(২৯৯) শেষ মুহূর্তের কাজ

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশে ফেরার পর পুঁজিবাজারে কারসাজি তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বর্তমানে প্রতিবেদন তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে
কমিটির চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে কথা জানিয়েছেন তিনি বলেন, ‘আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে তদন্তকাজ সম্পন্ন হবে তবে অর্থমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাচ্ছে না আগামী এপ্রিল অর্থমন্ত্রী দেশে ফেরার কথা রয়েছে ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে তিনি দেশে ফিরলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’
তদন্ত প্রতিবেদনে কী কী বিষয় উঠে এসেছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাপারে এখন বলা যাবে না প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর অর্থমন্ত্রী হয়তো ব্যাপারে কথা বলবেন অন্যথায় প্রতিবেদন পেশ করার পর ব্যাপারে কথা বলা যাবে
তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান আরও বলেন, তদন্তের ব্যাপারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে যতটা আশা করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি সহযোগিতা পাওয়া গেছে ছাড়া সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) পক্ষ থেকেও সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান তিনি
তদন্তকাজে কমিটির সদস্যদের সহযোগিতার ব্যাপারে খোন্দকার ইব্রাহিম বলেন, তাঁরা খুবই আন্তরিক ছিলেন সবাই যথাযথভাবে সহযোগিতা করেছেন ছাড়া প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তাতে কমিটির কারও মতবিরোধ নেই বলে জানান তিনি
তদন্ত প্রতিবেদন প্রায় ২০০ পৃষ্ঠার হবে বলেও জানান ইব্রাহিম খালেদ
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক ভয়াবহ ধসের কারণ অনুসন্ধানে গত ২৬ জানুয়ারি কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে চেয়ারম্যান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে দুই মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয় ওই সময়সীমা অনুযায়ী ২৭ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও পরে ৩১ মার্চের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল

(২৯৮) কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ

শেয়ারবাজারে আবার কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য গঠিতবাংলাদেশ ফান্ড’- বিনিয়োগ করলে টাকার উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হবে না সরকারকে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে
রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টিসহ বাজারের স্বার্থে আরও কিছু প্রণোদনা চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ইতিমধ্যে একটি সারসংক্ষেপ দাঁড় করিয়েছে বলে জানা গেছে তবে বিষয়টি এখনো অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায়
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রণোদনাগুলোর সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) আইসিবি জড়িত তাই এদের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসবে অর্থ মন্ত্রণালয় ওই বৈঠকে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে গতকাল বুধবার পাঁচ দিনের সফরে ফ্রান্সে গেছেন অর্থমন্ত্রী তিনি দেশে ফেরার পরই বৈঠকটি ডাকা হবে

(২৯৭) ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে

সর্বশেষ গত ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হলে তা কোনো প্রশ্ন ছাড়াই গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয় অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ায় শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করে তা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়
অন্যান্য প্রণোদনা: বাংলাদেশ ফান্ডকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি থেকে কিছুটা ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এতে যেহেতু ফান্ডের একটা অংশ মুদ্রাবাজারে বিনিয়োগ করা হবে, তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর আরোপিত নিয়মকানুন ফান্ডের ক্ষেত্রে শিথিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে
ছাড়া বাংলাদেশ ফান্ডের ইউনিট সার্টিফিকেটকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন অনুমোদিত সিকিউরিটিজ হিসেবে বিবেচনা করে, সে কথাও বলা হয়েছে এতে ফান্ডটি খুবই আকর্ষণীয় হবে বলে মনে করছে আইসিবি
উল্লেখ্য, মার্চ পাঁচ হাজার কোটি টাকারওপেন এন্ড’ বা মেয়াদহীন মিউচুয়াল ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার বলা হয়, আইসিবি, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংক (সোনালী, রূপালী, অগ্রণী জনতা), জীবন বীমা করপোরেশন, সাধারণ বীমা করপোরেশন এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) যৌথ উদ্যোগে ফান্ডটি গঠিত হবে ইতিমধ্যে সাত প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই তাদের পর্ষদে ফান্ডে বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর এসইসির কাছেও অনুমোদন চেয়ে তহবিল গঠনের প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে
জানা গেছে, মূল উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আইসিবি জোগান দেবে ফান্ডের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৫০০ কোটি টাকা তবে মেয়াদহীন হওয়ায় ভবিষ্যতে আকার বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বেসরকারি ব্যাংক অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে তহবিলে অংশ নিতে পারবে

(২৯৬) বাংলাদেশ ফান্ড নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ফান্ড নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়  বলেছে, ‘বাজারে আসার জন্য অপেক্ষমাণ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ১০ শতাংশ অভিহিত মূল্যে (ফেস ভ্যালু) বাংলাদেশ ফান্ডকে দেওয়া হবে ছাড়া ভবিষ্যতে যেসব কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ছাড়বে, সেসব কোম্পানিকে যে পরিমাণ মূলধন বাজার থেকে সংগ্রহ করা হবে, তার শতাংশ শেয়ার বাংলাদেশ ফান্ডের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে ফান্ডের লভ্যাংশ থাকবে সম্পূর্ণ করমুক্ত এতে সরকারের কোনো সংশ্লেষ থাকবে না সরকার শুধু নীতিগত সমর্থন দেবে।’
যোগাযোগ করা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া নীতিগতভাবে সমর্থনযোগ্য নয় আর প্রস্তাবিত বাংলাদেশ ফান্ডের ইউনিট কেনায় যদি অধিক মাত্রায় অপ্রদর্শিত আয় ধাবিত হয়, চূড়ান্ত অর্থে তা ঠিক হবে কি না, ভাবার বিষয়।’ তবে বাংলাদেশ ফান্ডের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা নতুন আইপিওর প্রস্তাবিত অংশ বরাদ্দ রাখা যেতে পারে বলে মির্জ্জা আজিজুল মনে করেন