(৫১৮) ১০ দিনের মধ্যে

পুঁজিবাজারে ধসের জন্য দায়ীরেদ কেবল সেনাশাসনে বিচার সম্ভব- ইব্রাহিম খালেদের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে নোটিসে বলা হয়েছে, বিশেষ করে 'বিতর্কিত' প্রতিবেদনে উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেবল মার্শাল ল'তে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব বলে করা আপনার বক্তব্য সংবিধান-বহির্ভূত।

'এর মাধ্যমে আপনি পরোক্ষভাবে মার্শাল ল'কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ কারণে আপনার বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ আনা যেতে পারে।'

'এ সব কারণে আপনি একটি সরকারি পদে থাকার মতো বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। বিশেষ করে সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে থাকতে পারেন না।'

আপনি ওই পদে থাকার যোগ্যতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছেন। পদটি আঁকড়ে থাকার কোন অধিকার আপনার নেই।- এ কথা উল্লেখ করে নোটিসে বলা হয়েছে, তাই এই নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে পদটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।



 A lawyer has sent a legal notice to stocks probe body chief Ibrahim Khaled seeking his resignation as Krishi Bank chairman.

The notice, issued on behalf of one advocate Abul Hashem, said a writ petition would be filed in the High Court if Khaled did not resign within 10 days of receiving a copy of the notice.

The notice said, "Despite the report being highly confidential, you have published it in the media. Already you have made some objectionable comments about several people and companies in the electronic media.

"You have hinted that those people and institutions are involved in money laundering and share market debacle."

"Despite the report being government property, you have deliberately published it and violated trust," the notice said.


(৫১৭) আপনার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ

ওই প্রতিবেদন অত্যন্ত গোপনীয় হলেও আপনি [ইব্রাহিম খালেদ] তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন- এ কথা উল্লেখ করে নোটিসে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানি নিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেশ কিছু আপত্তিজনক মন্তব্য করেছেন।

'ওই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অর্থ পাচার ও শেয়ার বাজার বিপর্যয়ে দায়ী বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওই প্রতিবেদন সরকারের সম্পদ হওয়া সত্ত্বেও আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তা প্রকাশ করে বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন।'

নোটিসে বলা হয়েছে, আপনার ও আপনার কমিটির সদস্যদের স্পষ্ট স্বাক্ষর সম্বলিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত শেয়ার বাজার প্রতিবেদনের একটি কপি আমার মক্কেলের নিকট রয়েছে।

'প্রতিবেদন প্রকাশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিনেন্স-১৯৬৯ এর ধারা-১৯ ও তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর ধারা-৭ এরও লংঘন। এর মাধ্যমে আপনি ও আপনার কমিটির সদস্যরা বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধ এড়াতে পারেন না।'

'আপনার বক্তব্য পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং শেয়ার বাজারের সূচকের পতন হচ্ছে।'

'আপনার এবং আপনার পুত্রের বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আপনার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।'



 A lawyer has sent a legal notice to stocks probe body chief Ibrahim Khaled seeking his resignation as Krishi Bank chairman.


The notice, issued on behalf of one advocate Abul Hashem, said a writ petition would be filed in the High Court if Khaled did not resign within 10 days of receiving a copy of the notice.


The notice said, "Despite the report being highly confidential, you have published it in the media. Already you have made some objectionable comments about several people and companies in the electronic media.


"You have hinted that those people and institutions are involved in money laundering and share market debacle."


"Despite the report being government property, you have deliberately published it and violated trust," the notice said.

(৫১৬) আপত্তিজনক মন্তব্যে

পুঁজিবাজার তদন্ত প্রতিবেদন 'প্রকাশ ও আপত্তিজনক মন্তব্যের' অভিযোগে কমিটিপ্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে লিগ্যাল নোটিস দিয়েছেন এক আইনজীবী।

বুধবার দেওয়া ওই নোটিসে বলা হয়, নোটিশের অনুলিপি পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে পদত্যাগ না করলে হাইকোর্টে রিট করা হবে।

অ্যাডভোকেট আবুল হাসেমের পক্ষে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহান এই নোটিস পাঠান।

লিগ্যাল নোটিসের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতিবেদনটি 'সরকারের সম্পদ' হওয়া সত্ত্বেও তা 'উদ্দেশ্যমূলকভাবে' প্রকাশ করে ইব্রাহিম খালেদ 'বিশ্বাসভঙ্গ' করেছেন।

A lawyer has sent a legal notice to stocks probe body chief Ibrahim Khaled seeking his resignation as Krishi Bank chairman.

