(৩৪২) উত্থান পর্ব::পতন পর্ব

Monday, April 11, 2011 Unknown
দেশের পুঁজিবাজারের বিরাট উত্থান বা স্ফীতি পর্বে যেসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান শীর্ষ ক্রেতা ছিল, পতন বা ধস পর্বেও ঘুরেফিরে তাদের অধিকাংশকে আবার শীর্ষ বিক্রেতা হিসেবে দেখা গেছে
পুঁজিবাজারের অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে কমিটি কাজে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সক্রিয়তাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে প্রধান করে গত ২৭ জানুয়ারি গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বক্তব্য উঠে এসেছে এপ্রিল সকালে কমিটির প্রধান প্রতিবেদনটি দাখিল করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে
প্রতিবেদনে বাজারের উত্থান-পতন প্রক্রিয়ায় যেসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রেখেছে, তাসেকেন্ডারি বাজারের শীর্ষ ঘটকেরা’ এবংপ্রাক-আইপিও আকাশচুম্বী মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যক্তি সংস্থা’—এমন দুটি ভিন্ন পর্বে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে একই সঙ্গে কমিটি বাজারের উত্থানের দুটি পর্ব চিহ্নিত করেছে
কমিটি বলেছে, পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক (নভেম্বর-ডিসেম্বর) ধস বা পতন কোনো স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না আর এবারের ধস ১৯৯৬ সালের ধসের মতোও নয় সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির এবং ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংঘটিত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের মূল ঘটনা অনেকটা পর্দার অন্তরালে প্রাথমিক বাজারের কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত এটি এসইসির সমর্থন-সহায়তায় ইস্যুয়ার, ইস্যু ব্যবস্থাপক, মূল্যায়নকারী (ভ্যালুয়ার), চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট এবং প্লেসমেন্টধারীদের একটি শক্তিশালী চক্রের অবৈধ যোগসাজশের (সিন্ডিকেশন) কুফল বলে মন্তব্য করেছে কমিটি
প্রতিবেদন মতে, আইপিও ছাড়ার আগে প্রিমিয়াম, বুক বিল্ডিং এবং প্লেসমেন্টের অপপ্রয়োগে যে বিশাল দরস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছিল, সে চাপই সেকেন্ডারি বাজারে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে আইপিওর আগে মূল্য কেলেঙ্কারি রোধ করতে এসইসি ব্যর্থ না হলে সম্ভবত এবার বাজারধস হতো না এতে বলা হয়েছে, দুই উত্থান পর্বে আইসিবি অমনিবাস হিসাবে শেয়ার কিনেছিল দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো আর পতনের দুই মাসে আইসিবির মোট বিক্রি দুই হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা বলা হয়, উল্লম্ফন ধস—উভয় সময়েই সিন্ডিকেট আইসিবির অমনিবাস হিসাবের আড়ালে খেলা করেছিল, এটা প্রায় নিশ্চিত
উত্থান পর্ব: প্রতিবেদনে বাজারে বুদ্বুদ সৃষ্টি বা স্ফীতির প্রথম সময়কাল বিবেচনা করা হয়েছে ২০০৯ সালের অক্টোবর-নভেম্বরকে সময় বাজারের সূচক দুই হাজার ৮০০ পয়েন্ট থেকে চার হাজার ৫০০ পয়েন্টে ওঠে তারপর আবার ২০১০ সালের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে সূচক ওঠে চার হাজার ৯৪১ থেকে পাঁচ হাজার ৬১২ পয়েন্টে সময়কালকে দ্বিতীয় পর্ব বলছে কমিটি সময় মূল্যবৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিতভাবে শেয়ার কেনা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদন অনুসারে, এই দুই সময়কালে বাজারের প্রায় একই চক্র বা সিন্ডিকেট কাজ করেছে ক্ষেত্রে আইসিবির ভূমিকা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি সরকারি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও ২০০৯ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে বড় আকারে ট্রিগার ক্রয়ে যোগ দেয় ১৩টি অমনিবাস হিসাবের মাধ্যমে আইসিবি দুই মাসে কিনে নেয় ৭৪০ কোটি টাকার শেয়ার অঙ্ক এক হাজার কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে
