিদের ওপর নির্যাতনের ব্যবস্থা হিসেবে তাদের জিনিসপত্রও নিয়ে যেত। তিনি বলেন, 'আমার চশমা, আইনি কাগজপত্র, টুথব্রাশ, টুথপেস্টসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র তারা নিয়ে যায়।' বেলবাচা, মুকবেল ও আমেরের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। তাঁদের আইনজীবী নাবিল হাদজারাব এসব তথ্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জানিয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী কোরি ক্রাইডার বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ উল্লসিত কণ্ঠে বলেছে যে অনশনের অবসান হয়েছে। কিন্তু বন্দিদের মনোবল ভাঙতে তারা যে ভয়ংকর কৌশল তাদের ওপর চালিয়েছে, তা বলতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এখনো সেখানে অন্তত ১৬ জন বন্দি অনশন করছে, যাদের জোর করে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দিনে দুইবার খাওয়ানো হচ্ছে।' কিউবায় গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবিরের ১৬৬ জন বন্দির মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে অনেক দিন ধরেই। জানা গেছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বন্দিশিবিরটি বন্ধের কাজ চূড়ান্ত করতে একজন কূটনীতিকও নিয়োগ দিয়েছে। এরই মধ্যে ৮০ জনকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পাকা হয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ তাদের ছাড়া হবে তা জানা যায়নি। বিচার ছাড়াই অনির্দিষ্টকাল ধরে আটকে রাখার প্রতিবাদে এবং কারাগারে উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে গত ফেব্রুয়ারিতে বন্দিরা অনশন শুরু করে। একে একে ১৬৬ বন্দির মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অনশনে যোগ দেয়। সূত্র : অবজারভার।

Blog Archive