The notice, issued on behalf of one advocate Abul Hashem, said a writ petition would be filed in the High Court if Khaled did not resign within 10 days of receiving a copy of the notice.

The notice said, "Despite the report being highly confidential, you have published it in the media. Already you have made some objectionable comments about several people and companies in the electronic media.

"You have hinted that those people and institutions are involved in money laundering and share market debacle."

"Despite the report being government property, you have deliberately published it and violated trust," the notice said.

(৫১৫) লুট করা অর্থ ফেরত পাওয়া

বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেছেন, দুর্নীতি রোধে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তবে এখনই এর ফল পাওয়া যাবে না। আগামীতে এ কাজের ফল পাওয়া যাবে।

দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের পাশাপাশি দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে এমন ধরণের প্রতিষ্ঠানে অটোমেশন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

বুধবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ব্যবসায়িক নীতি সংক্রান্ত কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে বাণিজ্যমন্ত্রী একথা বলেন।

আইবিএফবি’র প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে  অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, সম্মানিত অতিথি বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও বিশেষ অতিথি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি একে আজাদ।

ফারুক খান বলেন, অনৈতিকতার সাথে নৈতিকতার লড়াই সব সময় থাকবে। ব্যক্তিস্বার্থের ক্ষেত্রে মানুষ নৈতিকতার বিষয়টি ভুলে যায়।

নৈতিকতার যুদ্ধে সবাইকে জয়ী হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

অটোমেশন চালু হলে দুর্নীতি অনেকটা চলে যাবে উল্লেখ করে উদাহরণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, আরজেএসসিতে আগে কোনো কোম্পানিকে নিবন্ধন করতে হলে ৯০ দিন সময় লাগতো। এখন সে কাজ ৪ ঘন্টায় করা যায়।


বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, সব ধরনের পেশাতেই অন্তত: ১০ শতাংশ লোক অনৈতিক কাজ করে থাকে। কিন্তু এ ধরনের লোক সংখ্যায় কম হলেও তারা অত্যন্ত শক্তিশালী। এদের মোকাবেলা করতে হলে, সততা ও নৈতিকতার এক ধরনের সমন্বয় দরকার।

সাম্প্রতিক পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এখানে ’৯৬ সালের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত ছিল।

দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে ড. কামাল বলেন, ‘আমরা কোনো ফিন্যান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং চাই না।’

তিনি বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে পুঁজিবাজার থেকে লুট করা অর্থ ফেরত পাওয়া সম্ভব।

(৫১৪) সংক্ষিপ্ত সংবাদ

মুন্নু জুট স্টাপলারের পরিচালনা পর্ষদের সভা

মুন্নু জুট স্টাপলার জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভা আগামী ২৮ এপ্রিল বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লিস্টিং রেগুলেশন অনুযায়ী এ সভায় অর্থনৈতিক প্রতিবেদনসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সূত্র: ডিএসই ওয়েবসাইট

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৮০০০ শেয়ার ক্রয়ে ইচ্ছুক

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের একজন উদ্যোক্তা এম এ রউফ জানিয়েছেন, তিনি আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ১৮ হাজার শেয়ার ক্রয় করতে ইচ্ছুক।