প্রতিবেদন অনুসারে আইসিবির এসব অমনিবাস হিসাবের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে পরিচয় গোপনকারী খেলোয়াড়েরা, যার দায়িত্ব আইসিবি অস্বীকার করতে পারে না এসব ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ইয়াকুব আলী খোন্দকার, গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ সিরাজুদ্দৌলা, মো. খলিলুজ্জামান, মো. শহীদুল্লাহ, আরিফুর রহমান প্রমুখ ছাড়া আবু সাদাত মো. সায়েম নামের এক ব্যক্তি একাধিক হিসাবেও শেয়ার কিনেছেন আর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক, উত্তরা ফিন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পূবালী ব্যাংক এরা বুদ্বুদ সৃষ্টিকারী ক্রয়ে অংশ নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে উত্থান পর্বের প্রথম দফায় যারা শীর্ষ ক্রেতা ছিল, দ্বিতীয় দফায়ও (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০১০) তাদের অধিকাংশই শীর্ষ ক্রেতা ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় সময় আটটি অমনিবাস হিসাবের মাধ্যমে আইসিবি কিনে নেয় এক হাজার ১৪৩ কোটি টাকার শেয়ার এখানে নাম এসেছে গোলাম মোস্তফা, আরিফুর রহমান, সৈয়দ সিরাজুদ্দৌলা, ইয়াকুব আলী খোন্দকার, আবদুল মতিন, শাহাদাত হোসেন প্রমুখের আর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আগেরগুলোসহ নতুন যোগ দেয় ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি
পতন পর্ব: কমিটির মতে, উত্থান যেহেতু হয়েছে, পতনও অনিবার্য ছিল আর এই পতনের মূলে আবার ছিল উল্লিখিত দুই সময়কালের উল্লম্ফন প্রতিবেদন অনুসারে, সময়ের শীর্ষ খেলোয়াড়েরা বাজার অতিরিক্ত তেজীকরণে অবদান রেখেছে তবে এদের আন্তসংযোগ (নেক্সাস) নির্ণয় করা না গেলে আইন ভঙ্গকারী বলা সংগত হবে না বলে কমিটি মনে করছে
বাজারেরপতন পর্ব’ ধরা হয়েছে ২০১০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরকে, যাকেঝড়ের পূর্ব সময়’ বলেও অভিহিত করেছে কমিটি ২০১০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাজারে কমবেশি আট হাজার ৩০০ পয়েন্টে লেনদেন চলছিল প্রতিবেদনে পতন পর্বের ব্যাখ্যায় বলা হয়, বাজারে উত্থানের দুই পর্বে যেসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান শীর্ষ ক্রেতা ছিল, তাদের অধিকাংশই ২০১০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের পতন পর্বে ছিল শীর্ষ বিক্রেতা নভেম্বরে নয়টি অমনিবাস হিসাবের মাধ্যমে এক হাজার ৩৭১ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বরে নয়টি অমনিবাস হিসাবের মাধ্যমে ৯৭৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে আইসিবি
প্রতিবেদনে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসকে অস্থিরতার মাস বলে চিহ্নিত করা হয়েছে বলা হয়েছে, মাসের শীর্ষ বিক্রেতারাও ২০১০ সালের বুদ্বুদ বিস্ফোরণ প্রক্রিয়াকালে শীর্ষ বিক্রেতা ছিল জানুয়ারিতেও এবি ব্যাংক, কে এম আরিফুর রহমান, আমিন রেজওয়ানী, এলিজা রহমান, মো. ভাই নুরজাহান হুদা, মো. খলিলুজ্জামান, রেহানা খান মজলিশ, নৃপেন চৌধুরী, রিচার্ড ডি রোজারিও, সারা খন্দকার, ইয়াকুব আলী খোন্দকার, ড্রিম হোল্ডিং, ড্রিমল্যান্ড হোল্ডিং, সৈয়দ আবু জাফর, সৈয়দ সিরাজুদ্দৌলা, রাশেদা আক্তার মায়া প্রমুখ সক্রিয় ছিলেন
এঁদেরসম্ভাব্য সন্দেহজনক ম্যানিপুলেটর’ হিসেবে অভিহিত করে হিসাবের কেওয়াইসি (গ্রাহক তথ্যাদি) পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে কমিটি এই সময়কালে শীর্ষ বিক্রেতা হিসেবে ফ্রন্টিয়ার ফান্ড, আইসিবি অমনিবাস, ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো লিমিটেড, এভারেস্ট ক্যাপিটাল, যারা নামরিন, সোমা আলম রহমান, আরিফুর রহমান, গোলাম কিবরিয়া, মো. খলিলুজ্জামান, কাজী ইউসুফ খালেদ প্রমুখ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে
প্রতিবাদ: এপ্রিল প্রকাশিতকারসাজিতে জড়িত ৬০ ব্যক্তি’ শীর্ষক সংবাদে ডা. এইচ বি এম ইকবালের নাম থাকায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী এম মোকছাদুল ইসলাম লিখিত প্রতিবাদপত্রে তিনি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক শেয়ারবাজার ধসের সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন, বরং সব নিয়ম মেনেই তিনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন এবং বিনিয়োগসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য তাঁর আয়কর নথিতে যথাযথভাবে উল্লেখ করেছেন

Blog Archive