(৫১৩) ২৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ২৩৯টির

দেশের পুঁজিবাজারে বুধবার সাধারণ সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন। তবে লেনদেন শুরু হয় নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, আজ নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয়ে ২০ মিনিটের মাথায়ই সূচক ৫৫ পয়েন্ট নেমে যায়। তবে আধা ঘণ্টা পর ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ১৭.৫০ পয়েন্ট কমে ৫৭৮৮.৮০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এরপর বেশ কয়েকবার ওঠানামা করে সূচক। তবে বেলা একটার পর থেকে সূচক বাড়তে থাকে, যা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
বিকেল তিনটায় লেনদেন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বা ২৭৬.৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬০৮৩.২৮ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ডিএসইতে হাতবদল হওয়া ২৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ২৩৯টির, কমেছে চারটির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠানের দাম।
এ ছাড়া ডিএসইতে আজ লেনদেনের পরিমাণ ৫০৭ কোটি টাকা, যা গতকালের চেয়ে ৬১ কোটি টাকার বেশি।
ডিএসইতে আজ লেনদেনে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বেক্সিমকো, বেক্সটেক্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, ফু-ওয়াং সিরামিকস, আফতাব অটো, মালেক স্পিনিং, বিএসআরএম স্টিল, তিতাস গ্যাস, লঙ্কা-বাংলা ফিন্যান্স ও এনবিএল।
আজ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফিনিক্স ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের দাম। এ ছাড়া ফু-ওয়াং ফুডস, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, কাশেম ড্রাই সেল, লঙ্কা-বাংলা ফিন্যান্স, দেশবন্ধু পলিমার, এশিয়া ইনস্যুরেন্স, বিডি ওয়েল্ডিং ইলেকট্রডস, প্রাইম ইনস্যুরেন্স ও বিচ হ্যাচারিজ দাম বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০-এর তালিকায় রয়েছে।
অন্যদিকে আজ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক চার দশমিক ১০ শতাংশ বা ৬৬৯.৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ১৬৯৭৩.৭৮ পয়েন্টে দাঁড়ায়। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৯১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১৮৩টির, কমেছে সাতটির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানের দাম। আজ স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ৭৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা গতকালের চেয়ে ১৩ কোটি টাকা বেশি।

(৫১২) ঝিল বাংলা সুগার মিলস

অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ঝিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন আজ বুধবারের জন্য স্থগিত করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। আজ লেনদেন শুরু হওয়ার ১০ মিনিটের দিকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আজ বুধবার ডিএসইর ওয়েব সাইটে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ডিএসই।

(৫১১) ১২ শতাংশ শেয়ার লভ্যাংশ

বিজিআইসির পরিচালনা পর্ষদ ২০১০ সালের জন্য ১২ শতাংশ শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আজ বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ২৮ জুন বেলা ১১টায় ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেন রোডে ঢাকা লেডিস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হবে। এজিএমের রেকর্ড ডেট ৮ মে। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, ওই সময় শেয়ারপ্রতি আয় ২.৪৬ টাকা, শেয়ারপ্রতি মোট সম্পদমূল্য ২১.৬০ টাকা ও নেট ওপেনিং ক্যাশ ফ্লো ১.০৮ টাকা।

(৫১০) শেয়ারবাজারকে আরো শক্তিশালী ও উন্নত করার জন্য

বর্তমানে পুঁজিবাজার যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে তার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে আর আইন অনুযায়ী যার যা কাজ তা তারা করেনি বা করতে পারেনি বলেই পুঁজিবাজারের এই অবস্থা ভবিষ্যতে শেয়ারবাজারকে আরো শক্তিশালী উন্নত করার জন্য আইনের দুর্বলতাকে সংশোধন করা হবে
আইন, বিচার সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজারের সমস্যা ২০১০ এবং নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অকার্যকারিতা-বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস্ এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দে এই সেমিনারের আয়োজন করে সেমিনারের সহ-আয়োজক ছিল উন্নয়ন সমন্বয়
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এম বাকী খলিলি বলেন, যে হারে শেয়ারবাজার উঠেছিল তার তিন গুণ বেশি হারে পতন হয়েছে মার্জিন ঋণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা শতর্কতামূলক ব্যবস্থার কারণ বাজার পতনে ভূমিকা রেখেছে
আলোচনায় আরো অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক . মুজিব উদ্দিন অহমেদ
সেমিনারে আইন, বিচার সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সেকেন্ডারি মার্কেটে কম্পানিরা সম্পদ দেখে বিনিয়োগ করার কথা থাকলেও কেউ তা মানছে না ভবিষ্যতে শেয়ারবাজারকে আরো শক্তিশালী উন্নত করার জন্য প্রয়োজনে আইনের দুর্বলতাকে সংশোধন করা হবে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর . ফরাসউদ্দিন বলেন, অনেক ব্যাংক টানা তিন বছর লাভ করতে না পারলেও গত বছর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কয়েক কোটি টাকা লাভ করেছে পাঁচটি ব্যাংক হাজার কোটি টাকার ওপর লাভ করেছে অনেক রাঘব বোয়াল ঋণ খেলাফি তাদের হিসাব পূর্ণ করেছে

(৫০৯) সরকারের নানা পদক্ষেপে তা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চলতি বছরের শুরুতে বাজারে যে ধস নেমেছিল, সরকারের নানা পদক্ষেপে তা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। মূলত সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণেই বাজার স্থিতিশীল হতে শুরু করে। কিন্তু ধসের কারণ তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনটি ঘিরে আবার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
তাঁদের মতে, তদন্ত প্রতিবেদনে কারসাজির জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে এমন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন বা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে কোনো ধরনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীরা নির্দেশনাহীন অবস্থায় নিষ্ক্রিয় থাকাকেই বেশি নিরাপদ মনে করছেন। আর যাঁদের নাম ছাপা হয়েছে তাঁরা তো প্রতিবেদন জমা হওয়ার আগে থেকেই নিষ্ক্রিয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তদন্ত কমিটির প্রধান ইব্রাহিম খালেদ বিভিন্ন সময় বলেছেন যে প্রতিবেদনে যাঁদের নাম এসেছে তাঁরা সবাই দোষী নন। তাই বাজারের স্বার্থে সরকারের উচিত এ বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে নিশ্চিত করা যে, কারা দোষী, কারা দোষ করেনি। হয়তো দোষ না করেও কেবল প্রতিবেদনে নাম থাকার কারণে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগে অংশ নিচ্ছেন না। যদি বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়, তাহলে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনেকে আবার লেনদেনে অংশ নেবে। এতে বাজারে একধরনের গতি সঞ্চার হবে। কাজটি যত শিগগির করা যাবে ততই বাজারের জন্য মঙ্গল। তবে যারা দোষী, তাদের শাস্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ সাধারণ বিনিয়োগকারীর অর্থ ও ভাগ্য নিয়ে কারসাজি করতে না পারে।

(৫০৮) কিছু বড় সুবিধাভোগীর ক্লাব

খলিলী  বলেন, শেয়ারবাজার আসলে কোনো নিয়মকানুনেই চলেনি। বরং বাজার হয়ে পড়েছে কিছু বড় সুবিধাভোগীর ক্লাব। কিন্তু ২০ লাখের বেশি ছোট-বড় বিনিয়োগকারী যখন এই বাজারে যুক্ত হয়ে পড়ে, তখন স্টক এক্সচেঞ্জ কোনোভাবেই মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী কিছু লোকের হাতে কুক্ষিগত থাকতে পারে না। সে জন্যই দরকার অর্থবহ ডিমিউচুয়ালাইজেশন। অর্থাৎ স্টক এক্সচেঞ্জের কারবার কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আলাদা করা।
বাকী খলিলী নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারের প্রস্তাব করেন। উপদেষ্টা কমিটির বদলে একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে কমিশন বিশেষত, চেয়ারম্যানকে পর্ষদের কাছে জবাবদিহি করার বিধান চালুর সুপারিশ করেন।
খলিলী বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে এই বলে সতর্কতা দেন, ঋণের অর্থের ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য তিনি ঋণসীমা আরোপেরও প্রস্তাব দেন।
নির্ধারিত আলোচক মুজিবুদ্দিন বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেদের অবস্থান নিজেরাই ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সঙ্গে এসইসির এত দহরম-মহরম কেন?
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, প্রতিটি কোম্পানির বার্ষিক আর্থিক হিসাব বিবরণী ও উদ্বৃত্তপত্র যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের অধিদপ্তরে (আরজেএসসি) দাখিল করার কথা। প্রতিষ্ঠানগুলো তা যথাযথভাবে পরিপালন করছে কি না, এসইসি যদি তা দেখে না থাকে, তাহলে তারা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছে।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, একইভাবে বিনিয়োগকারীদেরও প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের তথ্য-উপাত্ত দেখে সাবধানে বিনিয়োগ করা উচিত।
আইনমন্ত্রী আলোচনায় উঠে আসা বিভিন্ন সুপারিশ যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে বিদ্যমান আইনকানুন সংশোধন করা হবে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে হলে সুন্দর ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, শিল্পঋণ ও এসএমই ঋণের নামে নেওয়া টাকা শেয়ারবাজার গেছে। গেছে মূলত সেকেন্ডারি মার্কেটে, যেখানে চাহিদার স্ফীতি ঘটেছে কিন্তু সেভাবে পুঁজি তৈরি হয়নি।
ফরাসউদ্দিন বলেন, ব্যাংকের ঋণ আমানতের অনুপাতসীমা অনেক ক্ষেত্রেই রক্ষিত হয়নি। শেয়ারবাজারে টাকা খাটিয়ে ব্যাংকগুলো উচ্চ মুনাফা করেছে। এই সুযোগে অনেক ঋণখেলাপি তাদের হিসাব পরিষ্কার করে নিয়েছে।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন। এটি করাকে সরকার ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে কি না, এমন প্রশ্নও তোলেন।

(৫০৭) এটা চাল-চিনির বাজার না

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সভাপতিত্বে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এম এ বাকী খলিলী। নির্ধারিত আলোচক ছিলেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মুজিবউদ্দিন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে মোহাম্মদ হেলাল বলেন, সম্পদের বাজারে চাহিদা বাড়লে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জোগান বাড়ানো যায় না। এটা চাল-চিনির বাজার না যে, ১৫ দিন বা এক মাসের মধ্যে প্রচুর আমদানি করে বাজারে ছেড়ে দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
মোহাম্মদ হেলাল প্রশ্ন রাখেন, শেয়ারের জোগান বাড়ানোর জন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানি ২৫০টি থেকে রাতারাতি বাড়িয়ে ৫০০ করা কি সম্ভব? বাস্তবে এটি সম্ভব নয়। মোহাম্মদ হেলাল ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক জমি কেনায় ঋণ বিতরণে কঠোরতা আরোপ করায় ঋণযোগ্য অর্থ পুঁজিবাজারে ধাবিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে ও মুনাফার ওপর উৎসে কর কর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে করে অর্থ শেয়ারবাজারের দিকেই গেছে।
মোহাম্মদ হেলাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থপ্রবাহের বাঁধ খুলে দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় তা সঠিক দিকে ধাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে করে ‘ফসলের ভালো ফলন হওয়ার বদলে বন্যা’ দেখা দিয়েছে।
হেলালের মতে, সবাই যখন শেয়ারবাজারের দিকে ছুটে যায়, তখন এই বাজারের ধস অনিবার্য হয়ে পড়ে। আর সবাইকে ছুটে যেতে এভাবেই তাড়না তৈরি করা হয়, যা আর্থিকবাজারে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।
এম এ বাকী খলিলী বলেন, দেশে প্রকৃত আমানতের সুদের হার অনেক নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে, বেড়ে গেছে মূল্যস্ফীতি। এতে অনিবার্যভাবে ব্যাংকে আমানত রাখার আগ্রহ কমেছে। ফলে মানুষ ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজারে ছুটে গেছে।

(৫০৬) মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ই উসকে দিয়েছিল

দেশের পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক স্ফীতি পরবর্তী সময়ে এর ধসকে অনিবার্য করে তুলেছিল। কিন্তু এই স্ফীতি ঘটেছিল বাজারে ভারসাম্যহীনতার কারণে। মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ই উসকে দিয়েছিল এই ভারসাম্যহীনতা।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় চলমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক ফোরামের শেয়ারবাজারবিষয়ক কার্য-অধিবেশনে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এই ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির বিষয়টি তুলে ধরেন।
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে নীতিনির্ধারকেরা, বিশেষত, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার ও সম্পদের বাজারের ক্ষেত্রে চাহিদা-জোগানের প্রভাবটি সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। তারা দুই বাজারকে একইভাবে দেখতে গেছে।

(৫০৫) অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলে

পুঁজিবাজারের উত্থান-পতন ও তারল্য-সংকট: গত বছরের জুন মাসে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৬০০০ পয়েন্ট ছাড়ায়। পরে সূচক ক্রমশ বাড়তে থাকার পর ডিসেম্বরে গিয়ে ঠেকে প্রায় ৯০০০-এ। তার পরই পতন হয় বাজারে।
এই সময়েই ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে থাকে। নভেম্বর থেকে তা আরও দ্রুত হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে তা তীব্র হয়। ব্যাংকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আরও কয়েকটি কারণের সঙ্গে এ সময় শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা তুলে অথবা শেয়ার বিক্রি করে মানুষ টাকা নিজের হাতে রাখতেই বেশি স্বস্তিকর মনে করেছেন। হয়তো ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার ঘাটতি দেখা দেওয়ায় মানুষের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েও থাকতে পারে। আবার শেয়ারে বড় মুনাফা যাঁরা তুলেছেন, তাঁরা হয়তো নানা কারণে ব্যাংক-ব্যবস্থায় টাকা রাখতে চাননি, অর্থ গোপন করেছেন।
মূল্যস্ফীতির চাপ: গত জুলাই মাস থেকেই দেশে মূল্যস্ফীতির গতি ঊর্ধ্বমুখী। এ সময় সাড়ে ৭ শতাংশের কাছাকাছি ছিল সাধারণ ভোক্তা মূল্যসূচক। জানুয়ারিতে ৯ শতাংশের ওপরে উঠে যায়।
দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষকে বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। ফলে তাদের হাতে আগের বছরের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ বেশি অর্থ রাখতে হয়েছে। কিন্তু এই অর্থের একটা অংশও ব্যাংকে ঢুকেছে।
অন্যদিকে গত ২০০৯-১০ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। এমনকি ফেব্রুয়ারিতে তা ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু সে সময়ও মানুষের হাতে টাকা এতটা বাড়েনি।
আমদানি বাড়ার প্রভাব: ব্যাংকে নগদ অর্থসংকটের আরেকটি বড় কারণ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি। এর হার প্রায় ৪৩ শতাংশ। আমদানি ব্যয় বাড়ায় প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক মাস ধরে বাজারে ডলার বিক্রি করে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ সময়ে তারা প্রায় ৯০ কোটি ডলার বাজারে দিয়েছে। এর বিপরীতে (প্রতি ডলার ৭১ টাকা ধরে) প্রায় ছয় হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে ঢুকেছে। এ টাকা আর মুদ্রাবাজারে আসছে না, যতক্ষণ না বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ এক বছর আগেও উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি: তারল্য-পরিস্থিতির অবশ্য এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে সামগ্রিক ব্যাংক-ব্যবস্থায় ২৪ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকে তফসিলি ব্যাংকগুলোর সংরক্ষিত উদ্বৃত্ত আমানত ১৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকাই প্রকৃত অর্থে অলস অর্থ। অন্যদিকে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারেও কয়েক দিন ধরে তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকা (কলমানি) লেনদেন হচ্ছে।

(৫০৪) টাকার পরিমাণ বিশ্লেষণেও একই রকম তথ্য

 গত বছরের শেষ ভাগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে। এ বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে তা তীব্র হয়। আবার বেশির ভাগ ব্যাংকই আগে থেকে ঋণযোগ্য সব অর্থ বিনিয়োগ করায় সংকট আরও গভীর হয়েছিল। নিয়ম হচ্ছে, কোনো ব্যাংক তাদের সংগৃহীত আমানতের নিরাপত্তা হিসাবে বিধিবদ্ধ জমা ১৯ শতাংশ সংরক্ষণ করে বাকি ৮১ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ ঋণ দিতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাস শেষে ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত দাঁড়ায় ১০৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। ফলে দেখা দেয় নগদ অর্থের সংকট। যদিও অতীতে ব্যতিক্রম ছাড়া ব্যাংক খাতে ঋণ-আমানত অনুপাত ১০০ শতাংশই ছিল। কিন্তু এত নগদ অর্থের ঘাটতি হয়নি কখনো।
ব্যাংকের বাইরে বিপুল টাকা: মুদ্রা সরবরাহের সঙ্গেও মানুষের হাতে টাকা বাড়ার গতি মিলছে না। অর্থ সরবরাহ যতটা বেড়েছে, মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। গত জুন থেকে অক্টোবর সময়ে মানুষের হাতে টাকা থাকার পরিমাণ বৃদ্ধির গতি ছিল বেশি। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি সময়ে তা আরও তীব্র হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে ২০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে বৃদ্ধির হার ছিল ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে ফেব্রুয়ারিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মানুষের হাতে অতিরিক্ত টাকা থেকেছে ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও আগের বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। গত দুই বছরের জানুয়ারি মাসের মুদ্রা সরবরাহ ও মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ বিশ্লেষণেও একই রকম তথ্য মেলে।

(৫০৩) পুঁজিবাজার এবং কার্ব মার্কেট

পুঁজিবাজারের উত্থান-পতনে দিলকুশা এলাকার রাস্তায় বৈদেশিক মুদ্রার কার্ব মার্কেটে মার্কিন ডলারের বেশ চাহিদা ও বড় মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছিল। কয়েকজন কার্ব ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে জানান, তাঁদের কাছ থেকে দিনশেষে কোনো একটি মহল সব ডলারই কিনে নিয়ে যেতেন। ওই সময় খোলাবাজারে কেবল ডলার বিক্রি করাই যাচ্ছিল, কেনা সহজ ছিল না।

(৫০২) অর্থের একটা অংশ ব্যাংকে আসেনি

গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত হিসাবে ব্যাংকের বাইরে অর্থাৎ মানুষের কাছে নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এক মাস আগে অর্থাৎ ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। আর এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে মানুষের কাছে নগদ অর্থ ছিল ৪১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা এবং জানুয়ারিতে ৪১ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত মার্চের ‘মান্থলি ইকোনমিক ট্রেন্ডস’ এবং ‘মনিটরি সার্ভে’ ও সমীক্ষা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিসংশ্লিষ্ট ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘ধারাবাহিকতা ও বৃদ্ধির হার বিশ্লেষণ করলে আগের তুলনায় ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে গত কয়েক মাসে হঠাৎ করে যে টাকা বেশি থেকেছে, এটা বোঝা যায়।’
মুদ্রাবাজার বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন পরামর্শক আল্লাহ মালিক কাজেমী আরও কয়েকটি কারণের কথা জানান। সাবেক এই ডেপুটি গভর্নর বলেন, একই সময়ে দেশের কার্ব মার্কেটে ডলারের দর বৃদ্ধি হতে দেখা গেছে। এসব ব্যবসার বৈধতা নেই বলে এই অর্থের একটা অংশ ব্যাংকে আসেনি ধরে নেওয়া যায়। আবার সীমান্ত এলাকায়ও দুই দেশেই একইভাবে কিছু টাকা সংরক্ষিত হয়ে থাকতে পারে। তবে এ ধরনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করা দুরূহ বিষয় বলেও জানান তিনি।

(৫০১) হাতে নগদ আছে ৫২ হাজার কোটি টাকা।

মানুষের হাতে এখন অনেক বেশি নগদ অর্থ। হঠাৎ করেই মানুষ ব্যাংকে না রেখে নিজের কাছে টাকা রাখার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
শেয়ারবাজারের উত্থানের সময় অনেক বেশি টাকা মানুষের হাতে চলে এসেছিল। তার একটি বড় অংশ ব্যাংকে ফেরত যায়নি। আবার এমনও হতে পারে, শেয়ারবাজার থেকে যাঁরা অতিরিক্ত মুনাফা করেছিলেন, তাঁরা অর্থ নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন।
আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চাইলেও অনেকে ব্যাংকে অর্থ রেখে দিতে পারছেন না। খেয়ে-পরে বাঁচতে আগের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। খোলাবাজারে উচ্চ মূল্যে ডলারের কেনাবেচাকেও এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে। মোট কথা, অনেক মানুষই এখন টাকা ব্যাংকে রাখতে চাইছেন না। নানা ধরনের অনিশ্চয়তা বা অস্বস্তি কিংবা অস্বাচ্ছন্দ্যই এর কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে এখন মানুষের হাতে নগদ আছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। আর এক বছর আগেও ছিল ৪১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মানুষের কাছে বাড়তি ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি চলে এসেছে।
এক বছর আগেও উদ্যোক্তাদের ডেকে ডেকে ঋণ দিতে চেষ্টা করেছিল ব্যাংক। আর এখন উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, ব্যাংকে অর্থ নেই, ডলারের তীব্র সংকট। মূলত, বিগত অক্টোবর-নভেম্বর সময় থেকেই দেশের ব্যাংক খাতে নগদ অর্থের ব্যাপক টানাটানি দেখা দেয়। আর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে তা তীব্রতা পায়। প্রশ্ন তোলা হয়, ব্যাংকের এত টাকা কোথায় গেল। দেখা যাচ্ছে, আগের চেয়ে এখন অনেক টাকা মানুষের পকেটেই রয়েছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ বিষয়ে বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকে আমানত রাখা ও বন্ডে বিনিয়োগের ওপর প্রকৃত আয় কমে গেছে। এর সঙ্গে বিনিময় হারের নিম্নগতিও চাপ সৃষ্টি করেছে। তাই মানুষ ব্যাংকের চেয়ে অন্য খাতে অর্থ খাটাতে আগ্রহী হয়েছে। এ কারণে ঘূর্ণমান অর্থের গতি কমে হাতে হাতে তা থেকেছে।
দেশের অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এতে মুদ্রানীতির কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। একই সঙ্গে তারল্য-ব্যবস্থাপনাও জটিল হয়ে যায়।’